মায়ের দু’চোখে শুধু তৃষ্ণা আর সারা মুখে তার
কি গভীর ব্যাকুলতা বুঝিনি ! আমার
শিশু চোখ নিষ্পাপ মূঢ়তা;
কেবল অনন্যমনে শুদ্ধতার সমুদ্র-সাঁতার।
মাকে চিনি,
খেলার পুতুল, লাল ফুল, সাদা দেয়ালের
সব ছবি চিনি;
তবু জানি না কোথায়
নামের মাধুরী আছে লুকিয়ে; মাকেও
মা বলে ডাকার সেই কথা আর সুরের সুন্দর
মিশ্রিত মহিমা আছে কোথায় লুকিয়ে
জানি না।
একদা মায়ের মুখের সেই তৃষ্ণার আধার
অতঃপর আলো হয়ে আমার আধারে
রেখেছে চুম্বন; আমি মা বলে ডেকেছি মাকে।
আমি তোমাকে পেয়েছি আর মাকেও পেয়েছি।
যৌবনের সব তৃষ্ণা একটি মুখে যখন খুঁজেছে
পৃথিবীকে, ক্লান্ত দিনে আশ্রয় চেয়েছে;
ফুল পাখি আকাশের চাঁদ
দু’হাতে যখন তার তুলে দিতে চেয়েছি, তখন
তুমি ছিলে সঙ্গী, তাই সহজেই তাকে
পেয়েছি, কেননা তারো আগে তোমার বুকের
হীরে নিয়ে তারই জন্যে মালা গেঁথে রেখেছি।
তোমাকে
পেয়েছি, পেয়েছি তাই সে অনিন্দ্যপ্রাণের সঙ্গীকে।
মায়ের বুকের মত বুক পেতে রাখা এই
দেশকে আমি ভালোবাসি সে কথা সে সোনার দেশের
আকাশে অরণ্যে আর সমুদ্রের ঢেউয়ে লেখা আছে।
লিখেছি আপন মনে একা আমি আমার দিনের
সারা পথে; মাকে আর প্রেয়সীকে আর এই দেশকে
আমি ভালোবাসি এই ছোট কথাটি প্রত্যহ
নানা রঙে
এঁকেছি তোমার বিচিত্র রঙের তুলি হাতে নিয়ে।
ইতিহাস ঐতিহ্যের আলো
জ্বালিয়ে রেখেছি ঘরে, যার প্রতি শিখায় তুমিই
অনন্ত জীবন দিয়ে রেখেছোঅমর করে, আর
আমাকে দিয়েছো এক মহত্তম শিল্পীর মহিমা।
আজন্ম লালনে তুমি আজীবন সমৃদ্ধ হয়েছো
আছো তুমি সমগ্র সত্তায়;
তুমি আছো আত্মা থেকে অধরে বিস্তৃত।
এই দেশ দেশের মানুষ
মানুষের সুখদুঃখ ভালোবাসা
তুমিই করেছো মূর্ত এবং তুমিই
আমার আত্মার এক অনবদ্য প্রতিমার মত।
পাখিদের সব গান সব সুর তার
পথিকের পদচিহ্ন তোমাতেই অমর, এবং
তোমাতেই মূর্ত দেখি সভ্যতার অমর মিনার।
জীবন মুকুর তুমি
কেননা তুমিই এ আত্মার পিপাসার বাণীরূপ
এবং তুমিই
মায়ের মুখের কথা প্রেয়সীর মুখের কবিতা।