অপুর চিঠি / সায়ীদ আবুবকর

[আমাকে নিয়ে লেখা উড়িশ্যার কবি ভারতী নায়েকের
A Letter to Appu With Love From Durga Didi কবিতার জবাবে]

তুমিও, হে দিদি, শেষতক গন্দমই খেলে।
গন্দম খেলে তো ঈশ্বর বেহেস্ত থেকে তাকে
ছুঁড়ে মারে পৃথিবীর আস্তাকুঁড়ে।
শরীরে তখন তার উত্তাল যৌবন এসে যায়।
সে-যৌবন আগুন জ্বালায় সারা দেহে।
তারপর মানুষ কেমন মাতালের মতো ঘরদোর ফেলে
চলে যায় বনবাসে। বনবাসে গিয়ে কত শখ করে
গড়ে তোলে বসন্ত নিবাস।

আজ আমি ধুতির মতন সাদা কাশফুল বনে
নিঃসঙ্গ বাঁশিতে তুলি একা সুর।
সে-সুর সীমান্ত পার হয়ে পৌঁছায় না উড়িশ্যায়
তোমার শ্বশুরালয়ে।
সেই যে সীমান্ত পার হয়ে বরের বাড়িতে তুমি গেলে;
তারপর সীমান্তে লোহার কাঁটাতার এলো।
কী করে তোমার কাছে ছুটে যাবো বলো,
মানুষ দেখলেই সীমান্তরক্ষীরা নিষ্ঠুর বন্দুক নিয়ে
শিকারীর মতো তাক করে থাকে, যেন আমরা সুস্বাদু
হরিয়াল ঘুঘু, বসে আছি অশ্বত্থের ডালে।

আজ সর্ষেফুলে ভরে গেলে হেমন্তের মাঠঘাট,
কেবলি তোমার কথা মনে পড়ে, দিদি;
সেই যে হলুদ শাড়ি পরে তুমি আমার দুহাত ধরে
সর্ষেখেতের শিশিরসিক্ত আল ধরে পরীর মতো ছুটতে-
কেমন হাঁফিয়ে উঠতাম আমিÑ মনে পড়ে।

আমের গুটিতে আজ সয়লাব হয়ে গেলে আমগাছগুলো,
ভুল করে রান্নাঘরে ছুটে যাই চুরি করে একটু নুন আনার জন্য
আর পুকুরঘাটের শানে শুধু ঝিনুক শানাতে থাকি
মনে হয় এই বুঝি তুমি এলে
পেঁচানো কোরোচ খুলে দিয়ে তুমি বললে, এই নে, অপু
এই দ্যাখ্ কত বড় বড় আমÑভিতরে নিশ্চয় বিচি হয়ে গেছে!

সেসব জংলি আনন্দ পিছনে ফেলে কোন্ আনন্দের পাছে আজ
ছুটোছুটি করো, দিদি?
কী হয় সংসার করে,
কী হয় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে,
কী হয় শরীর নিয়ে মত্ত থেকে রাতদিন
যখন তোমার অপুর দুচোখে ঢেউ তোলে বিচ্ছেদের নোনা জল?

আদম কি ভালো ছিলো একদিনও বেহেস্তবাগান ছেড়ে এসে?
ও দূর্গাদি, তুমিও কি ভালো আছো তোমার অপুকে ছেড়ে গিয়ে?
ইতি
অপু
বাংলাদেশ

২২.২.২০১৬ মিলনমোড়, সিরাজগঞ্জ

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: