অঝোর ধারায় বৃষ্টি এলো / সাইফ আলি

অঝোর ধারায় বৃষ্টি এলো, বৃষ্টি এলো ভোরে
আমি তখন শিশির মাখা পাতা
তোমার গালে আলতো আলো দেখছি ঘুমের ঘোরে
তুমি তো নও, আমার খেরোখাতা!

কচলে দু’চোখ আবার তাকাই, দেখি
আমার যতো কাব্য লেখালেখি
সব পুরোনো; নতুন কিছু এলো!
শব্দগুলো তোমার চুলের মতো
অন্ধকারে ভীষণ এলোমেলো
তবুও তার মিষ্টি মধুর ঘ্রাণে
ক্রমাগত টানতে থাকে, টানে।

২৮.০২.২২

এই শহরে বৃষ্টি নামার আগে / সাইফ আলি

এই শহরে বৃষ্টি নামার আগে
প্রখর রোদে খাক হয়ে যায় মাটি
শহরবাসির সহজ কবিতারা
বারুদ-গোলায় ফুসতে থাকা ঘাটি!
এই শহরে বৃষ্টি নামার আগে
মৃতের প্রেমে বুদ হয়ে যায় হাওয়া।

ভোরের বেলা তীব্র মোরগ বাগে
কেবল কিছু গাছগাছালিই জাগে
শহর তখন মৃত সাপের দেহ
ঠান্ডা এবং বিষণ্ন স্যাতসেতে।

এই শহরে সূর্য করে দেরি
বাতাস কেবল দুঃখ ফেরি করে
শহরবাসি জাগবে বলে ঘুমোয়
ঘুমের ঘোরে শহস্রবার মরে।

হঠাৎ শুনি একটা নতুন শোর-
খুব সকালে বৃষ্টি মেখে কারা
দিচ্ছে পুতে সব দালানের পিঠে
একটা করে জাগরণের চারা।

২৭.০৪.২০

কোলাহল থেমে গেলে / সাইফ আলি

কোলাহল থেমে গেলে নেমে এলে স্নায়ুর দহন
ফিরে এসো, যতবার খুশি; তোমারই তো ঘর।
একসাথে হাত ধুয়ে খেতে বসে যদি দেখো নেই
ভেবো আড়ালেই
লুকিয়েছে মজা করে প্রিয় গুপ্তচর!
আর যদি নাই পাও, ভুলে যাও, ভাবো সেও পর
হয়তো আপন ছিলো, থাকে অনেকেই
যারা আজ সত্যি কেউ খুঁজে দেখো ধারেকাছে নেই।

২৬.১১.১৯

অঝর বৃষ্টি হয়ে নামুক কবিতা / সাইফ আলি

:কবিতার মেঘ এলো
এলোমেলো
উড়লো খানিক
নাগরিক প্রেমে তবু বৃষ্টি এলোনা।

ছাতা হাতে বের হলে তুমি
ভয় পাও? বৃষ্টি মাখোনা?
কবিতারা ঝড় হয়ে এলে
তখন?

:এখন কবিতা শুধু রোদ
দারুণ কঠিন তাপে হৃদয়ের জমাজনি চৌচির ফেঁটে,
তোমার পকেটে যদি কবিতার মেঘ থাকে প্রিয়
মেলবোনা ছাতা।

‘এবার বৃষ্টি হয়ে নামুক কবিতা
অঝর বৃষ্টি হয়ে নামুক কবিতা…’

শহরবাড়ির ছাদে / সাইফ আলি

শুনতে কি পাও শহরবাড়ির ছাদে
বৃষ্টি নামে বৃষ্টি কাপে তুমুল প্রতিবাদে
দু’ফুট গলির জীর্ণতাতেও শ্যাওলা জমে
সবুজ রঙের বিপন্ন সংবাদে
বৃষ্টি নামে বৃষ্টি কাপে তুমুল প্রতিবাদে।

বৃষ্টি এলেই ভালো / সাইফ আলি

বুকের মধ্যে বা-পাশটাকে ঘিরে
কেমন যেনো মেঘ জমেছে কালো
মেঘ জমেছে বৃষ্টি বুঝি আসে
বৃষ্টি এলেই ভালো।

বুকের মধ্যে বাতাস এলোমেলো
ছুটছে কেমন আসবে নাকি ঝড়;
উড়বে নাকি কান্না হাসির
শুকিয়ে যাওয়া পুরোন চালার খড়?

রাত্রি নিঝুম হয় / সাইফ আলি

রাত্রি নিঝুম হয়
উঁকি দেয় চাঁদ
কারো বা আবাদ হয় প্রেম
কারো বরবাদ-

দরজায় খিল
বাইরে মিছিল জোনাকির!
জানালায় মাথা রাখে শিউলির ঘ্রাণ
কুয়াশার জাল
কালচে আঁধার
রূপালী চাঁদের গায়ে
দাগ কাটে বাবলার ঝোপকাটা ডাল।

কারো কারো চোখে নেই ঘুম
রাত্রি নিঝুম হয়-
মৃত্যুর ভয়
জীবনের ভয়
যাপনের জোড়াতালি ভয়;
সংশয় বাড়ে-
যেভাবে বাড়তে থাকে পুজির হিসাব
চক্রবৃদ্ধি সুদ
ইমারত, ইট, কাঠ, বালি…
কারো কারো পেট থাকে খালি
গ্যাসট্রিক হয়
আলসার হয়…
তবু এই রাত
ব্যর্থতা লুকোনোর আঞ্জাম দেয়
শ্বাস ফেলে কাঁন্নার অনুমতি দেয়।

রাত্রি নিঝুম হয়
দরজায় খিল দেয় কেউ
কেউ কেউ রাস্তায় হাঁটে
কেউ কেউ গান গায়, হাঁটে
কেউ কেউ নিজেকে পোড়ায়…

তুমি কুয়াশার মতো নামো / সাইফ আলি

এই রাত আর এই তারকার ছায়াবৃ্ত্তে
আমি জোনাকির প্রেম ভিখারি
তুমি জোছনার নীল জামা গায় চরো মহাকাশ
আহা শিকারী!

তুমি ঢেউ ঢেউ তুলো মেঘেদের মানচিত্রে
গাড়ো পতাকার প্রিয় অধিকার;
আমি খালি পায় হাঁটি রিক্তের নিয়ে করুণা।

তুমি কুয়াশার মতো নামো এই ছোটো পাড়াগাঁয়
আমি ঘাসফুল হয়ে মাখি সেই প্রিয় অনুদান
তবু আমিহীন তুমি একা নও পারো বলতে?

মূলতো আমি এক ফুলকে ভালোবাসি / সাইফ আলি

মূলতো আমি এক ফুলকে ভালোবাসি
যে ফুল বাগানের ফুল না, বুনোফুল;
যে ফুল ফোটে রোজ গহীন জঙ্গলে
এবং সৌরভে মাতায় চারপাশ।

বাতাস গান ধরে পাতায় পাপড়িতে
এবং ঝর্ণার শীতল স্রোত তাকে
শোনায় প্রতিদিন প্রেমের সংলাপ;
আর সে ফুল শুধু ছড়ায় সৌরভ।

মূলতো আমি এক ফুলকে ভালোবাসি
সে ফুল ফোটে রোজ গহীন জঙ্গলে।

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: