আগত, অনাগতকাল শান্তিময় হোক / আল মুজাহিদী

যখন আমার স্বপ্নগুলো পাখির পোড়ানো পালকের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে
আমি চিৎকার করে উঠি ‘হিরোশিমা’, ‘হিরোশিম ’ বলে।
সারারাত নিদ্রাহীন কেটে যায় দুঃস্বপ্নের ভেতর, মেঘের
জলবিদ্যুতের সাথে আছড়ে পড়ি।
হিরোশিমা, দোযখের লাল অগ্নিশিখা যখন দাউ দাউ করে জ্বলে
আমি ধ্বংসের কিনারে এসে উৎকণ্ঠায় ভেঙে পড়ি
আজ যেন আমার আর কোনো সূর্যোদয় নেই
সূর্যাস্ত কেবল ছায়া ফেলে।
জীবনের চিরল পাতায় তবু সামান্য ক’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে
কেবল তোমার জন্য হিরোশিমা।
ধ্বংসস্তূপগুলোকে একটু ভিজিয়ে দিয়ে যাক।
আর সেই আর্দ্র উষ্ণকণা থেকে চারিয়ে উঠুক বৃক্ষবীথি- শাখা প্রশাখায়
পাখির ডানার মতো আন্দোলিত হতে থাক স্বপ্নের মুকুর
হিরোশিমা ! ওরা
আমাকে ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়েছিলো শতাব্দীর শেষ সাক্ষী হিসেবে
হ্যাঁ, আজও সাক্ষ্য দেবো আমি সৃষ্টির স্বপক্ষে।
আমি কারিগর। কামারশালার হাপরের গনগনে আগুন
আমার বুকে।
আমাকে একবার ধ্বংস করে দিতে পারে যদি আমি জ্বলে উঠি বারবার
আমি আগামীকালের পর্যটক আমার যাত্রার শেষ নেই। কালের যাত্রার
ধ্বনি বেজে ওঠে
আমার পদযুগলে; এই নীল ক্যাকটাস ভস্মীভূত করে জ্বলন্ত পৌরুষ
এই যে দেখছো না? আমার সুন্দর বিভীষিকাহীন মানব সন্তান
হেঁটে যায় হািইওয়ে ধরে।
দেখো, একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ মৃত্তিকার অতল গহ্বর খুঁড়ে তুলে আনছে ফসিল
তোমাকে দাঁড় করিয়ে দেবে ঐ হাড়গোড়ের সামনে বিচারের কাঠগড়ায়।
তুমি ভীষণ শংকিত, শিহরিত
তুমি ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছো; তুমি খসে পড়ছো তোমার দেহ-কাঠামো থেকে
তোমার নিজস্ব বীভৎসতা দেখে। তুমি সেটা জানো
হেরোডোটাস সাব্যস্ত করবেন
সেই ইতিহাস। হিরোশিমা,
তুমি বেঁচে থেকো স্মৃতির অতলে- মানবজাতির
বিষাদে ও অঙ্গীকারে। তুমি বেঁচে থেকো।
তোমার আগত, অনাগতকাল, শান্তিময় হোক
মানব সভ্যতা।

৫/৮/৯৩

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: