এমন ছায়াশরীর দেখিনি আগে। অন্ধকারের নোংরা জিহ্বা
নীরবতার গায়ে সাপের মতো ছোবল দিলে বুঝলাম
ছায়াশরীর কথা বলছে।
করোনার কাশি থেকে বেরিয়ে আসা বাতাসের চেয়ে
অস্বস্থিকর নি:শ্বাস ছেড়ে
সে আমার দিকে এগিয়ে এলো।
তার পেছনে অগণিত ছায়াশরীর।
তাবড় তাবড় রাষ্ট্র ও রাজনীতি।
যেন সে পরাক্রান্ত কেউ, কালের দাজ্জাল!
সবাই বলছে প্রণাম করো, অবনত হও!
কিন্তু আমার মাথা তখন সেই বৃক্ষের মতো
যার তক্তা দিয়ে বানানো হবে নুহের জাহাজ।
সে নমিত হবে কেন, যে বৃক্ষের সত্তায় আছে বিশ্বের উদ্ধার!
বললাম, এ কোন প্রহেলিকা, ছায়াঅন্ধকার, যার গন্ধ
অভিশাপের মতো হাওয়াকে কামড়ায়!
তারা বললো, এ হচ্ছে মুক্তিদূত, অধুনিকতা।
প্রণতি জানাও তারে, অবনত হও!
আমি আধুনিকতাকে খুঁজছিলাম। সে মানবেতিহাসের
বখাটে বৃদ্ধ, যুবকের জেল্লায় নিজেকে লুকিয়েছে!
তার ঔদ্ধত্য যে পায়ের উপর ভর করে, সে পায়ের তলে
জীবনের কাতরানী।
সে দিয়েছে গতির গরিমা, সে এনেছে প্রকৃতিবিজয়
সে পেয়েছে বস্তুর অধিকার!
আমাকে শিখিয়েছে উড়তে-যেন আমি পাখি
আমাকে শিখিয়েছে ডুবতে -যেন আমি মাছ
আমাকে শিখিয়েছে খেলতে, যেন আমি খেলা
হে আধুনিকতা, তুমি আমাকে থিয়েটার দিয়েছো
যেখানে ছবি, যন্ত্র, অভিনয়।
আমি কি ছবির জন্য তোমাতে বিনীত হবো, যখন তুমি প্রাণকে উপেক্ষা করেছো?
আমি কি যন্ত্রের জন্য কৃতজ্ঞ হবো, যখন তুমি আমাকে এর অধীন করে দিচ্ছো!
আমি কি অভিনয়ের জন্য তোমাকে ফুলের মালা দেবো
যখন জীবনটাকেই করে তুলেছো অভিনয়!
প্রেম অভিনয়, পরিবার অভিনয়, সম্পর্ক অভিনয়,
ঘুম অভিনয়, জাগরণ অভিনয়
আহা, বাবা অভিনয়, মেয়েও অভিনয়!
তুমি আশা করছো, আমি প্রণতি জানাবো এ জন্য, যখন-
আমার প্রকৃত জীবনকে খুজে পাচ্ছি না তোমার অভিনয়পৃথিবীতে!
তুমি পিপাসার্তকে পাউরুটি দিয়েছো
দুঃখ করছো, কেন সে আরো কিছু চাচ্ছে!
ক্ষুধার্তকে দিয়েছো ফুলের ঘ্রাণ
অভিযোগ করছো, কেন সে ক্ষুধার দাবি ত্যাগ করছে না!
প্রেমিককে দিয়েছো কামের আগুন
বলছো, তবুও তার কীসের দীর্ঘশ্বাস?
রাতকে দিয়েছো নিয়ন আলো।
বহু শতাব্দী ধরে সে জোছনাকে ধর্ষণ করছে পথে -ঘাটে!
পৃথিবীর সবুজ বাকলে চুমুর মতো লেগে থাকা
নীলপূর্ণিমা নিয়নের গুতো খেয়ে পালাই পালাই!
আহা প্রকৃতি!
ওজোনস্থরের ফাটল দিয়ে ইতিহাসের অভিশাপ নেমে আসছে!
কোন পাপে বৃক্ষ, ঋতু,বৃষ্টি বা সমুদ্রে বাজে মৃত্যুর ঘন্টাধ্বণি!
তোমার শিল্প, তোমার ভোগ, তোমার উন্নয়ন
নদী, অরণ্য কিংবা হাওয়ার গতরে লিখছে
প্রাণ ও প্রকৃতির করুণ এলিজি!
সেই শিল্প, ভোগ ও উন্নয়নের কৃতিত্ব বাখান করে
তুমি যাই বলছো
সবই তোমাকে দিগম্বর করছে অবিরত।
তুমি ইতোমধ্যে ন্যাংটো হয়ে গেছো – সাক্ষী বধ্যভূমি
তোমার নি:শ্বাসে মৃত্যু, মারি ও মড়ক- সাক্ষি উপনিবেশ
তোমার শরীরভরা বিনাশী পচন- সাক্ষী তোমার শরীর –
যে শরীরের নিচে পৃথিবীর শরীরকে বাধ্যতামূলকভাবে তুমি চাও!
তুমি জানো, পৃথিবী তোমাকে মন দেয়নি
এবং জেনে রাখো আর শরীরও দেবে না!
নারীকে মুক্তি দেবে বলে নারিত্ব থেকে তাকে আলাদা করছো।
সে হতে পারছে ভালো রেসলার , জুতার বিজ্ঞাপনের ভালো মডেল
কিন্তু হতে পারছে না ভালো মা!
তুমি বলছো, নারীর পৃথিবীকে উন্মুক্ত করেছি।
কিন্তু সে জন্য তার স্ত্রিত্ব, সতিত্ব ও আব্রু ধরে
টানার কী দরকার ছিলো!
যা হারালে নারী শুধু রিক্ত হতে থাকে!
তুমি আমাদের ইচ্ছের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য
আল্লাহ থেকে আলাদা হবার প্ররোচনা দিচ্ছো।
কিন্তু ইচ্ছেকে দাস বানিয়ে দিচ্ছো প্রবৃত্তির।
সে মালিক হয়ে আমাদের বাঁচাকে বেচে দিচ্ছে লালসার দামে।
তুমি ব্যক্তির মনে ইশ্বরের জায়গা স্বীকার করছো।
কিন্তু কেন আদালতে ইশ্বরকে ঢুকতে দিচ্ছো না?
কেন শাসনের দণ্ড নিজের হাতে রাখতে পাগলপারা?
কেন আমাদের টাকাকড়ি আর জীবনের গণিতে
ইশ্বরের অঙ্ককে নিষিদ্ধ করছো?
কেন বিশ্বের বিধানে ইশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনলেই শুরু করো গেলো! গেলো! –
যখন জগতব্যবস্থায় ইশ্বরের অনুপস্থিতিকে প্রমাণ করতে পারছো না!
তাহলে তুমি ইশ্বরকে সরিয়ে দিয়ে হতে চাও বিকল্প ইশ্বর?
এসো ইশ্বর, তোমার কান মলে দিচ্ছি!