পাষাণ সীমার কাঁটে খঞ্জরে ইমামের শির-
কাঁদে দুলদুল, কাঁদে মা ফাতেমা জান্নাতে বসে;
বুক চাপড়ায় কুলমাখলুক সারা পৃথিবীর,
আবার জগতে এলো কারবালা, হায়, কার দোষে!
শহিদের খুনে বুড়িগঙ্গার পানি হলো লাল,
ধানমন্ডির রাজপথ গেল ডুবে সেই খুনে;
ঘুঘুরা বিষাদে হিজলের ডালে কুটছে কপাল,
প্রাণের পতাকা খামচে ধরেছে প্রাচীন শকুনে।
হায়, শেষ রাতে ঘুঘু কেন কাঁদে ঘুম থেকে উঠে?
কোথা থেকে এলো পুরনো শকুন রাতের শহরে?
এ গলি সে গলি দুলদুল যেন যায় ছুটে ছুটে,
ইমামকে খুঁজে না পাওয়ার শোকে মাথা কুটে মরে!
‘হায় রে মুজিব! খোকা রে আমার!’ বলে কাঁদে কে ও?
টুঙ্গিপাড়ার গোর থেকে উঠে এসেছে এ লোক;
দরবেশপিতা শেখ লুৎফুর রহমান যে ও!
প্রাণাধিক প্রিয় পুত্রকে খোঁজে তাঁর দুটি চোখ।
পুত্রকে খোঁজে পিতা, দুলদুল খুঁজছে ইমাম;
বাতাস ভিজেছে বোবা কান্নায় আর হাহাকারে;
বাংলার মাটি কেঁপে কেঁপে উঠে জপে এক নাম
‘মুজিব! মুজিব!’ ছোটে এই নাম ইথারে ইথারে।
ফুল জেগে উঠে বলে বাতাসকে, ‘কে মারলো তাকে?’
পুঁছে বাতাসকে পদ্মার পানি, ‘কে করলো খুন?’
হরিণশাবক একই জিজ্ঞাসা করে তার মাকে;
একই উত্তর: ‘সীমার! জাহান্নামের শকুন।’
এ-কি জিঘাংসা-সোনার বালক, সে শেখ রাসেল
যার চাঁদমুখ দেখলে বাঘও গলে যায় স্নেহে-
তার কচি বুকে ছুঁড়লো সীমার বিষাক্ত শেল,
রক্ত-ফোরাত দিলো যে বহায়ে তার ছোট দেহে!
বিপুল মৃত্যু দেখে ছুটে গিয়ে চৌকির নিচে
নিয়েছিল ঠাই; খুঁজলো তাকেও হায়েনার দল।
বললো বেচারা ‘মেরো না আমাকে!’ চোখে তার জল;
তবু পাষাণেরা ফেললোই মেরে, যেন কোনো বিছে।
তোমার রাসেল মরে গেছে, পিতা; ভাগ্যিস তুমি
দ্যাখোনি দুচোখে! কে সইতে পারে এমন করুণ
মৃত্যু জগতে! হঠাৎ এদেশ যেন মরুভূমি
যেখানে নামে না বৃষ্টি কখনও, ঝরে শুধু খুন।
হায়, কোথা গেল বাংলার সেই দামাল ছেলেরা-
যাঁর ডাক শুনে লাখে লাখে সব এসেছিল ছুটে-
কঠিন আঘাতে ভেঙে ফেলেছিল হায়েনার ডেরা,
মানুষের মুখে মুক্তির হাসি উঠেছিল ফুটে
যাঁর ডাক শুনে ঝাঁপ দিয়েছিল অগ্নিসমরে
কৃষক মজুর আর ছাত্ররা এই বাংলার;
তারপর তারা বীরের মতন ফিরেছিল ঘরে,
দেশমাতৃকা পেয়েছিল ফিরে স্বাধীনতা-হার-
কোথা গেল তারা? জেগে ওঠো ফের সোনার ছেলেরা
পিতার খুনের প্রতিশোধ নিতে ধরো তরবারি;
শত শকুনের নখের আঁচড়ে দ্যাখো ছেঁড়া ছেঁড়া
প্রাণের পতাকাÑযা দেখার আগে মরে যেতে পারি।
আমার জনক বঙ্গবন্ধু, মুজিব, মহান;
তাঁর রক্তের কসম, আমরা ফিরবো না ঘরে-
শোনো হায়েনারা বাংলার বুকে গায় ওই গান,
ওই শকুনেরা ঠোঁট নেড়ে নেড়ে উল্লাস করে
আবার বাতাসে ভাসুক সে ক্রুর মৃত্যুশপথ,
আবার আসুক ফিরে সে পুণ্য যুদ্ধের বেশ:
আমার ঠিকানা একাত্তরের লোহুরাঙা পথ;
এই কারবালা নয় হে বন্ধু আমার স্বদেশ।
১৭.৬.২০১৬ সিরাজগঞ্জ
Like this:
Like লোড হচ্ছে...