অন্ধের ভূমিকা / আল মাহমুদ

ছিলাম তো মুখ ফিরিয়ে। ভেবেছিলাম উদয়াস্তে আমার কি ভূমিকা?
আলোর আভায় ও বিকিরণে আমি স্তস্তিত পাথরের পাথরের জমাটবাঁধা অন্ধকার মাত্র।
দায় ও দায়িত্ব থেকে দূরে দিন আর রাতের
নিয়মগুলেঅ আবর্তিত হোক। আমি জানবো না কারা পৃথিবীতে এল গেল।
আর অন্ধের ধর্ম তো স্থকিরতা। চোখ মেলে আছি অথচ দেখছি না কিছুই।
এ ছাড়া আমার অন্ধত্বকে আমি ঠিক অন্ধকারও বলি না। দেখিনা
বলেই কি কিছু থাকতে নেই? আমার বোধশক্তি এ চিন্তায়
অধোবদন। নইলে তো অনেক আগেই বলততাম, অন্ধকারের অর্থ কিছু নেই।

নেই যদি আমার চোখের মধ্যে এত ব্যাকুলতার পানি কোত্থেকে এল?
কেবল কি বাতাসের আনাগোনায় আমার স্নায়ু সুখ পায়?
যার চলাচলের জন্য আমার এই প্রতিক্ষা
কেন মনে হয় সে এলে আমি ঠিক টের পাব। ঐ টের অন্ধের আন্দাজ নয়।
সচলতার প্রতি অনুভবের উত্তর।না দেখার আফসোসের বদলে
অন্য শব্দ তখন আমার প্রাপ্য হবে। অন্তত না দেখার জন্য
আমাকে কেউ অন্ধ বলবে না। বরং অন্ধের সামনে সকলেই
তাদের লজ্জা আর অনাবরণ ঢেকে ফেলবে। আর আমি
তোমাদের বসনের শব্দে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে হাসব।

সকলের উদয়কালের আলো যখন জড় জগৎকে অতিক্রম করে
আর আমি নিমীলিত আঁখি, কেন মনে হয় আমার চোখের কোনো দরকারই ছিল না।
প্রয়োজন ছিল না কোনো স্পর্শানুভূতির। চোখ কান নাক বা
ত্বকের আবরণ আমাকে একটা মেশিন বানিয়ে ফেলেছে। আমি
দেখতে শুনতে শুঁকতে চাইনি। চাই না
এই তো অন্ধের আকাশে এক্ষুণি একটা চাঁদ উঠলো।
আর জোছনার শিরশিরানিতে ইন্দ্রিয়সমূহের ভেতর দিয়ে ছুঁচের মত
পার হচ্ছে এক আকারহীন অস্তিত্বের ঘোষণা।
হায় আমার অন্ধত্ব কি এতটাই স্বাধীন?

১২.৪.৯৭

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: