একজন কবি আর কি দিতে পারে? এই নাও আমার পরিস্রুত ভাষা
নাও কবিতা-
আমার রক্ত। কলমের কালির চেয়েও মহার্ঘ। নাও আমার অশ্রুজল
দ্যাখো এতে যদি তোমার মরে যাওয়া স্রোতগুলো
নদীকে বিহ্বল করে ঘোলা পানির তোড় নিয়ে
সমুদ্রের দিকে ধাবমান হয়।
নাও অক্ষিগোলক। যদি এতে তোমার ভবিষ্যৎদৃষ্টি একবিংশ শতাব্দীকে
দুটি তীক্ষ্ন তীরের মত গেঁথে ফেলে। আমার চামড়া দিয়ে তোমার
রাঙা পায়ের জুতো বানিয়ে দিলাম। পরো।
আর হেঁটে যাও আগামী দিনের দিগবলয়ের দিকে।
পৃথিবী দেখুক আমার সমস্ত গান পাখি হয়ে তোমার শরীরে বাসা বেঁধেছে
আমার শব্দ তোমার শাড়ির পাড়ে মাছের আকৃতি নিয়ে
ঝাঁক বেঁধে সাঁতার কাটছে, তোমার ঘোমটায়।
দেখুক আমার ছন্দ তোমার কণ্ঠহার হয়ে দুলছে। আর
আমার উপমা?
তুমি তো জানো তোমার সাথে তুলনা দিই এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে নেই।
চির দুঃখিনী মা আমার
তোমার ঐশ্বর্যই তোমার শত্রু। যেমন আপন আপন মাংসে
হরিণী বৈরী।
চারদিকে শকুনীর উড়াউড়ি দেখে ভাবি তোমার শ্যামল প্রান্তর
হিংস্র মাংসাশী পাখির বিষ্ঠায় আকীর্ণ বটবৃক্ষের মত কেন?
আমরা কি তোমাকে রক্ষা করতে পারব? অযোগ্য সন্তান আমরা।
তবুও তো তোমার শস্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
তোমার রুদ্ধ নদীগুলোর ইশারায় আমরা কাঁপছি।
তোমার পর্বত যেন মাতৃস্তনের মত ভালোবাসার গহিনে
আমাদের জন্য আহ্বান।
তোমার প্রান্তর যেন রেখায়িত মাতৃ উদরের মত। যেখানে আমাদের উদ্ভব।
কে বলে পরাজিত তুমি? চির বিজয়িনী তুমি কোটি কোটি
ঈমানদার মানুষের ধাত্রী।
তোমার জন্য তোমার সন্তানদের অদেয় কি কিছু আছে? অথচ নামগোত্রহীন
ডাইনিরা তোমাকে নিয়ে পাশাখেলায় মত্ত। তারা বাজি রাখে
তোমার অঙ্গ প্রত্যঙ্গের
তারা তোমাকে চির ক্রীতদাসী বানিয়ে তোমার অঙ্গে পরিয়ে দিতে চায়
দাসত্বের বল্কল।
কিন্তু তোমার সন্তানেরা জানে, ও আমাদের তৌহিদবাদিনী
অবগুণ্ঠিতা জননী জাগ্রতা
পৌত্তলিক ধুম্রকুণ্ডলী থেকে তুমি একদিন বেরিয়ে আসবেই।
তোমার নদীগুলো আবার সমুদ্রের দিকে ধাবমান হবে। চিম্বুক পাহাড়
হবে তোমার স্তনাগ্রচূড়ার মত মাতৃত্বের গৌরব।
ডাইনিদের পাশার ঘুটি একদিন ইতিহাসের অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হলে
স্বাধীনতার গান গাইবে তোমার কিষাণ-কিষাণীরা।
আমরা এভাবেই তোমার আশাকে জাগিয়ে তুলি। আশাইতো
তোমার ভবিষ্যত ও ভরসা। প্রন্তরে তোমার চরণেরা
দ্যাখো ভবিষ্যতের গান ধরেছে। আল্লাহর প্রশংসার গান।
আগামীর আনন্দের গান। এই গানে তোমার শস্যক্ষেত্রগুলো কি
শ্যামল হয়ে উঠবে না?