উপনিবেশিত চোখের বিস্ময়! / মুসা আল হাফিজ

গরুটি দীর্ঘসময় তোমার দিকে চেয়ে থাকে,
করুণ চোখ – তার ঘাসে বিষ!
তোমার দিকে চেয়ে থাকে কাক ও কচ্ছপ

  • তাদের আবাসে বিপদ

চেয়ে আছে সজারু ও জারুল
পারুল ও পায়রার
অসুখী মন আর ভাঙ্গাচোরা চোখ!

তোমার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকায়
হাবিল-কাবিল
খুনি ও নিহত
তোমার মুখের হাসি দেখে কেঁপে উঠছে
সাপ
বান্দর
ডায়নোসর
পাথরযুগ
রূপকথা

তারা তোমার হাসিতে কী যে দেখতে পায়?
তারা তোমার হাসিতে কী যে দেখতে চায়?

মরানদী তোমার থেকে পরিত্রাণ চাইছে
মরাঅরণ্য তোমার থেকে পরিত্রাণ চাইছে
বধ্যভূমি তোমার থেকে পরিত্রাণ চাইছে
দোজখের গর্ত তোমার থেকে পরিত্রাণ চাইছে

ও সুতনু সাম্রাজ্যবাদ!
ও বাহারী লাস্যময়ী!
তোমাতে তারা কী দেখতে পায়, যা আমি দেখি না?

হায়রে দেখি না আমি কোন সে তোমায়?

শ্রমিক / মুসা আল হাফিজ

মেশিনে গুড়ানো হয় প্যাকেটে মোড়ানো হয়
পানিতে চুবানো হয়, পরে
আগুনে পোড়ানো হয় অনেক আদরে!

তাওয়া থেকে যেই মুক্তি পাই,
সকলের খাদ্য হয়ে যাই!

শ্রমিকের রুটি নেই,শ্রমিকই রুটি
রুটি খাওয়ার এক তরিকার নাম আমেরিকা!
আরো মজাদার নাম শিল্পবিপ্লব
কালো-ধলো কারখানা ও মস্ত মস্ত মাস্তির শহর!

বিশ্বায়ন সুন্দরীর সুতনুর তেজে ওগো উতলা সময়!
এ রূপসী শুধু রুটি খায়!

তার রুটির খনির নাম প্রাচ্য, কালোসোনা আফ্রিকা
বেশি বেশি কমমানুষের তৃতীয় জগত!

পৃথিবীর অগ্রগতি রুটি খেতে খেতে!
কায়দা করে রুটি খেতে খেতে বহুজাতিক কোম্পানি মুখ জোড়ায়,
বিশ্বব্যাংক চোখ ঘোরায়, প্রভুবিশ্ব দাসবিশ্বকে বুকে জড়ায়!
নেকড়েবিশ্ব রুটি খেয়ে নেকড়ে বিশ্ব হয়
ছাগলবিশ্বে ব্রাহ্মণ ছাগলেরা শুধু রুটি খায়!

মন্ত্রীপরিষদ, খাকি পোশাক, বিনিয়োগ বোর্ড, নগরভবন,
সম্পাদকের চেয়ার রুটি খায়
আশ্রম, আমলা, অভিনেতা, অফিসার সকল অভিসারে রুটি খায়…

সকলেই রুটি খায় সকল খানায়
নরমাংসে রুটি আর বৈজ্ঞানিক ঝুল
সভ্যতার পাতে বসে বসে!

মেশিনে গুড়ানো হয় প্যাকেটে মোড়ানো হয়
পানিতে চুবানো হয়, পরে
আগুনে পোড়ানো হয় অনেক আদরে!

তাওয়া থেকে যেই মুক্তি পাই, সকলের
খাদ্য হয়ে যাই!

আমার বিচার / মুসা আল হাফিজ

আলীয়া আলীর সাথে দেখা হলো রাস্তায়।
আইনজীবী মানুষ, বিবাদ নিরসনে দৌড়াচ্ছেন।

বললাম, কীসের এতো ব্যস্ততা !
তিনি আমাকে একটি মহাবিবাদের মোড়ে নিয়ে গেলেন।

সারা পৃথিবীর সব জাতি ও ভাষা উপচে পড়েছে যেন!

দলে দলে চলমান তুমুল বিবাদ।

একদল খায় আত্মা, একদল খায় দেহ

প্রথম দল থাকতে চায় গুণে, পরের দল মাত্রায়
তারা সব ক্ষেত্রেই ঝগড়া করে।

একজন বলে দান,একজন বলে ট্যাক্স
একদল চায় তাপস, একদল চায় সেনাপতি
একদল চায় প্রার্থনা, একদল চায় চায় উৎপাদন
একদল চায় নন্দন, একদল চায় প্রযুক্তি

একদল বলে মনুষত্য একদল বলে প্রগতি
তারা আধিপত্য চায় বটে!

একদল আধিপত্য করতে চায় নিজেতে
অন্যদল প্রকৃতির উপর!

শিশুর শিক্ষা ঘরে দেখতে মরিয়া একদল
আরেকদল কিন্ডারগার্টেন সাজায়!

একদল ফিরতে চায় পরিবারে, আরেকদল ইচ্ছের স্বাধীনতায়!

কোনো দলই ছাড় দিচ্ছে না কোনো দলকে। চলছে কচ্ছাল।

মন্ত্রীপরিষদ, সেমিনারহল , বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বব্যাংক
জাতিসংঘ, মুদিদোকান, ড্রাইভার সমিতি
বিবিসি, আল জাজিরা, হোওয়াইট হাউস ভেটিকানসিটি
আরবলীগ, অক্সফোর্ড, আল আজহার সকলেই বিতর্কে উচ্চকণ্ঠ।

কার আওয়াজ কে শুনবে হে প্রভু?

কবি, অধ্যাপক,মৌলবী,ভান্তে,পাদ্রী
বাটপার, রাজনীতিক,পুলিশ, অভিনেতা
কৃষক, পুঁজিপতি সাংবাদিক, পতিতা, বুদ্ধিজীবী
জলদস্যু সকলেই ঝগড়ার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাঠ!

আদিঅন্ত ফেণায়িত তর্কের উত্তাপে।

হাতাহাতি, কাটাকাটি, সীমান্তযুদ্ধ, অস্ত্রপ্রতিযোগিতা চলছে তুমুল।

থৈ থৈ যুদ্ধের মাঝখানে আমাকে দাঁড় করিয়ে
আলীয়া আলী হঠাৎ আকাশে উড়ে গেলেন!

আমি এই প্রমত্ত যুদ্ধমাঠ কীভাবে সামলাবো?

আমি দেহের সাথে আত্মার বিয়ে আয়োজন করলাম!
প্রার্থনার সাথে উৎপাদনের ভ্রাতৃত্ব গড়ে দিলাম!
নন্দনের সাথে প্রযুক্তির সংসার সাজালাম!
গুণ ও মাত্রার আত্মীয়তা দেখিয়ে দিলাম…

কিন্তু জটিলতার কথা আর বলো না!

ডান ও বাম
উপাসনা ও গবেষণা
ধ্যান ও যুদ্ধ
যন্ত্র ও মন্দির
মুল্লা ও মদ্যপ
চারদিক থেকে
যার যার বিবরের দিকে
আমার
হাতপাধড়বুকচোখমুখমাথাঅস্তিমগজ ধরে
এলোমেলো
টানতে টানতে
আমাকে খান খান করে দিতে চায়!

সঙ্কট / মুসা আল হাফিজ

অসুখের মতো কামড়ে ধরা এবং সুস্থতার মতো পলাতক
তোমাকে মস্তিস্কের মতো কার্যকর করতে চেয়েছিলাম
কিন্তু হুজুগের কার্য ছাড়া কিছুই তুমি নিতে রাজি নও!

তোমাকে বিচারশীলতার মতো প্রার্থিত করতে গিয়ে দেখলাম
কীভাবে তুমি সৌভাগ্যের মতো কামনা করছো স্থূলতা!

সৌভাগ্য তাই তোমাকে মৃত্যুসমান প্রতিপক্ষ ভেবে
যখন পালাচ্ছে, তুমি নিকটবর্তী দুর্ভোগকে ডাকছো প্রিয়তমা!

আমি তোমাকে একটুকরো গোপন কাগজে
দিলাম একগুচ্ছ পরিকল্পনা
তুমি কাগজের টুকরোকে কেজির দরে
বিক্রি করা যায় না বলে বিমর্ষ হয়েছো!

বলছো, কী দিলাম তোমাকে!
কিছুই না, এমনকি বিক্রয়যোগ্য কোনো কাগজও না!

তোমার অসন্তুষ আমার প্রতি।
আমি দৃশ্যমান ফেনার বদলে অদৃশ্য মুক্তো কুড়াতে বলেছিলাম!
বলেছিলাম ঘোড়ার শক্তি দোলানো কেশরে নয়, কলিজা ও খুরে!

কিন্তু তোমার দরকার ফেনা, যা ঢেকে ফেলে উপকূল
তোমার চাহিদা কেশর, যা দেখে বলা হবে, এই দেখো পৌরুষ!
এমনকি খুর না হলেও চলে, কলিজা পচে গেলেও চলে!

বলেছিলাম, সিংহের ছবির চেয়ে জীবিত বিড়ালছানা শক্তিশালী!
কল্পনার সাম্রাজ্যের চেয়ে বাস্তবতার একটু উঠান অধিক কার্যকর!

কিন্তু তুমি এতে নিজের ক্ষুদ্রতা কল্পনা করে শঙ্কিত!

তোমার সাথে আমার এতো দূরত্ব কেন বলো?

তোমাকে আমি যতোই ভালোবাসছি
তোমার কাছে হয়ে যাচ্ছি নিবিড় প্রতিপক্ষ!

দেহ ও আত্মা / মুসা আল হাফিজ

সবুজের তুলিতে আঁকা মেঠোপথ মাড়িয়ে
যাচ্ছি অশেষপুরে কালের পথিক
সহসা বৃক্ষের কান্না , শোকাতুর হাওয়া
পথে এক ক্ষীণতোয়া দুঃখিত জলধারা
উপেক্ষার স্বৈরাচারে ধুকে ধুকে বহমান
বুক ভরা বালু জুড়ে কালো সংবাদ

রাত্রির পথিক আমি বিষণ্ন নদীকে বলি
কী তোমার অসুখ ?

নদী বলে আমি তো হে চলমান
তোমারই জীবন । নিজের অসুখটাকে নিজেও জানো না?

মৃত্যুর কারণ নিয়ে! / মুসা আল হাফিজ

ঝড়ে উড়ে যাওয়া টিনের মতো নিখোঁজ
প্রশান্তির তালাশে আজ রাতে তুমি অরণ্যের বুকের গাছতলায় চলে গেলে।

সহসা বজ্রপাত হলো এবং হারালাম তোমাকে।
এখন আমার সামনে তুমিলাশ!

তোমার এ মরণ আমাকে মেরে ফেললে দু’টি মৃত্যু ঘটবে।
কিন্তু তোমার মরণ আমাকে জাগিয়ে তুললে তোমার মরণ জেগে উঠবে।

আচ্ছা, কে মারলো তোমাকে,হে আমার হৃদয়!

আমি বজ্রপাতকে প্রশ্ন করেছি।
সবাই বলছে,বাজ না পড়লে সে মরতো না।

বজ্রপাত বলেছে, তাকে মারার জন্যই বজ্রপতন হয়নি!
বজ্রপতনের মধ্যে সে এসে পড়েছিলো!

তাহলে মরণের কারণ অরণ্যে যাওয়া?
কিন্তু অরণ্যে যাওয়ার কারণে যদি মৃত্যু এসেছে বলি, তাহলে
সেই কারণের কী হবে,যে জন্য তুমি অরণ্যে গিয়েছিলে?

তাহলে তোমার মৃত্যুর কারণ হারানো প্রশান্তি!
কিন্তু প্রশান্তির জন্য তুমি অন্যত্র না গিয়ে অরণ্যে কেন গেলে প্রিয়?
তবে কি অগাধ সবুজ আর নির্জনতার জন্য গিয়েছিলে?
তোমার মৃত্যুর কারণ সবুজ আর ধ্যান ?

কিন্তু সবুজ তো সর্বত্রই ছিলো।
ঝোপঝাড়ে, পাখির পালকে, হরিণের বিস্তর ঘাসে!
কেন তুমি শীতল ছায়ার জন্য গাছের নিচে গেলে?
তাহলে তোমার মৃত্যুর কারণ গাছের ছায়া?

আমি যখন গাছের ছায়াকে প্রশ্ন করলাম;
প্রশান্তির সন্ধানে আসা বন্ধুর মরণের কারণ তবে তুমি?

ছায়া বলে, খোঁজে দেখো, কেন তাকে
এতো রাতে বেরুতে হলো প্রশান্তির লাগি!
তাহলে প্রশান্তির অনুপস্থিতিই তোমাকে হত্যা করেছে।

আমি এই অনুপস্থিতির সূত্রে ঘটনাচক্র বিশ্লেষণ করে
পলায়নপর প্রশান্তির উপর মৃত্যুর দায় চাপালাম।

বাতাসে মিশে থাকা প্রশান্তি প্রতিবাদ করলো।

তার দাবি, কাদের জন্য আমি নিখোঁজ হলাম,খোঁজো তাদের।
যারা আমাকে তাড়িয়েছে, তারাই মূলত দায়ী!

কে তাড়ালো প্রশান্তিকে? প্রেম না অপ্রেম?
কে তাড়ালো প্রশান্তিকে? খাদ্য না ক্ষুধা?
কে তাড়ালো প্রশান্তিকে? যুদ্ধ না নিরবতা?

রাজনীতি, খেলাধুলা, বিজ্ঞান, ইকমার্স
জাতিসংঘ, ইইউ, সিএনএন,বিবিসি
বেইজিং, মস্কো, ধর্মালয়, মোসাদ, ক্যাম্ব্রিজসহ
সর্বত্র পাঠিয়ে দিলাম জিজ্ঞাসাপত্র।
কেন নিখোঁজ হলো প্রশান্তি?

পুলিশ, চোর, পতিতা, পুরোহিত,রাষ্ট্রনায়ক
কবি,কৃষক, পাগল, বুদ্ধিজীবিসহ সবাইকে প্রশ্ন করলাম

চতুর্দিক থেকে শত শত ফাইল এসে জমা হচ্ছে।
আকাশে,বাতাসে,জলে,স্থলে মনে,দেহে বিশ্বময় ছড়ানো
অজস্র কারণ চিহ্নিত হচ্ছে।

এমেরু- ওমেরু জোড়ে ছড়িয়ে আছে তোমার মৃত্যুর কারণ।

কোনো কারণের উপরেই সবাই একমত হতে পারছে না।
প্রাচ্যের কারণের সাথে পাশ্চাত্যের বিবাদ।
দেহের কারণের সাথে মনের বিবাদ।
চোরের কারণের সাথে মালিকের বিবাদ।
জনতার কারণের সাথে শাসকের বিবাদ।

এসব বিবাদ নিয়ে জন্ম নিলো
কতো মতবাদ,কতো বিপ্লব,কতো রাজবংশ!
কতো জল্লাদ,কতো চিন্তক,কতো মহাবীর,কতো মুণী-ঋষী!

তোমার মৃত্যুর কারণ নিয়ে পৃথিবীর জলে,স্থলে,ঘরে- বাইরে
তত্ত্বে-কর্মে কী তুমুল তুফান বয়ে চলছে!

কারণে কারণে হচ্ছে যুদ্ধ ও মিত্রতা!

এদিকে সকল কারণের কারণ নিঃশব্দে সবই দেখছে!
কিন্তু আহা,তাকে তো দেখছি না!

ফানার প্রতীক্ষা / মুসা আল হাফিজ

মধ্যনিশিতে সত্ত্বার হিরক ফাটিয়ে উছলে উঠা হে রশ্মিধারা!
তোমার ঝংকারে বিবরের তল থেকে লাফিয়ে উঠছে রাত্রির নাশ
নিদ্রাকে ভস্ম করে দিচ্ছে গোলাপের দাউ দাউ পাঁপড়িদল
নেশাগ্রস্ত সময়ের ট্রাক উল্টে গেছে বৃক্ষের উচ্ছ্বাসে
জ্যোৎস্নার চেকপোস্টে বন্দী হয়ে গেছে নক্ষত্রের গুপ্তচর

হৃদয়ের কুচকাওয়াজে থরথর কম্পমান এই রাতে
অলৌকিক বজ্রপাতে ভেঙে গেলো আত্মনাশা বিলাসের পাথুরে পাঁচিল
অন্ধকারে ছলকে উঠলো সুতুমুল উজ্জীবন
যেনো সুমধুর কোনো বিস্ফোরণে পালিয়ে গেলো মৃত্যুর সন্ত্রাস

এইবার দেহের কবর ভেঙে সত্তার পুনরুত্থান কে ঠেকাবে ?

অস্তিত্বের প্রতিটি কণায় তরুণ নক্ষত্রের মতো জ্বলে উঠছে
পরমের নামের নামতা । রক্তের গহিনে তার ঘোরের ঘূর্ণি লেগে
সুবিমল যে জোয়ার সবেগে জেগেছে
তার তোড়ে জীবনের প্রাণ পেয়ে গেলে
আমি বলে আর কোনো প্রতিমা থাকবে না ।

আমিহীন উদ্ভাসনের শুদ্ধপ্রাণঝড়ে
মহাবিশ্বে জেগে উঠবো অন্তহীন অস্তিত্বের জ্বলন্ত তুর পাহাড় ।

জয়যাত্রার গান / মুসা আল হাফিজ

সাত শ ‘ কোটি মানুষের জীবন যাপনকে মাথায় নিয়ে
দুঃসময়ের পাথর ঠেলে আমাকে জাগতে হলো সচকিত জননীর মতো
আমাকে জাগতে হলো , কারণ পৃথিবী তালুক নয় কারো বাপের আর
মানুষ কোনো পণ্য নাকি যে তাকে নিয়ে দাবা খেলেছো পুঁজির স্বেচ্ছাচার ?

ইতিহাসের ললাট পেচিয়ে ফুঁসফুঁস করছো বস্তুর পুরোহিত !
সেক্যুলার শকুনে চড়ে আকাশের দিকে তেড়ে যাচ্ছো
ঔদ্ধত্যের শ্বেতনমরুদ !

চড়চড়ে বারুদে প্রস্তুত হচ্ছে বিশ্বায়নের খেত
রক্ত আর তেল দিয়ে সিক্ত বীজতলা
খুলির ‘ উত্তম সার ’ ছিটানো হচ্ছে খুবই আহ্লাদে
এখানেই চাষ হবে প্রগতির চারা আর
ভোগের স্বাধীনতা ! আহা স্বাধীনতা !

সূর্যের বিরুদ্ধে জারি হয়েছে ধৃষ্ট অবরোধ,
পৃথিবীর কোথাও সে অন্ধত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না
জীবনের আযান দিয়ে জাগাতে পারবে না কোন আত্মাকে
সূর্যের আযানই নাকি হামলাবাজ বিশ্বাস !

আমাকে জাগতে হলো কারণ ফরমান জারি করেছো
উদয়াস্তের কোথাও হাসতে পারবে না কোনো ফুল
স্বপ্নের ডালে বসে হরষের পাখিগুলো গাইতে পারবে না গীত
মোহরাঙ্কিত পানীয় ছাড়া জলের তরঙ্গ নিষিদ্ধ আর
কোনো নদী কোথাও নিজস্ব নিয়মে বইতে পারবে না ।

আমি উঠছি , কবরের মাটি ঝেড়ে
লাফিয়ে লাফিয়ে জাগছে জীবন্ত প্রোথিত সব শিশু

আমি ছুটছি , ইতিহাসের লোনা জলে ডুবে যাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ আর
কবিতার বারোটি পঙক্তির উপর দিয়ে বাধার সমুদ্র
পার হচ্ছে মানুষের মহাস্বাধীনতা

আমি ফুটছি , সূর্যের আয়াতগুলো জীবনের ঝংকারে
হাসির দানার মতো ছড়িয়ে পড়ছে প্রকৃতির প্রাণে ।

তারপর পৃথিবীটা প্রেমের সংসার

আমার নিঃশ্বাস থেকে কালের প্রান্তরে
জ্বলে উঠলো সুগভীর বিজয়ের শিখা
আমার বিশ্বাস থেকে সমস্ত আত্মার পাখি
মহাকালে জিকির করছে স্বর্গীয় মৌতাতে

একদা সমুদ্রতীরে / মুসা আল হাফিজ

উত্থাল সমুদ্রে যখন জাহাজ ডুবছে
ঝড়ের ফনা আর
ঢেউয়ের পাহাড়ের মাথায় মৃতুর দেওয়ানা দাঁত-
তখনই-

এক নাস্তিক স্পেনিশ চিৎকার করলো , ডায়ওস ডায়ওস! (Dios,Dios)
এক আস্তিক গ্রিক বলে উঠলো, থিওস, থিওস (Theos! Theos)
এক জাতীয়তাবাদী জার্মান ডাকলো, গট! গট! ( Gott! Gott!)
এক প্রকৃতিপুজারী ফরাসির হৃদয় চিরে বেরিয়ে এলো ডিউ! ডিউ! (Dieu! Dieu!)
জায়োনিস্ট ছিলো। বলছিলো, যেহোভা! যেহোভা! (jehovah! jehovah!)
ক্রুসেডার ছিলো। বলবান সেনা। সে ডাকছিলো ইলোহিম! ইলোহিম ( Elohim! Elohim!)
নারীবাদী ছিলো। আওয়াজ তুলেছিলো, গডেস, গডেস ( Goddess,Goddess)

তারা বেঁচে গিয়েছিলো সে যাত্রা এবং
তীরে ফিরেই বালুচরে দেখলো আমাকে;
প্রাচ্যের দাড়িওয়ালা এক তামাটে মানুষ।
উপকূলে সেজদায় ডুব দিয়ে আছি।
যেভাবে সচ্ছন্দে ডুবে সন্ধ্যা ও শেষরাত।

তারা পরিত্রাণের আনন্দে হল্লা করছিলো
কিন্তু আমি কেন সেজদায় লুঠিয়ে আছি, বুঝতে পারলো না!
পৃথিবীর বিবিধ দর্শন,যুক্তিবিদ্যা,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিকে চোখ রেখে
তারা আমাকে পরাজিত আদিম মানুষ বলে রায় দিলো।

সেজদা থেকে উঠলাম আল্লাহর নাম মুখে নিয়ে।
তারা ভয় পেলো! মুসলিম হানাদার!

এক জার্মান প্রশ্ন করলো, কাকে ডাকছো, ওহে?
বললাম, যাকে তোমরা না বুঝেই ডেকেছিলে সমুদ্রঝড়ে;
বাঁচার আশায়!

আমি ডাকছি তাঁকে
চিনে ও জেনে স্বার্থ ও শর্তহীন প্রেমের নিষ্ঠায়!

আগন্তুকেরা বিপন্ন হয়ে ডাকার অর্থ বুঝলো
কিন্তু
স্বার্থ ও শর্তহীন আমার ডাকের অর্থ না বুঝে
বিদ্রুপের হাসি হেসে যার যার নগরে চলে গেলো!

আমিও হাসলাম, বস্তুমানুষ,যাও বস্তুনগরে।
আমি তো আদি ও নিষ্ঠ হৃদয়নগর!

আত্মজীবনী / মুসা আল হাফিজ

ও পিতা!
ইউসুফের রক্ত ঝরিয়েছে তার ভাইগণ
নেকড়ের কোনো দোষ নেই!

ও ইউসুফ!
এরা তোমারই ভাই
যদিও নেকড়ের অধিক!

তোমাকে শেষ করার
আয়োজনে হয়তো
রয়েছে মহাশুরু!

যাও,
মৃত্যুকূপের অন্ধকারে
আছে মিসর জয়ের চাবি!

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: