সে প্রথম চুম্বনের পর কেঁপে উঠেছিল থরথর করে, যেন
ঝড়ে কাঁপা কোনো অশ্বত্থের কচি ডাল। অতঃপর
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো সে সুপ্রিয় তার প্রেমিক পুরুষের
দিকে, যেন কোনো অবাক হরিণী।
সে প্রথম মিলনের পর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠে
নিঃসাড় হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর মুগ্ধচোখে
তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছিল সুঠাম তার প্রেমিক পুরুষের
বুজে থাকা প্রশান্ত চোখের পাপড়িগুলো।
সে প্রথম প্রসবের পর পুনরুত্থানের মতো জেগে উঠেছিল
একটি সুন্দর স্বপ্নময় পৃথিবীতে। বিশ্বময়
একটি পবিত্র কান্না শুনে সে চমকে উঠেছিল। অতঃপর
দুধের নহর বয়ে যাওয়া তার স্তনযুগল নবজাতকের ঠোঁটে
তুলে দিয়ে সেদিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলো নির্নিমিখ,
যেন হিমালয়ের চূড়ায় পা দেওয়া পৃথিবীর প্রথম নারী সে।
নবজাতকের গোলাপের মতো বেড়ে ওঠা দেখে
বারবার চমকে চমকে উঠতো সে প্রতিদিন।
প্রতিদিন তার ছোট্ট কুটিরটির পাশ দিয়ে হাঁটতে বেরুনোর সময়
আমি দেখতাম সে কেমন অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে
হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে চলা তার
পুত্রধনটির দিকে। মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে খোদাতালা বুঝি
এমনই মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছিলেন তাঁর সৃষ্টির সৌন্দর্য!
বহুদিন পর একদিন, সকালে হাঁটতে বেরিয়ে, থমকে দাঁড়ালাম
জীর্ণশীর্ণ তার কুটিরটির পাশে এসে। দাওয়ায় বসে সে
কেমন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো ছুটে চলা রাস্তার দিকে।
আমি তার কাছে গিয়ে বললাম, কী ব্যাপার, প্রিয় সেই
পুত্রধনটি কোথায়?
সে কেমন পাথরের মতো ভারী কণ্ঠে বলে উঠলো অস্ফুট,
সে তার সুন্দরী বউ নিয়ে এখন ধর্মতলায় থাকে।
কতদিন হলো, এমুখো সে ফিরেও তাকায়নি একবারও।
২১.৮.২০১২ নাটোর