যে কেউ তোমাকে দেখে বলবে- তুমি প্রকৃতির মতো সুন্দর।
কিন্তু আমি আবিষ্কার করেছি: তুমি এক রহস্যমানবী-
অধরা-অশেষ-অপাপবিদ্ধ- এক পলকে সবাইকে মুগ্ধ করার মতো।
তবে আমি সবার হতে দিতে চাই না- তুমি শুধু আমার পৃথিবী হয়েই থাকবে।
চারপাশে যে সবুজতা সজীবতায় জেগে উঠেছে, কাউকে পরওয়া করছে না;
ওরা আসলে তোমার মুখের লাবণ্যের খোঁজ-খবরই রাখে না।
ঐ সবুজতার চোখ চেয়ে থাকুক তোমার শরীরের লাবণ্য প্রভায়।
উপলব্ধি করুক মানবীয় সজীবতার দিক্দিগন্ত।
এই আষাঢ়ে আকাশে মেঘদূতের মতো কালো জলদ মেঘেরা আনন্দে নেচে যাচ্ছে,
তুমি আমার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে অভিভূত হয়ে চেয়েছিলে সেদিকে;
কিন্তু বুঝতে পারোনি, তোমার চুলের বিন্যাস আর চাঞ্চল্য যদি ওরা লক্ষ করতো
তাহলে প্রকৃত সৌন্দর্যের ষোলকলা অনুভব করতে পারতো, ওদের দুর্ভাগ্য।
রাস্তার পাশে দেখো সবুজ পাতার ফাঁকে কৃষ্ণচূড়া কেমন উদ্ধত হয়ে
লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে। আমি নিশ্চিত, ওদের সৌভাগ্য হয়নি
তোমার ঠোঁটের মাধুর্য দেখার; হলে লজ্জায় আরো রক্তাক্ত হয়ে যেতো।
আর সেই ঠোঁটের হাসি যদি তুমি ছড়িয়ে দিতে, তাহলে দেখতে-
এক ফুঁয়ে যেভাবে মোমবাতি নিভে যায়
সেভাবে দপ করে নিভে যেতো উজ্জ্বল সূর্যটা।
তুমি দিঘি দেখে সেদিন উ”চ্ছ্বসিত হয়েছিলে। বললে, কী গভীর আর স্বচ্ছ!
আকাশ এসে ওখানে বাসা বেঁধেছে। আমি প্রতিবাদ করেছি: তুমি যদি আমার
চোখের আয়নায় তোমার পল্লবিত আখিযুগলকে দেখতে, তাহলে জানতে পারতে
এই দুটি আসলে চোখ নয়, এ যে রামসাগর- যেখানে কাচের মতো
স্বচ্ছতায় লুটোপুটি দিচ্ছে সুনীল আকাশ।
আমার মতো কবি সেখানে সাঁতার দিতে পারলে নিজেকে মহারাজ মনে করতো।
তুমি সেদিন পূর্ণিমা চাঁদের প্রসংশায় পঞ্চমুখ ছিলে
মনে মনে আমি অস্বীকার করেছি।
কেননা তোমার উন্নত স্তনযুগলে অনন্ত জোছনার ফোয়ারা উৎসারিত-
একজোড়া ক্ষয়হীন পূর্ণিমা সেখানে দিবানিশি স্বর্গীয় বিভা ছড়িয়ে যাচ্ছে।
একজন কবি তার স্পর্শ পেলে অমরতা লাভে কোনো বাধাই থাকবে না।
আমার মতো হতভাগ্য কবির কাছে তো স্বর্গচূড়া।
তুমি বর্ষার সজীব ঘাসের সবুজে হাতের ছোঁয়া দিয়ে সেদিন পুলকিত হয়েছো;
ঘাসের স্পর্শে শিহরণে নিজেকে ধন্য মনে করেছো।
কিন্তু আমি দেখেছি ঘাসেরাই ধন্য ধন্য বনে গেছে।
আহ্ আমার বুকের জমিন যদি হতো ঘাসের প্রান্তর,
তাহলে আমি সর্বস্ব ত্যাগ করতাম।
সেদিন আমি জামরুল গাছ দেখে জামরুল খেতে চেয়েছিলাম;
আমার মতো গাধা বুঝতে পারেনি, তোমার মাঝেই আছে
জামরুলের আদি ঐতিহ্য,
পরে আশ্চর্য হয়েছি তোমার নাভিমূল দেখে:
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জামরুলের উপমা!
সেটা আমি কেমন করে বলি! আমি কেমন করে বলি-
শুভ্র কদমের মাতালকরা যে গন্ধ, সমস্ত চেতনাকে অবশকরা যে সুবাস,
তা তোমার চুম্বন-পরিমলের কাছে শতবার হার মানে।
আসলে তুমি প্রকৃতির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রকৃতিপাগল কবিদের সামনে
তুমি এক জ্বলন্ত, প্রাণবন্ত প্রতিবাদের প্রতিমা-
যার অন্তরালে একজন বিস্ময়মানবী তুমি-
একাকী, নিঃসঙ্গ, নির্জন একটি বাড়িতে তুমি ফুটে আছো।
আর আমি এক অখ্যাত কবি তোমার দরজায় অনন্তকাল কড়া নেড়ে যাই
কড়া নেড়ে যাই, কড়া নেড়ে যাই…