ভয় কোথায় গেল হে, বলতে বলতে লোকটা দৌড়াচ্ছিল ঊর্ধ্বশ্বাসে। আমি ছুটে গিয়ে বললাম, ভাই, কী খুঁজছেন এইভাবে? সে থমকে দাঁড়িয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বললো, ভয়! ভয়কে এ ফেরাউনের শহরে আমি পাচ্ছি না কোথাও খুঁজে।
হায়, এ শহরে ভয় ছাড়া কিছুই তো পড়ে না আমার চোখে- আমি বললাম, যেদিকে তাকাই, শুধু ভয়; বন্দুকের ভয়, কিরিচের ভয়, গলা কাটার ভয়, গ্রেফতারের ভয়, বিমান হামলার ভয়, দুর্ভিক্ষের ভয়, ছিনতাইয়ের ভয়, গুম হয়ে যাওয়ার ভয়- এতসব ভয়ের ভেতর হাবুডুবু খেয়েও আপনি ভয়কে খোঁজেন রাস্তায় রাস্তায় এইভাবে?
সে বললো, হ্যা, আমি সেই ভয়কে খুঁজছি, যা হারিয়ে এ শহর হয়ে গেছে জীবন্ত নরক, যা হারিয়ে হায়েনার হাত দিয়ে ছিঁড়েখুঁড়ে খাচ্ছে মানুষ মানুষেরই হাড়মাংস, স্বপ্ন ও আহ্লাদ। আমি সেই ভয়কে খুঁজছি, যে ভয় থাকলে বুকে সাহসে শরীর অগ্নিগিরি হয়ে যেত, যে ভয় থাকলে বুকে সাহসে হৃদয় আটলান্টিক ওশান হয়ে অষ্টপ্রহর উল্লাসে ছলাৎ ছলাৎ করে উঠতো। আমি সেই ভয়কে খুঁজছি, যে ভয় থাকলে বুকে সীমারের ছুরি, ফাঁসির কাষ্ঠ, উত্তপ্ত তেলের কড়াই, দুঃখদুর্দশা, জেলজুলুম ও অত্যাচার অবিচার কিছুই হতো না মনে; যে ভয় থাকলে বুকে, ইউসুফের মতো ছুঁড়ে ফেলে দেয়া যেত জুলেখার উলঙ্গ যৌবন, যেন ঘরমোছা ছেঁড়া কোনো তেনা; যে ভয় থাকলে বুকে, আসহাবে কাহাফের কুকুরের মতো অবিশ্বাসীদের এ শহর ছেড়ে চলে যেতো বিশ্বাসীরা অনিবার্য মৃত্যুর গুহায়।
আমি হতবাক হয়ে বললাম, সে ভয় কিসের?
আমার কর্ণকুহরে মুখ রেখে সে বললো, আল্লাহর। অতঃপর দুপুরের ছায়ার মতো সে মুহূর্তে মিলিয়ে গেল সভ্যতার ঝলসানো রোদ্দুরে। আমি আমার পোকায় খাওয়া হৃদয়ের অন্ধকারে হাতড়াতে হাতড়াতে ভাবতে লাগলাম, হায়, সেই ভয় রয়েছে কোথায়?
১৭.৮.২০১২ মিলনমোড়, সিরাজগঞ্জ