রাতের তৃতীয় প্রহর।
হজ্বের গিলাফ গায়ে জড়ানো চাঁদ প্রস্তুতির গোসল সেরে
কুরবানির দুম্বাদের সাথে আকাশে পায়চারি করছে।
আমি তিনজন গাছের সাথে একান্ত আলাপ সেরে হঠাৎ উপরে তাকালাম।
চাঁদের শরীর বেয়ে গোসলের ফোটা ফোটা দুধ ঝরে পড়ছে।
উড়ন্ত চুমু দিয়ে সে আমাকে স্বাগত জানালো। চাঁদকে ধন্যবাদ জানিয়ে
মহাশূন্যে বিশেষ আসরে যাত্রা করলাম।
কেমন আয়োজন ছিলো? জানতে চেয়ো না।
পাহাড়,নদী-নালা,বৃক্ষ, পশু- পাখি সকলেই যার যার মতো উপস্থিত ছিলেন।
সময় সেখানে ছিলো আরেক সময়
দিন- রাতের অতিরিক্ত কিছু!
স্থানের সেখানে ছিলো ভিন্ন মানে
আয়তন বা আকারের অধিক কিছু!
সেখানে প্রমাণ করতে হচ্ছিলো অস্তিত্বকে।
কারণ অস্বীকার করা হচ্ছিলো আমার অস্তিত্ব!
বললাম –
‘আমি যদি না থাকতাম, তবে কেন আপনারা প্রশ্ন করছেন- আমি কে?’
‘যারা জানতে চান আমার অস্তিত্ব, সবার ভাবনায় আমি আছি।
আমার অস্তিত্বকে যারা অস্বীকার করছেন
তাদের মধ্যে যেমন আছি, তেমনি যারা স্বীকার করছেন, তাদের মধ্যেও আছি!’
‘আমাকে যে প্রমাণ করতে হচ্ছে আমার থাকা, এটাই আমার থাকার প্রমাণ!’
‘আমার সবকিছুর মধ্যে নিহিত আছে আমার সবকিছুর কারণ।’
বলা হলো,তোমার দৃশ্যমান প্রমাণ পেশ করো।
আমি একটা পাহাড় বানালাম।
পাহাড়টি বানালাম,যেন পাহাড়ের বাইরে না থাকি!
যেন সকলেই পাহাড় দেখে আমাকে দেখতে পায়!
পাহাড় নিজেকে দিয়ে আমাকে প্রমাণ করছিলো।
এখানেই শেষ হতে পারতো কবিতাটি।
বিপত্তি বাড়ালো হাওয়া। বললো, তুমি বাহ্যিক বাস্তবতাকে প্রমাণ করেছো।
বাস্তবতার সারবস্তুকে প্রমাণ করোনি।
বললাম, আমার বাস্তবতার সারবস্তু প্রত্যক্ষণের উর্ধ্বে।
সে সকল চেতনার চেতনাতিরিক্ত প্রাণ।
নদী বললো, তাহলে তুমি নিজেকে প্রমাণ করতে পারোনি।
কারণ সৃষ্টি দিয়ে নিজেকে কেবল গৌণভাবে প্রমাণ করা যায়।
আমার বোয়াল মাছ আমার অস্তিত্বকে প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়।
কারণ সে হতে পারে হাওরের বোয়াল।
পরম অস্তিত্বে নিজের অস্তিত্বকে প্রমাণ করো।
আমি এর জবাবে
সেজদায় লুঠিয়ে পড়লাম।
জায়গাটি কেমন ছিলো,জানতে চেয়ো না।
কতকাল অতিক্রান্ত হলো,জানতে চেয়ো না।
অস্তিত্বের মোহনায় আমি তাৎপর্যের মধ্যে ডুবে আছি।
আকাশগঙ্গা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে আছে।
নীহারিকা আমার সারসত্তাকে জানাচ্ছে সালাম।
সৌরলোকে পড়ে গেছে অভূত সাড়া।
নিসর্গের গোটা মাহফিল মহাঅস্তিত্বে আমার নিমজ্জন থেকে পান করছে মুগ্ধতা।
সবাই অপেক্ষমাণ। আমি কখন মাথা তুলি।
আমার অস্তিত্বকে সবাই উদযাপন করবে!
কিন্তু আমি যেহেতু নিজেকে লুঠিয়ে দিয়ে অস্তিত্বে জেগে উঠেছি,
অতএব আমার কোনো দরকার নেই নিজেকে প্রমাণ করার।
আমার কোনো গরজ নেই মহাবিশ্বের হর্ষধ্বনির।
আমি যে রহস্যস্বাদে নিজেকে আবিষ্কার করেছি
সেই সেজদা থেকে তোমাদের খোঁড়া প্রমাণ
দর্শন ও অভিবাদনের ভেতর মাথা তুলবো না।
আমার সেজদাই শেষ অস্তিত্বদর্শন!
মন্তব্য করুন