গন্তব্যের কাছাকাছি এসে / আল মাহমুদ

নদীটা পেরিয়েই মনে হল প্রতিদ্বন্দ্বিতার সব শব্দ আমাকে ছেড়ে গেছে।
ঢেউ, বৈঠা আর পানির ছলছলানির সাথে
এতক্ষণ নিরুদ্দেশ যাত্রার যে প্রতিবাদ উঠেছিল। আশ্চর্য
নৈশব্দের মধ্যে কখন সব তলিয়ে গেল।
শত্রুতাও কি এখন এমন সবুজ মাঠ? যতদূর চোখ যায়
বিদ্বেষ হয়ে গেছে পাকা ধানের দুলুনি?
আমার পরিশ্রম দেখে যারা একদা বলত, আর একটি মাত্র নদী
আর একটা খেয়াঘাট পেরুলেই আমি গন্তব্যে পৌঁছুব। এখন তারা
কোথায়? এই সোনার ধানের একটা মীমাংসা কি দরকার নয়?

আমার না হয় কোনো বন্ধু ছিল না।

কিন্তু যে বৈরিতার ঘূর্ণিতে আমি বার বার দিশেহারা
তারা এসেও কি এই সীমাহীন শস্যের একটা সিদ্ধান্ত দেবে না?
লুটে নেবে না আমার সোনার ধান? আমি সব রকম রাহাজানির
জন্য প্রস্তুত। অন্তত মানুষের কণ্ঠস্বরে বেজে উঠুক
রাগ, দ্বেষ, হিংসা-
যদি গুলির শব্দ আমাকে বিদ্ধ নাও করে।

সত্যি যদি গন্তব্যের কাছাকাছি এসে গিয়ে থাকি তাহলে
তোমার সেই মুখ
সেই প্রত্যাখ্যানের পুরনো ভঙ্গী কেন দেখব না? কেন শত্রুতার বদলে
এই চিরহরিৎ শোভা?
বাতাসে ধানের দোলা অথচ ফসল তোলার কোনো আয়োজন নেই।
আমার জন্য শত্রু বা বন্ধু কেউ তো থাকুক?

কেউ বলুক বা না বলুক জানি আমি শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি।
এখানে কোনোদিন কোনো মানুষের কৃতির হিসেব হবে না এ কেমন কথা?
অন্তত তিরস্কার করার মত কেউ কি নেই?
ভূমিহীনদের দীর্ঘশ্বাসের মত এই সীমাহীন সবুজ আমার কোন্ কাজে লাগবে?
নিরাপদ ধানের গন্ধে আমার সারা জীবনের ভুখ তিয়াসা
পেটের ভিতর গুলিয়ে উঠেছে।
এখন কে আমাকে ভাতের থালা এগিয়ে দিয়ে বলবে, খাও!
আমি না বুঝে জিততে চেয়েছিলাম বলে কি আমার মাঠ ঘাট প্রান্তর
প্রাচুর্যের নরক হয়ে যাবে?

২৫.৩.৯৭

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: