ছোটবেলা থেকেই আমি ছিলাম শারীরীকভাবে দূর্বল। একদম ছোটবেলোয়, মাত্র দুই বছর বয়সে আমার ক্যন্সার ধরা পড়েছিল। যাই হোক সেদিকে কথা বাড়ালে বাড়তেই থাকবে, আসল কথাই আসি। যেহেতু আমি অসুস্থ ছিলাম, আমার পড়ালেখার ব্যপারটা ছিল ঐচ্ছিক। যার বাঁচা মরার ঠিক নেই তার উপর কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষই এ ব্যপারে চাপাচাপি করবে না এটাই স্বাভাবিক। আমার মনে আছে, একবার আমি বললাম- আব্বু আমি স্কুলে যাবো। আব্বু স্কুলের শিক্ষক হওয়াই নাম ডাকার খাতায় নাম তোলাটা ছিল সময়ের ব্যপার। আব্বু নাম তুলে দিলেন। কিন্তু আমার ইচ্ছে হলে আমি স্কুলে যাই না হলে যাই না। অংক করতে ভালো লাগতো বলে শুধুমাত্র অংক পরীক্ষা ছাড়া আর কোনো পরীক্ষায় দিইনি সেবার। আর পরীক্ষার খাতা জমা দেয়ার পরপরই অংক স্যার দেখে দিয়েছিলেন। ৭৫ এ পেয়েছিলাম ৭৪। অন্য কোনো সাবজেক্টে রুচি হয়নি পরীক্ষা দিতে। আমার স্কুলে পড়াটা রিয়েলিস্টিক করতে নাম ডাকা খাতায় সবার শেষে আমার নামটাও লেখা হয়েছিল। সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে একটা মৃত্যূ পথযাত্রী শিশুর জন্য ভালবাসার কমতি ছিল না করো কাছেই। আম্মার কাছে শুনেছি আমাকে যে ডাক্তার চিকিৎসা করতেন তিনি তার টেবিলে বসিয়ে আমার কবিতা শুনতেন আর চোখ মুছতেন। তার চেহারা আমার মনে নেই। তিনি আমাকে মনে রেখেছেন কিনা তাও বলতে পারবো না। তবে এই সব স্মৃতি আমাকে চিরদিনই অনুপ্রেরণা যোগায়। স্কুলে পড়েছিলাম ৩য় আর চতুর্থ শ্রেণী। কারণ ততদিনে ডাক্তারদের বেঁধে দেয়া সীমারেখা ছাড়িয়ে আমার বয়স আরো কয়েকধাপ এগিয়ে গেছে এবং পরীক্ষায় দেখা গেছে আমার ক্যন্সার নেই। তারপরও আরেকটা কঠিন রোগ আমার শরীরে বাসা বেধে আছে জন্ম থেকেই আর তা হচ্ছে থ্যালাসমিয়া। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার সাথে সাথে সেও থাকবে এ ব্যপারে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিশ্চিত তবে তা গুরুতর বলে আমি মনে করি না। একসময় মনে হতো আমি হয়তো বেশিদিন বাঁচবো না এবং এ ব্যপারটা আমার মানষিকভাবে দূর্বল করে দিতো। কিন্তু যেদিন থেকে বিশ্বাস করতে শিখেছি যে, জন্ম মৃত্যু একমাত্র আল্লার হাতে সেদিন থেকে এ ব্যপারটা আর কখনোই আমাকে দূর্বল করতে পারেনি। এমন কি আমি অনেক ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়েও বেশি আশাবাদি, একটু বেশিই স্বপ্ন দেখি। দোষ কি তাতে? একমাত্র তাদের পক্ষেই হতাশ হওয়া সম্ভব যারা অবিশ্বাসী কারণ তাদের সবকিছুই দুনিয়া কেন্দ্রীক। তাদের পাওয়ার চিন্তা দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ আর এখানেই তারা যদি না পায় তাহলেতো সেটা হতাশারই ব্যপার বটে। মনে করেন আপনি অনেক চেষ্টা করে টিকিট কেটেছেন, কিন্তু টিকিট হাতে পেয়ে জানতে পারলেন যে অনুষ্ঠান ততক্ষণে শেষ তাহলে তো আপনি হতাশ হবেনই, মনে মনে কষ্টও পাবেন। কিন্তু আপনি যদি জানেন যে আপনার অনুষ্ঠানটার চাইতেও আরো বেশি আকর্ষনীয় অনুষ্ঠান ঐ টিকিটেই উপভোগ করা যাবে তখন কি আর আপনার কোনো দুঃখ থাকবে? অর্থাৎ যেদিন থেকে আমি ভাবতে শিখেছি যে এখানেই শেষ নয়, আমার জন্য অপেক্ষা করছে অনন্ত জীবন তখন এ ব্যপারে আর কোনো অভিযোগের প্রশ্নই ওঠে না। বরং পরীক্ষার সময় যতো তাড়াতাড়ি শেষ হয় ততোই আমি খুশি।
প্রিয় পাঠক, আজকে লেখতে চেয়েছিলাম অন্য আরেকটা ব্যপারে কিন্তু কথার মোড় এদিকে ঘুরে যাবে ভাবতে পারি নি। ঘুরে যখন গেছেই ফেরাবো না। ওটা আগামী কোনো একসময় বলবো ইন-শা-আল্লাহ; যদি বেঁচে থাকি।
মন্তব্য করুন