নীচের ছবিটা জিম কেরি অভিনীত Me, Myself and Irene মুভির একটা দৃশ্য।

ছবিতে এই মুভির মূল চরিত্র চার্লি, আইরিন এবং একজন ট্যাক্সি ড্রাইভারকে দেখা যাচ্ছে। ট্যাক্সি ড্রাইভার নান চাকু দিয়ে চার্লিকে পিটাচ্ছে। পৌনে তিন মিনিটের যে ভিডিও ক্লিপের ছবিটা দেখা যাচ্ছে সেখানকার ডায়লগগুলো খেয়াল করে দেখা যাক।
Charlie: Excuse me, do you people take checks?
Limo Driver: Say that again. Do “we people” take checks? You mean a black man?
Charlie: No, no, no, no! God, no. Your company.
Limo Driver: Don’t give me that bullshit! That was a racist slur.
Charlie: No, it wasn’t. l would never. . .
Limo Driver: Tell you what, l’ll make it easy for you. Why don’t you just pay me in cotton or a cartload of watermelons? Or how’s about some fried chicken, ’cause you know black people love fried chicken !
Charlie: Hey, no, come on now.
Irene: What’s going on?
Limo Driver : This cat don’t believe a nigger knows how to cash a check! Ain’t that ’bout a bitch?
Irene: Charlie, l don’t wanna ever hear you use the N-word in this house.
Charlie: What! l never said anything remotely racist!
Limo Driver : Oh, so it’s a “little people” thing, then.
Charlie: No!
Limo Driver: You think just ’cause l’m small you can push me around? Come on, let’s boogie. l’m gonna give you a little lesson in low center of gravity.
আমার মনে আছে, অনেক আগে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে এক মাঠ জরিপের কাজে এক প্রত্যন্ত এলাকায় দুই সপ্তাহ ছিলাম। সেখানকার কাজ শেষ হলে ঢাকায় ফেরার আগে সেই এলাকার পাশের জেলায় আমাদের এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গেলাম। খোঁজ নিয়ে বুঝতে পারলাম সেই বন্ধুর বাড়ির আশেপাশে আমার ছোট ভগ্নিপতির এক বোনের বাসা। আমার বন্ধুদেরকে রেখে বিকালে আমি সেই আত্মীয়ের বাসায় গেলাম। সেই আত্মীয়রা আমাকে প্রচন্ড যত্নআত্তি করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ আমাকে সেখানে দেখে খুব অবাকও হয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আমার বন্ধুর পরিচয় দিয়ে যখন বললাম আমি তার বাসায় বেড়াতে এসেছি তখন ভদ্রলোক বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন- বলো কি? ওরা তো নম শুদ্র! বৃটিশ বা পাকিস্তানী আমলে এটা হয়ত খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। কিন্তু এই সময় এসেও আমার এক শিক্ষিত আত্মীয়ের মুখে এই কথা শুনে আমি হতবাক হয়েছিলাম। দুঃখ জনক হলেও সত্য আমাদের দেশের মানুষ কারনে হোক আর অকারনে হোক অনেক শব্দ ব্যবহার করে সেগুলো যে অবমাননাকর হতে পারে সেই বোধ ছাড়াই। আমার পরিচিত এক দম্পত্তির নিজেদের ছেলে মেয়ে হয়নি। তারা ছোট থেকে এক মেয়েকে লালান পালন করে আসছেন। মেয়ে তাদেরকে বাবা-মা বলে, আরা তারাও মেয়েকে নিজের সন্তান বলেই পরিচয় দেন। কিন্তু আমি দেখেছি আত্মীয় স্বজনেরা সেই মেয়েকে ‘পোষা মেয়ে’ বা ‘পালিত মেয়ে’ ছাড়া সম্বোধন করতে পারে না।
এভাবে আমাদের দেশের সাধারন মানুষ যারা মালাউন, বামন, কানা-খোড়া-নুলা, হিজড়া শব্দগুলো অবলীলায় ব্যবহার করে তাদের পক্ষে জিম ক্যারির এই মুভির ট্যাক্সি ড্রাইভারের রাগের কারন বুঝতে পারা কঠিন। তারা এটাও বুঝবে না চার্লি কেন দাড়িয়ে দাড়িয়ে এই ক্ষর্বাকায় মানুষটার কাছে মার খায় আর তার নববধু আক্রমনকারীকেই সমর্থন করে। এখানে দেখানো পুরো বিষয়টা হচ্ছে বর্নবাদী আচরন নিয়ে। বর্নবাদের কথা শুনলেই আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষের মনে পড়ে দক্ষিন আফ্রিকার কথা। সেখানকার সাদা চামড়ার মানুষ কালো নিগ্রোদের সাথে যে আচরন করেছে তা এবং কালোদের অধিকার আদায়ে নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে সংগ্রামের কথা ইতিহাসের সুপরিচিত অধ্যায়। কিন্তু বর্তমানে উন্নত বিশ্বে এবং আমাদের কর্পোরেট জগতে বর্নবাদ আরো অনেক ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। আমাদের বিজনেস স্কুলগুলোতে বিজনেস কমিউনিকেশন কোর্সে সেগুলো পড়ানো হয়।
বর্তমান শিক্ষায় কালোকে কালো, কানাকে কানা, পঙ্গুকে পঙ্গু বলে উল্লেখ করাটাও বর্ণবাদী (Racist বা Sexist) আচরন। এর মূল কথা হচ্ছে এমন শব্দ ব্যাবহার করা যাবে না যাতে লিঙ্গ, বর্ন, জাতি, ধর্ম, শারিরিক বৈশিষ্ঠ বা অন্য কোনভাবে মানুষের মাঝে কোন রকম বিভেদ প্রকাশ পায় বা মানুষকে হেয় করা হয়। এজন্য এমনকি ডিকশনারির কিছু অতি প্রচলিত শব্দকেও বিজনেস কমিউনিকেশনে এখন ঘুরিয়ে লেখা হয়। যেমন, শুধুমাত্র man শব্দটার ব্যাবহার এড়াতে Policeman কে বলা হয় Police Officer, Businessman কে বলা হয় Business Person । কারন, man শব্দটার মাধ্যমে লিঙ্গ বৈষম্য প্রকাশ পায়। আমাদের দেশে মানুষ যেমন হিন্দু ধর্মাবলীদেরকে অবলীলায় মালাউন বলে থাকে, আমেরিকাতে তেমন কাউকে ইহুদী বললে সেটা কঠিন অপরাধ বলে গন্য হয়। সেদেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউকে ইহুদী বলে সম্বোধন করলে তার স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল হবে এটা নিশ্চিত। জেল জরিমানাও হতে পারে। পাঠকের মনে থাকার কথা, যে অস্টেলিয়ান ক্রিকেটাররা শ্লেজিংয়ের জন্য বিখ্যাত সেই অস্ট্রেলিয়ারই ক্রিকেটার এ্যান্ড্রু সাইমন্ডকে ভারতের হরভজন সিং ‘মাঙ্কি’ বললে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া হরভজন সিংয়ের বিরূদ্ধে বর্নবাদী আচরনের দায়ে হৈ হৈ করে উঠেছিল। ২০০৮ সালে সিডনি টেস্ট চলাকালে সেই বিতর্কিত ঘটনায় ভারতীয়রা দাবী করে যে হরভজন সাইমন্ডকে বাদর বা ‘মাঙ্কি’ বলেইনি। সে হিন্দিতে এমন কিছু বলেছিল (এক কার্টুনে পড়েছিলাম,‘তেরি মন কি’) যা ‘মাঙ্কি’র মত শুনতে। কিন্তু সাইমন্ড আর অস্ট্রেলিয়ানদের দাবী ছিল বাদর বলে হরভজন তার আদিবাসী জাতিসত্তার প্রতি কটাক্ষ করেছে। অস্ট্রেলিয়াতে কাউকে Aborigin বা আদিবাসী হিসাবে উল্লেখ করাও ‘রেসিস্ট’ বা বর্নবাদী আচরন।
বলাই বাহুল্য বর্নবাদী আচরনের এই উচ্চ মার্গের ব্যখ্যা উন্নত শিক্ষা না থাকলে বুঝতে পারা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের অনেক মানুষের উন্নত শিক্ষা তো বটেই ন্যূনতম শিক্ষারও অভাব আছে। কিছুদিন আগে জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুমাইয়া শিমুর বিয়ের ছবি প্রকাশিত হলে তাঁর স্বামীর চেহারা নিয়ে অনেকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় কুৎসিত সব মন্তব্য করে। এরও আগে আমাদের জনপ্রিয় ক্রিকেটার নাসির হোসেন তাঁর নিজের বোনের সাথে ফেসবুকে এক ছবি পোস্ট করলে সেখানে মানুষ অশ্লীল মন্তব্য করতে থাকে। এসব ঘটনায় আমাদের অনেকেই বিশ্ময় প্রকাশ করলেও আমি অন্তত অবাক হইনি। এইসব মন্তব্যকারীদের শিক্ষা দীক্ষার স্তর তো বটেই এমনকি আমাদের রাস্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত শালীনতা বোধের অভাবের সাথে মিলিয়ে দেখলে এসব ঘটনাতে তেমন অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা দেশের দুই প্রয়াত রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে যে ভাষায় মন্তব্য করেন তা দুঃখজনক। সাহবাগ আন্দোলনের সময় আমাদের অনেক গ্রহনযোগ্য এবং সম্মানিত বুদ্ধিজীবি, লেখকরাই তরুন পর্ন লেখকদের নেতৃত্বে মিছিল করতে কোন সংকোচবোধ করেননি। এভাবে বর্নবাদ, অশ্লীলতা, ঘৃণা এগুলো জাতীয় পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে।
সাধারনত বর্নবাদের শিকার হয় বিশেষ করে সংখ্যা লঘু আর দুর্বল সম্প্রদায়। আমার কাছে এটা একটা নির্মম পরিহাসের বিষয় বলে মনে হয় যে, বাংলাদেশে সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমান আর তাদের ধর্ম ইসলাম বর্নবাদী আচরনের সবচেয়ে বড় শিকার। এদেশে যে কোন সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের বিষয়ে কটুক্তি করলে তা বৈষম্যমূলক আচরন হিসাবে মিডিয়াতে ঝড় তোলে। এটা যে বৈষম্যমূলক কাজ তা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান আর ইসলামকে মনের সাধ মিটিয়ে গালি-গালাজ করলেও এদেশে তা সেরকম অফেন্সিভ হিসাবে দেখা হয় না। এদেশে দাড়িওয়ালা নামাজী ছেলেদেরকে ‘হুজুর’ বলা হয়। শব্দটা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তুচ্ছার্থে ব্যবহার করা হয়। এটা যে ভাষাগতভাবে আধুনিক শিক্ষার মানদন্ডে বর্নবাদী আচরন কেউ তা মনেই করে না। একইভাবে আলেমরা ‘মোল্লা’ বলে পরিচিত। পর্দানশীল মহিলাদেরকেও পরিচিত মহলে হুজুর বা বোরখাওয়ালী বলা হয়।
যেসব মুক্তমনা পর্দা প্রথার বিরোধীতা করতে গিয়ে হেজাব পরিহিত মেয়েদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে থাকে তাদের কাছে স্বেচ্ছায় পর্দা করে এরকম অসংখ্য মুসলিম নারীর স্বাধীন ইচ্ছার মূল্য কোথায়? ক্রিকেট বা ফুটবল স্টেডিয়াম থেকে টিভি ক্যামেরায় সম্প্রচারিত খেলার মাঝে আমরা এরকম অনেক দেখেছি যে দর্শকদের মধ্যে যুবতীরা ক্যামেরার সামনে বুকের কাপড় উঠিয়ে বিশ্বের দর্শকদেরকে তাদের স্তন দেখার সুযোগ করে দেয়। ছেলে মেয়েকে, ছেলে ছেলেকে, মেয়ে মেয়েকে স্টেডিয়ামের ভিড়ে বসেই চুমু খায়। এসবের জন্য সেসব দেশে কোন ছি ছিক্কার ওঠে না। কোন ধারাভাষ্যকার এইসব দৃশ্য প্রচারের সময় যদি সেগুলো নিয়ে খারাপ মন্তব্য করে তাহলে ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরোধীতা করায় তার চাকুরী যেতে পারে। এই সব কিছু মেনে নিয়ে আমি শুধু প্রশ্ন করতে চাই সম্পূর্ন স্বেচ্ছায় কোন নারী পর্দা করার সিদ্ধান্ত নিলে তাকে নিয়ে কটুক্তি করলে ব্যক্তি স্বাধীনতার ক্ষতি হয় না?
হোসেন এম জাকির
Like this:
Like লোড হচ্ছে...