একটি অমূলক ধ্রুপদী / আবুল হাসান

যদি পারো এই ব্যাকুল বিথারে সোঁদালো স্নেহের পরশ দিও
যদি নাহি পারো স্মৃতির অতলে ঢেকে রেখ সব কাকতালীয়
যা কিছু আমার ছিল বহিবার সেও তো অনেক বেদনাদায়ক
সেই পাখী আর আসবে না, হায় বিঁধেছে যে তার মৃত্যু শায়ক!
গান রচে যাওয়া অনেক বিলাপ, গান কিসে জানে সুখ?
দু’মুঠো প্রাণের হাওয়ায় যে তবু ফুলগুলো উন্মুখ!

অনেক বছর, হাসবে বছর, তোমার দু’চোখে রাত
কী যেন ব্যথিত! নীড় জাগা পাখী করে নাকি দৃকপাত?
শান বাঁধা ঘাট, স্বচ্ছ পুকুর, সজল স্নানের ঢেউ
তাইতো চিনেছি, আর কিছু নয়, আর নয় কোন কেউ।
বেদনা মথিত তুমিও কি, বলো? -হরীণ নাভীর মূলে
আর কোন ঘ্রাণ উত্তাপ দেয়, উৎসারে পলে পলে?

আদিম পাখীরা ফুল ভালবাসে, আর সুগভীর হাওয়া
সারা রাত বুঝি আকাশী ধ্রুপদে হয়না সে গান গাওয়া?
মালকোষ বড় ব্যথিত মনের ধ্বনি নিয়ে বেয়ে আসে,
তারার আসরে ঈমন সুরের স্বর ভাসে উচ্ছসে।
সবাই আকাশ ভালবাসে, তবু মনের আকাশ বড়
ঝড় মেঘ আর বৃষ্টি ঘাতে সারাক্ষণ থরথর।।

দুপুর দুপুর, কী আছে দুপুরে? তবু ঝিম ঝিম রোদ
ছোট পাখী তুমি পাতা ফেল নাকো, নদীতে অনেক স্রোত!
ছোট পাখি তুমি ভালবাসো? হায় বুকের হাঁফরে সীসে
গলে গলে জ্বলে! -ক্ষত যন্ত্রণা তার সাথে যায় মিশে!

তার ভীরু পায়ে, কঠিন শব্দ, জানেনা মনের মায়া
কী হবে ওখানে ফুল ফেলে দিয়ে ঢাকতে নীরব ছায়া?

নিয়তি আমার গোলাপ কোথায়, গোলাপ করেছ জড়ো?
নিয়তি স্বপ্ন- চারিদিক- তবু স্বপ্নই জেনো বড়।
তার সে চোখের মেদুর কাজলে রক্তিম সংশয়,
নিয়তি তোমাকে ওখানে রাখবো? না-না বড় ভয় হয়।
তুমি মন খুঁড়ে হীরাগলা প্রেম আবার আনতে পারো?
নিয়তি, বুকের বর্ণালী যত দুখ ব্যথা আছে,তারও?

বড় সকরুণ হাই তুলি আজ মুখ চোরা সেই বাঁচার ডিবায়
দু’পাশে নিয়তি, সারাক্ষণ দুটি ব্যথিত পুতুল ঘুমায়!
যুগ যুগ ধরে পূরবায়ূ এই আকাশী নীলের হাতে
ফুল গুঁজে দিয়ে নিয়তি আমার পড়োনি কি সংঘাতে?

কাকেও কি তুমি এক চোখ ভাষা দিয়েছিলে ভীরু পাখী?
তার চোখ বুঝি জানেনা মমতা, বোঝেনা স্নেহের রাখি?
থাক্ পাখী তুমি যেয়োনা ওখানে, উদার আকাশ নীল
ঐ খানে ওড়ো, স্বপ্ন ওখানে রংছুট ঝিলমিল।

নদীতে জোয়ার, ঢেউ উৎরোলে সাগর অনেক হাসে
ছোট পাখী তুমি উদার আকাশে পাখা মেল উল্লাসে!
বাগানে-ত আছে গোলাপ পাপড়ী, ফুটবে তোমার চোখে
ছোট পাখী, তবু কাঁদবে এখনো মিথ্যে অবুঝ শোকে?
যত স্মৃতি আর বকেয়া ঋণের ক্রন্দন তব ভালে
ছোট পাখী, আর থাকবেনা তাও কোনদিন, এককালে।

গোলাপ অনেক, পৃথিবী হয়তো তার চেয়ে চিন্ময়
ঘাটে বন্দরে ফসলে যে তাই, সোনালী সুরের লয়।

যে আসে আসুক, তাকে যেতে দাও, যদি আর নাই আসে
নিয়তি এবং পাখীরা তোমরা কেঁদোনাকো আর ত্রাসে।
জনতা আমার, পৃথিবী আমার, চারপাশে যত আলো
এই-ই স্মরণীয়, ক্ষমার সূর্য তুমিই আমার ভালো।
অপরাধ যদি লোনায় হারায় সব ক্ষোভ, সংশয়
ছোট পাখী তুমি কেঁদোনা, ওখানে শুধু অমূলক ভয়।
ছোট পাখী, জানো, কৈশোরে সেই একটি হৃদয় কাঁপে
এবং তোমাকে নেই অনুরাগ এখনো অংকে মাপে।

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: