গতবার যখন এসেছিলাম তখনও পায়রাদুটো ছিলো। তবে বাসা ছিলো না। কার্নিশের এক পাশে দেয়ালে অর্ধেকটা ইট না থাকায় সেখানে বাসা বেঁধেছিলো পায়রাদুটো। বেশিরভাগ সময় কার্নিশে ঘুরাঘুরি করতো, ডাকতো আর খুনশুটিতে মেতে থাকতো। কিন্তু যখন ডিম পাড়লো তখন সবসময় একটাকে দেখতাম ডিমে তা দিতে আর একটা বেরিয়ে পড়তো। আর এবার বাড়িতে এসে দেখলাম দুটো বাচ্চা হয়েছে এবং বাচ্চা দুটো কিছুদিনের ভেতরেই ওড়া শিখে যাবে। কার্নিশের উপর এবার একটা নতুন ঘরও চোখে পড়লো, দুটো ডিম নিয়ে তাতে বসে আছে সেই পুরোনো কবুতর।
দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ যাচ্ছে আজকাল। গুলশানে কুটনৈতিক পাড়ায় নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে বিদেশি নাগরিকদের। জঙ্গীরা নিহত হয়েছে সবাই। উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ে ওরা, দেশের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র; এলিট সোসাইটিতে বসবাস ওদের। হঠাৎ করে ওরা এমন নরপশুতে পরিণত হলো কি করে তা ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছেন না বুদ্ধিজীবী মহল। তাদের একটাই কথা, এদের বেশির ভাগই ইংলিশ মিডিমায়ামে লেখাপড়া করেছে। ধর্মের নাম-গন্ধও যে শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে নেই সেই শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা এসকল ধনির দুলালেরা কিসের নেশায় এরকম আত্মঘাতি হয়ে উঠেছে। অথচ কিছুদিন আগেও এদের মধ্যে অনেকেই বন্ধুদের সাথে পার্টিতে গেছে, দেশবরেন্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সাথে মিশেছে, কেউ কেউ গিটার বাজিয়ে পার্টি মাতিয়েছে। হঠাৎ তারা কিসের নেশায় আকুল হলো!!? প্রশ্নটা প্রশ্নই থেকে গেছে, ধুয়া উঠেছে চায়ের টেবিলে, মিডিয়াতে জমেছে টকশো। সে যায় হোক, আমাদের ছোট মাথায় এতো বড় ব্যপার ঢোকে না । আমরা শুধু এটুকুই বুঝি- কোনো যন্ত্রের কার্যবীধি সমর্কে যারা জানে আর যারা জানে না তাদের মধ্যে পার্থক্য হলো যারা জানে তারা ভুল করে কম আর যারা জানে না তারা হর-হামেশাই ভুল করে বসে।
ও হ্যা, কথা হচ্ছিলো আমার পাশের বাসার কার্নিশের কবুতর নিয়ে। এই একটা সমস্যা আজকাল যাই নিযেই কথা বলতে যাই না কোনো ঐ এক ভুত সবজায়গা দখল করে আছে। দেশ যে কবে এর থেকে মুক্তি পাবে জানি না। আর পাবেই বা কি করে? আমার একটা বন্ধুর গল্প করি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ছেলেটা, দাড়ি রেখেছে তা প্রায় দু’বছর হতে চললো। আর কোথাও দেখা হোক বা না হোক মসজিদে গেলে তাকে পাওয়া যাবে এমনটাই জানতাম। হঠাৎ তার সাথে দেখা, মুখে দাড়ি নেই- মাথায় টুপি নেই; আমিতো অবাক। বললাম- বন্ধু কারণ কি?? বন্ধু আমার উত্তরে বললো বাবা-মা থেকে শুরু করে সমাজের মুরুব্বিদের একটাই কথা- বাবা দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। এখন ওসব না রাখলে হয়না? সবার কথা শুনতে গিয়ে শেষমেশ ওর আসল রূপটাই হারিয়েছে বেচারা।
আবারোও সেই একই কান্ড, যা বলতে যাচ্ছি তা বলা হচ্ছে না। কবুতরের গল্প করছিলাম আমি। কার্নিশে আজ আর কবুতর নেই। সকালে দেখলাম খালি। বাচ্চাগুলো ওড়া শিখে গেছে হয়তো কিন্তু তাদের বাসা পরিবর্তনের কারণ নিশ্চয় অন্য কিছু, ডিম নিয়ে বসে থাকা কবুতরটাও নেই হয়তো ডিমদুটো কাকে খেয়েছে; আর সেই শোকে কবুতর গুলো ঘর ছেড়েছে। কার্নিশে পড়ে আছে শূন্য বাসাটা।