আদাব সালাম অন্তে সমাচার এই
যে, হুজুর কাল ফজরের অনেক আগেই
তামাম মুরুব্বীদের দোয়ার বরকতে
সহি-সালামতে
এসে নিজের বাটিতে পৌছেচি। এখন
সে কারণ
পত্রযোগে শতকোটি সালাম নিবেন
আর সবিশেষ সংবাদাদি পত্রে জানিবেন।
যখন জাহাজঘাটে নেমেছি, তখন
নিশিরাত্রি। মন
কিছুটা ঘাবড়ালো, তবু মালেকের নাম
নিয়ে যখন মাঠের মাঝে এসে নামলাম
দেখলাম আজব ব্যাপার,
বেশুমার
বাতি
আসমানের অতবড় ছাতি
ছেয়ে আছে। আজব রোশনাই
ডেকে কয় কিছু ভয় নাই।
সত্যিই হুজুর
পলকে আত্মার থেকে সব ভয় দূর
হয়ে গেল।
মনে হলো মাঠ
বাট
আমারি অপেক্ষা করে যেন এতদিন
নিদ্রাহীন
ছিল। জেগে খোয়াব দেখেছে,
মকসেদ হসেল তাই বুকভারে রোশনাই মেখেছে
দেখেছে আমাকে
তাই বাঁকে বাঁকে
মশাল জ্বালিয়ে দিয়ে নাম
ধরে ডেকে বলে, তোমাকে পেলাম।
আমিও পেয়েছি। সেই মাটির দেয়াল,
খেয়াল-খুশিতে ভরা সেই খ’ড়ো চাল
তেমনি রয়েছে।
পুরনো হয়েছে
তবু কেমন সুঠাম।
এই সেই গ্রাম
আহা এই সে পুরনো ভিটি জনম যেখানে
জীবনের সাতান্নটি বছর এখানে
কেটেছে, এবং আমি এখানে মানুষ।
হুজুরের রাজপুরী নেহাত ফানুস
মনে হয় এর কাছে। লিখিলাম সাফ
পত্রের যতকিছু বেয়াদবী মাফ
করিবেন, জ্ঞাত আছি। তাই
আরো কিছু বিস্তারিত লিখিয়া জানাই।
এই ফাঁকে
আজ আপনাকে
নির্ভয়ে মনের কথা বলি। যতদিন
ওখানে ছিলাম, আমি সদায় গমগীন্
ছিলাম। কেননা নিত্য নিশুঁতি রাত্তিরে
কে যেন কানের কাছে বলে যেত ফিরে
আয়, ওরে ফিরে আয়।
কে যেন বুকের মধ্যে সদা হায় হায়
করেছে। মনের দুঃখ শুধু এই মন
জানিত। হুজুর আজ সেই বিবরণ
সবিশেষ পত্রের মারফতে
লিখিয়া জানাই কোনো মতে।
আমাতে ও আপনাতে আসমানজমিন
ফারাগ; কেননা আমি মূর্খ দীনহীন।
যদিও আমার ঘরে দুই মুঠো চাল
ছিল না, সেও ত ছিল ভাল। এ-কপাল
পুড়েছে পুড়ুক, তবু আপনার চালে
নাজেহাল হবো কেন? যা থাকে কপালে
এই ভেবে শেষতক ফিরেছি আবার।
হুজুর আপনার
মেহমানদারী বড় অদ্ভুত ব্যাপার।
দাওত করার পরে ঘরে খিল দিয়ে
জানালায় গিয়ে
দরজায় ভীড়ের দিকে চেয়ে চেয়ে করুণার হাসি।
মোরা পাশাপাশি
হয়ে ক্ষুধায় কাৎরাই,
ডালকুত্তা তেড়ে আসে তাই দেখে হঠাৎ পালাই।
আসলে হুজুর বড় বেদেরেগ দিল
চিল
কিংবা বাজপাখি কিছু হলে পর
তাই বেহতর
হতো। জানি গোস্বা করিবেন।
করুন, শুনুন সাফ সব লেন-দেন
যখন চুকিয়ে দিয়ে এসেছি, তখন
আর কি কারণ
ভয় করে কথা কই
আমি ত এখন আপনার প্রজা নই,
আর ত আপনার মাখা তামাক খাই না
নিজে মাখি নিজে খাই কোথাই যাই না।
এখন হয়েছি নিজস্বাধীন। এখন
গাঁয়ের সকল লোক জুটে এক মন
হয়ে
পুরনো লাঙল আর কাস্তে হাতে লয়ে
কসম খেয়েছি আর বলেছি হে ভাই,
এই সবে, এই গুলো আবার শানাই
আবার জিগরফাটা রক্ত দিয়ে লাল
বানাই। এগুলো হোক ঢাল তরোয়াল
তাদের গর্দান কাটা, যারা আচম্বিত
আমাদের জিন্দিগীর শান কেড়ে নিতে
ফন্দি করে। তাহাদের পথে আজ হতে
এই কাঁটা দিলাম।
এখন
আমরা, কজন,
পুরনো মরাই কটা সারাবো এবং
পুরনো লাঙল এনে দিতে হবে রং
সৎ সেজে বসে থাকা সাজে না, কারণ বেলাশেষ
আর কি বিশেষ
লিখিব। কুশলে আছি আর যথারীতি
কুশল-সংবাদ চাই, আদাবান্তে ইতি।
মহম্মদ তালেবালি, আমানীর পাড়,
তের’শ একান্ন সাল, বারোই আষাঢ।
প্রথম প্রকাশ: ১৯৪৬
মন্তব্য করুন