আমাকে আমি দেখছি না দীর্ঘদিন ধরে
কারা এসে চোখ বেঁধে আমাকে গহ্বরে ফেলে যাওয়ার পর বয়ে যাচ্ছে যুগের পর যুগ
দেখছি না আকাশ-বাতাস জুড়ে আলো আর অন্ধকারে নিঃশব্দ সংঘাত
দেখছি না শব্দের ফুলগুলো আহত পাখির রক্তে কীভাবে জ্বলে উঠছে লেলিহান শিখার মতো
দেখছি না স্বপ্নের মিনার লক্ষ্যে ধেয়ে আসা রাহুর প্রতি পূর্ণিমার সংক্ষোভ
কীভাবে শুয়োরগুলো সূর্যের দিকে ধেয়ে গেলো চেটে খাবে বলে
কীভাবে হরিৎপ্রান্তরগুলো কালের নাগিণী বিষে হয়ে গেলো নীল
কীভাবে বিলাপ ছাড়া জনপদে থেমে গেলো সব ধ্বনি
নিঃশ্বাস আটকে গেছে বাতাস আর আমার মাজে ক্লোরিনের অন্তরালে, তবু বেঁচে আছি
কর্তিক আমার মুণ্ডু নৃত্য করে জল্লাদের অসির ডগায়, তবু বেঁচে আছি
হৃদপিণ্ড চাকু চালাচ্ছে তুখুড় কসাই, তবু বেঁচে আছি
কীভাবে বেঁচে আছি, দেখছি না
দেখছি না আমার ছায়া উপর, নিচ, ডান, বাম
দেখছি না আমার বুক, প্রাচীন বৃক্ষের মতো বাঁকা হাড়
দেখছি না ভৌতিক রাতে স্থবির শূন্যতার গায়ে জমাট রক্তের মতো লেগে থাকা আমার যন্ত্রণা
যেভাবে সজনে গাছের ডালে বসা বেদনাহত পাখিটি ক্রন্দনে হয়ে গেলে করুণ কবিতা
তেমনি পাশবিক ঘূর্ণিস্রোতকে ধিক্কার দিতে এসে শরাহত হরিণীর মতো
বাঁচাও বাঁচাও বলে হয়ে গেছি কালের নাকাড়া
নাকাড়ার ধ্বনিগুলো বুনোঘোড়ার মতো খুরের দাপটে ক্ষত-বিক্ষত করে রাতের শরীর
নাকাড়ার ধ্বনিগুলো ছায়াপথে ছড়িয়ে পড়ে তেজস্ক্রীয় শপথের মতো
নাকাড়ার ধ্বনিগুলো বাতাসে দাউদাউ করে অগ্নিময় অক্ষরে
আমাকে আঘাত করলে সে আগুন হয়ে যায় তুমুল তুফান
আমাকে আঘাত করলে কবর প্রকম্পিত হয় লাশের মিছিলে
তবু ওরা কেটে ফেলে হাত পা, কণ্ঠনালী, পাঁজরের চাঁক
বুলডাজোর ছুটে আসে সব কিছু চুরমার করে দিতে
আমার চুরমার সত্তা ছড়িয়ে পড়ে জলে-স্থলে, নীলিমা, হাওয়ায়
পথে পথে, শস্যক্ষেতে, গাছে গাছে বিদ্যুতের মতো
সর্বত্র বাজতে থাকে অমোঘ সাইরেন-মুক্ত পৃথিবীর
মন্তব্য করুন