তার কোনো নাম লেখা নেই / সাইফ আলি

সদ্য খোড়া কবরটার দেয়ালের কিছু জায়গা দাদরোখাদরো হয়ে আছে। যিনি কবরটা খুড়ছেন তিনি বহুবার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি, আলগা মাটি; খসতে কারো উসকে দেওয়া লাগে না। গোরখোদক চাচা একবার শুয়ে পড়ে দেখলেন লম্বায় ঠিক হবে কিনা। ছয় ফিট লম্বা মানুষটার ঘার কিছুটা কাত হয়ে থাকলো। তবে যার জন্য কবরটা খোড়া হয়েছে সে সর্বোচ্চ পাঁচ ফিট হতে পারে।

খোড়াখুড়ির কাজ শেষ হলে আমার উপর কোদাল পাহারা দেওয়ার মহান দায়িত্ব অর্পণ করে তিনি চলে গেছেন। সারি সারি কবরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কেমন যেনো অস্বস্তি বোধ করছি। সদ্য খোড়া কবরটার পাশেই একটা ছোট্ট কবর। এক সপ্তাও হয়নি। জন্মের কয়েক ঘন্টা পরেই মারা গিয়েছিল। চাচা বলছিলেন- কবরটা ভালো যায়গায় হয়েছে, নিষ্পাপ শিশুর কবরের পাশে। আহা! নিষ্পাপ; কত বড় সার্টিফিকেট শিশুটার!

ঘুরে ঘুরে কবর দেখছি। কোনো কোনোটায় নাম পরিচয় দেওয়া আছে। গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ছিলেন হয়তো; নামের প্রয়োজন ফুরোয়নি এখনো! একটু এগিয়ে গেলাম,  প্রবেশপথের পাশেই; একটা কবর। নাম লেখা আছে তবে তা আগের জনের। কিছুদিন আগেই এখানে নতুন একজনকে শুয়ানো হয়েছে। নাম আগেরটাই আছে। পরের জনের নামটা জানি আমি। কাছের বড় ভাই ছিলেন। স্বপ্নবাজ মানুষ, বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর চোখদুটো এখনো তাকিয়ে আছে। সামনের দুটো দাঁত উঁচু ছিলো। হাসলে অদ্ভুত সুন্দর দেখাতো ভাইকে। শেষ যখন দেখা হয়েছিলো তখন আমার অনেক অভিযোগ। কান্না চেপে হাসতে হাসতে বলেছিলাম- ভাই, এভাবে আর কতোদিন? তার মুখে হাসি!

কবরটার পাশে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে। দিনটা কি বার ছিলো মনে নেই। ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছিলাম ছুটিতে। হঠাৎ শুনলাম তিনি আর নেই। লাশ রাখা ছিলো, সাহস নিয়ে দেখতে পারিনি। নখগুলো তোলা, চোখগুলো তোলা… কিভাবে দেখতাম। বৃষ্টির দিন। কান্না লুকানোর চেষ্টা করিনি। বৃষ্টিভেজা জানাজার পর এই কবরেই শোয়ানো হয়েছিলো। এখানে তার কোনো নাম লেখা নেই।

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: