চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুটা কেমন এক জায়গায় আটকে গেছে। মাথার উপর ফ্যানের তিনটা পাখা বো বো করে ঘুরছে। একই সাথে কথাগুলোও কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। অস্বস্তি বোধ করছে রুমা। পাশ ফিরে শুয়ে সামনের দেয়ালটার দিকে তাকিয়ে থাকলো । একটা টিকটিকি তরতর করে উঠে যাচ্ছে উপরের দিকে। কি আয়েশ করেই না খাড়া দেয়ালটায় হেটে বেড়াচ্ছে ওটা। পাশের জানালা দিয়ে যে সামান্য আলো দেয়ালে এসে পড়েছে তাতেই দেখা যাচ্ছে ওটাকে। কিন্তু এই সামান্য আলোয় ওর লক্ষ্যবস্তু সন্ধান করাটা সমিচিন নয় ভেবে চোখ সরিয়ে নিলো রুমা। গতকাল ক্যাম্পাসে গিয়েছিলো যখন তখন মাথা পরিষ্কার। পড়ালেখার চিন্তা ছাড়া আর কোনো চিন্তাই ছিলো না। কিন্তু শাফি এমন একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেবে হঠাৎ করেই এটা ওর কল্পনায় আসেনি। শাফি ওর ক্লাসমেট, যদিও বয়সে ওর থেকে একটু বড়ই হবে। কি একটা কারণে শিক্ষাজীবনের কয়েকটা বছর নষ্ট হয়েছে ছেলেটার। পরিষ্কারভাবে জানা না থাকলেও বন্ধুদের কাছে শুনেছে শাফি যখন কলেজে পড়ে তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার হয়ে ছ’মাস কারাগারে থাকতে হয়েছে ওকে। যা ই হোক ছেলেটা ভালো এবং বুদ্ধিদীপ্ত। খুব মিশুক না হলেও বন্ধু মহলে যথেষ্ট খোলামেলা।
রুমা সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্রী। চতুর্থ বর্ষ। আর কয়েক মাস পরেই পরীক্ষা। এর মধ্যেই অনেক প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু পড়ালেখার কথা বলে এড়িয়ে গেছে এতোদিন। কিন্তু এবার তো ভাবতেই হচ্ছে। আর এই ভাবনার জগতে হঠাৎ করেই শাফির উত্থান। কি উত্তর দেবে ওকে। ছেলেটা সোজা সাপ্টা প্রশ্নটা করলেই পারতো, এতো ঘুরিয়ে বলার দরকার টা কি। বিরক্ত হয় রুমা। কিন্তু ছেলেটার এই বাঁকা প্রশ্নটাই যে সারারাত ওকে জাগিয়ে রেখেছে! এত সিরিয়াসলি ভাবনার খোরাক জোগান দেওয়াটাও কিন্তু সহজ ব্যপার না।
দেয়ালে জানালা গলে আসা আলোটা স্থান পরিবর্তন করেছে। এখন আলোটার বুকে মরা গাছটার ডালপালা একটা লম্বাটে চিত্রকর্মের রূপ দিয়েছে। একটু একটু নড়ছে ছবিটা। ভাবনার জগতে ছেদ পড়ে রুমার। টিকটিকিটা কোথা থেকে যেনো আওয়াজ দিচ্ছে। রাত কতো হলো? একটু পরেই কি আজান দেবে? তাহলে ঘুম? সকালে উঠে ক্লাস আছে। না, সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। ঘুমের কোনো রেশই নেই চোখে। অথচ পাশের বেডে বান্ধবী কেমন আরামে ঘুমাচ্ছে। কাক ডাকছে বাইরে, কিছুক্ষণের মধ্যেই সকাল হয়ে যাবে। চোখ বন্ধ করলো রুমা। যে করেই হোক একটু ঘুমাতে হবে। তা না হলে ক্লাসে যেয়ে ঘুমানোর বিকল্প থাকবে না।
‘কেন্দ্র হবে নাকি পরিধি?’ শাফি দাঁড়িয়ে আছে সামনে। রুমা জানে কি বলবে ও।
বান্ধবীর চেচামেচিতে ঘুম ভাঙলো রুমার। -কিরে? চেচাচ্ছিস ক্যান…? ঘুম জড়ানো কণ্ঠ রুমার। ‘কতো বাজে দেখেছিস, আজ আর তোর ক্লাসে যাওয়া লাগবে না, আমি গেলাম।’ ‘একটু দাঁড়া, আমিও যাবো…