ভুলে গেছি / আবুল হাসান

ভুলে গেছি, কাকে যেনো ভুলে গেছি
উদাস সুরে আর ডেকোনা ঘুঘু পাখী!
দুপুর গড়ায়, মনের পারে যাকে যাচি
তার অভাবে তোমার ডাকও চরম ফাঁকি!

জেনে গেছি সবই যেনো জেনে গেছি
কেউ এখানে বুঝবেনা সেই ধুমল স্বর!
ঝরা পাতার কান্না নিয়ে মধুর মাছি
পুড়ে গেছে, হায়রে জাগে ক্ষোভের ঝড়!

আঁচড় দিয়ে ঘুঘু পাখী রক্ত খুড়ি
প্রশ্বাসে কি প্রেমের মতন ব্যথা আসে?
হৃদয় জলায় শুষ্ক পাথর, কঠিন নুড়ি
সেখানে আর ঘুমেলা মাছ কখন আসে?

দূরত্বরে তোমায় কি আর বাঁধতে পারি,
রজ্জু আমার ছিড়ে গেছে, কাল বেলা
দীর্ঘ সময়, হায়রে বয়স, এখন তোরই
ক্লান্তি চুষে, যাচাই করি প্রেমের খেলা!

নেবু গাছের পাতায় তুমি চড়ুই পাখী
বাসা বাঁধার স্বপ্ন আঁকো দু’চোখ পুরে?
প্রেমের বাঁধন চিরন্তনই, জানো নাকি?
যদি হৃদয় না ভাঙ্গে বাঁধ গিয়ে দূরে।

তবুও তো জানি / আবুল হাসান

তবুও তো জানি সুরেসা তোমার
নীহার পালকে ঠোঁট গুঁজে একা
একটি ময়ূর কেঁদেছিল সেই রাতে!

ব্যথার তীরের ফলায় বিদ্ধ আর্ত হৃদয়
অধীর আকাশ, অবুঝ তারার রংছুট
যত ছিন্ন গোলাপ ঝরেছিল তাঁর সাথে।

তীক্ষ্ন পাঁজরে মৌ নেশা আর
উষ্ণ রক্ত ফুটিয়ে কেবলি দুরু যাতনার
দলিত প্রহরে তারা

ভীরু নির্বীজ অশ্রুর মতো
সুরেসা তবুও ঝড়ের হাওয়ায়
তোমার হাতেই সঁপেছিল স্মৃতি ঢেরা।

চোরাবালি তার সাগর লোনায়
শুক্তি প্রবালে ছড়িয়ে নীরব
জড় চিহ্নের গভীর দানের ক্ষত

ঢেউ তোলা দ্বীপ রোদের অমিলে
গাঙ্গচিল ডাকা নীলের নিঃসীমে
রেখেছিল তার বেদনা অবুঝ যত!

সুরেসা তোমাকে হালুম আশার
ব্যাঘ্রের নখে আহত না কোরে
হন্যে সুখের ভিন্ন সুরেই যারা

রেখে গেল এই বিদ্যুত-আলো
সংজ্ঞা হারানো তীব্র আঁধারে
জানো নাকি তুমি কেন ফিরে গেল তারা?

উজ্জ্বল সেই সূর্যের মতো
স্বচ্ছ হাসির ভিয়ানে ভিজিয়ে
ভীরু রং আর রং-এর মেদুর কণা

আপন করার নিবিড় ছায়ায়
স্বতঃসিদ্ধির উষ্ণীয় স্নেহে
শতদলে আঁকে উচ্ছল আল্পনা।

রোদের পিপাসা জড়িয়ে এখনো
সূর্যের আলো অনন্য সুরে
সঘন সবুজ তৃপ্তির ফুলে ফোটে;

আবেশে মুখর মৃন্ময়ী রাগে
নীল কমলের ঘুমেলা পাপড়ি
জলডুবু আর ডুবহারা জল সংখহৃদয়ে লোটে!

সুরেলা যখন ছড়িয়ে যাবার
রেনুর মতন পরম পরাগে হাঁ হাঁ স্বরে
শুনি গোলাপ পাপড়ি কাঁদে;

সুরেসা তখন রক্তের দামে
মুগ্ধ চোখের স্মৃতি নিঃশ্বাসে
ক্লান্ত ময়ূর আহত তোমার ফাঁদে!

সমর্পণ / আবুল হাসান


সেই তো আমি দাঁড়িয়েছিলাম প্রভু
ঘুমের বেশে শয্যা আমার চরম আলুথালু
তোমার পদপাতে আবার চাই যে সংসার,
ঈশ্বর হে শর্ত কোরে বোলতে হবে আরো?

রক্তস্রোতে সম্মোহনী ভয়ের দারূন জরা
পুষ্পায়িত হতাম আমি, হতেও পারি তবু,
পুষ্পশাখে ঈশ্বর হে তোমার সাথে যদি
নাই-ই ফোটাই সমর্পিত পুষ্পরেনুটিরে?

হো হো করে হাসতে গিয়ে দুঃখ কাঁপে যার
রে অনন্ত পুষ্পগুচ্ছ রাখবো কোথায় বল?
সংকুচিত হাওয়ার ত্রাসে মরণ আহা মরণ,
তোর বুকে কী শীতল কথার সম্মিলিত দাগ?


বহুবার বহু পুরস্কার, হে আমার সুবোধ নিয়তি
তোমার সুমেধ যজ্ঞ নিয়ে এল প্রেমের আগুন।
তবে কি এবার তুমি বুকে বুকে নিবিড়ে জড়াবে?


যন্ত্রণার উর্ধ্বশ্বাসে ক্লান্ত হাওয়া, সমুদ্রের ঢেউ উন্মনা
তোমার পুষ্পল প্রেমে, হে নিয়তি ঈশ্বরের ঘ্রাণ কি রাখোনা?

প্রাগৈতিহাসিক / আবুল হাসান

লোলুপ শকুন তবু আজও অমর এই পৃথিবীর সমস্ত চুঁড়ায়
আজো চারিদিক লোলজিহ্বা হানা দেয় পিশাচের সুখে
ভেঙ্গে দেয় নৈমত্তিক স্নেহ প্রীতি কিংবা কোন সুললিত কথার ঝঙ্কার
যেন বন্ধ ঘন্টা বাজানোর পর সেই সাংকেতিক মানুষের মুখ
বাদুড়ের চোখে ফেরে, সূর্যের চাকায় অতঃপর উদ্ধৃত রিপুর
টংকার, অতিলোভী রক্তের শিরায়
গেঁথে দেয় লোভস্পর্শ, উথাল পাথাল।

নির্মম পুরুষ হাতে নিঃসর্গ কাটায় যেনো কারো আক্রমনে
শবের চিৎকার ঘোরে বেহায়া শংকায়! ভয়ঙ্কর ক্রোধ
ঘুরে ফিরে নিয়ে আসে বিলোল হত্যার দাগ!
পৃথিবীর বেষ্টিত সড়ক, পিশাচের পদাঘাতে কাঁপে!
তবু মিছে মিছি অমৃতের গানে, এখানে ওখানে
সহিষ্ণু চন্দ্রে কিংবা সমৃদ্ধ সকালে জাগে দেবতার আনন্তিক হাসি!

পরিতৃপ্ত পারিষদ তবু হায় উচ্ছিষ্ট ভাঁগাড়ে খোঁজে
হারামণি, রত্নমণিকর!
ভাসিয়ে মড়ক আর পূঁজ রক্ত হলাহল নীলাভ শৈবালে
আজো তাই নীলকণ্ঠ সামুদ্রিক শবে
রক্তের সঞ্চয় ভাসে পবিত্র ভাষায়!

বিশাল মাছের চোখে তবু জাগে শবের পিপাসা!
প্রাগৈতিহাসিক শব জানেনা ফসিল কিংবা
পাথরের পাললিক স্তর! জানে সংযুক্ত নাভির শ্বাস
জ্যোতিচিহ্নে আদিম শকুন!
যার ঠোঁটে অমর ভাঁগাড় আর অলৌকিক দেহ কাঁপে
মুমূর্ষুর নিহত আক্ষেপে!

সব থেমে গেলেও / আবুল হাসান

শব্দের তরঙ্গে সব কাব্য লেখা হয়ে গেলে
সব কাব্য অবসান হলে যদি অতিষ্ঠ আঙ্গুলে
বাজে তোমার কবিতা, প্রপাতের ধ্বনি যদি থেমে গিয়ে
শুধু থাকে তোমার চোখের তলে অতলান্ত জলের উচ্ছাস

আর রাত চাপা তারার আগুনে, পুড়ে গেলে নির্জতের ফিতে
ফিরে গেলে সব টিয়া বনের মর্মরে, আমার অস্তিতে জানি
কেউ যেন খুঁজে দেয় পথিক চুঁড়ার মত তোমার কবিতা!

যখন ফসিল ছেনে নিয়তির নিরক্ত কফিনে
রক্তস্রাবী সন্ধ্যারা ব্যাহত সে মিথুনের ঢালে
দুয়ারে, চৌকাঠে দ্যাখে অবিচ্ছিন্ন আদিম পিপাসা

যখস কার্নিশে ঝরে ঝুলে পড়া পূর্ণিমার ভাষা
তখন টুকরো ঘ্রাণে কেউ যেন আমার দু’হাতে
ছড়ায় তোমার সেই গ্রীবার উত্তাপ!

কিংবা সিঁড়ির কোণে নূয়ে পড়া পাথরের গায়
যদি ঝরে অতিরিক্ত মেঘের ঝঙ্কার
বিদ্যুতের রাগী চোখে দেখে নিয়ে রাতের দুয়ার
তোমাকে সঞ্চয় কোরে কেউ যেন রেখে দ্যায়
আমার এ স্নায়ুর ভাঁড়ারে!

শুনিনি টংকার, কিংবা দেখিনিতো রাস্তার শয্যায়
কোন মাতালের লোলুপতা অথবা নিষ্ঠায় বুঝিনিতো
প্রথম মৃত্যুর কান্না রাত জাগা কুকুরের মুখে।

যখন কাব্য সব থেমে যায় শব্দের উল্লোলে
নিহত রৌদ্রের শব মিশে যায় অলৌকিক দেহে
যখন সমুদ্র, নদী, নিস্তরঙ্গ স্বরের আঘাতে
ধুয়ে নেয় আজন্ম প্রোথিত পলি, বিলোল নেশায়
তখনও তোমাকে নিয়ে গড়ে ওঠে নতুন কবিতা!

প্রোস্বর / আবুল হাসান

তুমি তো একটি শব্দ, তবু এত মেদুর সলাজে
তোমার মনের ওড়না, লজ্জায়িত ছন্দে কী যে দোলে
সুরেলা সন্ধ্যা এলে হাঁসপাখী দু পায়ে আকাশ
চিরে চিরে বাসা বাধে তোমার দু’চোখে!

উজ্জল চিলকায় কাঁপে, সূর্যের অনুর ত্রিপল,
কাঁপা হাতে তুলে নেয় পূরবায়ু নিমজ্জিত ঘাস,
বনেলা বিথারে তুমি অপ্রতিভ কী করে যে হাসো
সুরেলা সকল শব্দ, রংছুট তোমার হাসিতে!

কী কোরে অধর কাঁপে, উৎরোল আবেশে মুখর
তোমার গ্রবিায় জ্বলে হীরাঝিল মুক্তোর দানা
সোনালী সুরের দোলা, অভাবিত ছন্দে দোদুল;
কী কোরে পাখীটা কাঁদে, তুমি আহা তাও কি জানোনা?

গানের শব্দে দেখি অরচিত সুরের দু’পাড়
সুরেলা তোমার বুকে ভরা নদী ঢেউয়ে উৎসার!

একটি ভাষ্যে / আবুল হাসান

কিংবা একটি মৃত্যু, তবে সে বড় ভয়ংকর
তার নিষাদ নয়তো অতৃপ্ত কাঞ্চন প্রিয়তমা!
আমি বড় পিতামহে বিশ্বাসী, এই তো উত্তর;
যষ্টি অন্ধকারে কেউ কাঁদে, তাকে করো ক্ষমা।
জানি ললিত শরীর, তবু নিটোল গ্রীবায় উন্মুখ
যত সপ্তপদীর ভীড়, -নীড় লোভী সঞ্চয়
তার দূরত্বে শুধু সাড়া, প্রাত্যহিকে বুক
ঝরে না রং ছুটে, বয়সে হায়রে জরা ভয়!!

যদি কবিতা না পারো / আবুল হাসান

যদি কবিতা না পারো, তবে ছবি এঁকো
উচ্ছল রাত্রির চোখে, চোরাহাসি রং দিয়ে ঢেকো!

ইজেলে রং-এর হাত তারার প্রতিভা
স্মৃতিখোড়া পলিমাটি আচানক বিভা
এক ঝাঁক বুনোহাঁস, মেদুর আকাশ
প্রতিমারে মুখচোখ, দীর্ঘ নিঃশ্বাস!

ছবি ভাল লাগে,
যাতে নিবিড় ফসলী গানে উদ্বেল মাঠ
অনঙ্গ নিষ্ঠার নিবি, নিটোল শরীর
একটি সুহৃদ নীড়, মমতার দ্বীপ।
এবং সবজি ক্ষেত, শীতল পুকুর
আর যদি আঁকো তাতে ঘুমদোলা তৃপ্ত দুপুর।

ছবি ভাল লাগে,
যদি উপরে বিক্ষোভ দাও মেঘের ঝড়ের
পরাভূত যত সব শকুন চোখের।

একটি অমূলক ধ্রুপদী / আবুল হাসান

যদি পারো এই ব্যাকুল বিথারে সোঁদালো স্নেহের পরশ দিও
যদি নাহি পারো স্মৃতির অতলে ঢেকে রেখ সব কাকতালীয়
যা কিছু আমার ছিল বহিবার সেও তো অনেক বেদনাদায়ক
সেই পাখী আর আসবে না, হায় বিঁধেছে যে তার মৃত্যু শায়ক!
গান রচে যাওয়া অনেক বিলাপ, গান কিসে জানে সুখ?
দু’মুঠো প্রাণের হাওয়ায় যে তবু ফুলগুলো উন্মুখ!

অনেক বছর, হাসবে বছর, তোমার দু’চোখে রাত
কী যেন ব্যথিত! নীড় জাগা পাখী করে নাকি দৃকপাত?
শান বাঁধা ঘাট, স্বচ্ছ পুকুর, সজল স্নানের ঢেউ
তাইতো চিনেছি, আর কিছু নয়, আর নয় কোন কেউ।
বেদনা মথিত তুমিও কি, বলো? -হরীণ নাভীর মূলে
আর কোন ঘ্রাণ উত্তাপ দেয়, উৎসারে পলে পলে?

আদিম পাখীরা ফুল ভালবাসে, আর সুগভীর হাওয়া
সারা রাত বুঝি আকাশী ধ্রুপদে হয়না সে গান গাওয়া?
মালকোষ বড় ব্যথিত মনের ধ্বনি নিয়ে বেয়ে আসে,
তারার আসরে ঈমন সুরের স্বর ভাসে উচ্ছসে।
সবাই আকাশ ভালবাসে, তবু মনের আকাশ বড়
ঝড় মেঘ আর বৃষ্টি ঘাতে সারাক্ষণ থরথর।।

দুপুর দুপুর, কী আছে দুপুরে? তবু ঝিম ঝিম রোদ
ছোট পাখী তুমি পাতা ফেল নাকো, নদীতে অনেক স্রোত!
ছোট পাখি তুমি ভালবাসো? হায় বুকের হাঁফরে সীসে
গলে গলে জ্বলে! -ক্ষত যন্ত্রণা তার সাথে যায় মিশে!

তার ভীরু পায়ে, কঠিন শব্দ, জানেনা মনের মায়া
কী হবে ওখানে ফুল ফেলে দিয়ে ঢাকতে নীরব ছায়া?

নিয়তি আমার গোলাপ কোথায়, গোলাপ করেছ জড়ো?
নিয়তি স্বপ্ন- চারিদিক- তবু স্বপ্নই জেনো বড়।
তার সে চোখের মেদুর কাজলে রক্তিম সংশয়,
নিয়তি তোমাকে ওখানে রাখবো? না-না বড় ভয় হয়।
তুমি মন খুঁড়ে হীরাগলা প্রেম আবার আনতে পারো?
নিয়তি, বুকের বর্ণালী যত দুখ ব্যথা আছে,তারও?

বড় সকরুণ হাই তুলি আজ মুখ চোরা সেই বাঁচার ডিবায়
দু’পাশে নিয়তি, সারাক্ষণ দুটি ব্যথিত পুতুল ঘুমায়!
যুগ যুগ ধরে পূরবায়ূ এই আকাশী নীলের হাতে
ফুল গুঁজে দিয়ে নিয়তি আমার পড়োনি কি সংঘাতে?

কাকেও কি তুমি এক চোখ ভাষা দিয়েছিলে ভীরু পাখী?
তার চোখ বুঝি জানেনা মমতা, বোঝেনা স্নেহের রাখি?
থাক্ পাখী তুমি যেয়োনা ওখানে, উদার আকাশ নীল
ঐ খানে ওড়ো, স্বপ্ন ওখানে রংছুট ঝিলমিল।

নদীতে জোয়ার, ঢেউ উৎরোলে সাগর অনেক হাসে
ছোট পাখী তুমি উদার আকাশে পাখা মেল উল্লাসে!
বাগানে-ত আছে গোলাপ পাপড়ী, ফুটবে তোমার চোখে
ছোট পাখী, তবু কাঁদবে এখনো মিথ্যে অবুঝ শোকে?
যত স্মৃতি আর বকেয়া ঋণের ক্রন্দন তব ভালে
ছোট পাখী, আর থাকবেনা তাও কোনদিন, এককালে।

গোলাপ অনেক, পৃথিবী হয়তো তার চেয়ে চিন্ময়
ঘাটে বন্দরে ফসলে যে তাই, সোনালী সুরের লয়।

যে আসে আসুক, তাকে যেতে দাও, যদি আর নাই আসে
নিয়তি এবং পাখীরা তোমরা কেঁদোনাকো আর ত্রাসে।
জনতা আমার, পৃথিবী আমার, চারপাশে যত আলো
এই-ই স্মরণীয়, ক্ষমার সূর্য তুমিই আমার ভালো।
অপরাধ যদি লোনায় হারায় সব ক্ষোভ, সংশয়
ছোট পাখী তুমি কেঁদোনা, ওখানে শুধু অমূলক ভয়।
ছোট পাখী, জানো, কৈশোরে সেই একটি হৃদয় কাঁপে
এবং তোমাকে নেই অনুরাগ এখনো অংকে মাপে।

বাতুলতা এবং / আবুল হাসান

বাতুলতা তোমাকে চাই না আর! ঢের ঢের
শিখেছি নায়ক বুলি, কী কোরে প্রেমিক সেজে
সারারাত কাঁদতে হয় তাও জানি। আর কড়ে আঙ্গুলের ছোঁয়া
কী কোরে লাগতে হয় প্রতিজ্ঞার ঘাড়ে
তাও বেশ জানে এ অধম!

ভাঙ্গা মন্দিরে হে বাতুলতা, শুধুই অতীত কাঁদে
পুরোনো মন্ত্রের স্বরে। আর প্রবীণ মসজিদে
সেই ব্যাকুল শব্দে জানে তোমার করুণ হেরফের।
ফুঁ দিয়ে নেভানো যায় সহজেই তোমার তুষার আলো
যেহেতু সবাই জানে তুমি আসো ক্ষণিক সম্ভারে!

প্রার্থনায় পবিত্র যিনি, আত্মার সৌষ্ঠব যার
ঈশ্বরের সমর্থ প্রকাশ , তাকে তুমি কী কোরে ভাঙ্গাবে বলো?
ফুটো পয়সার লোভে? কয়েকটি রেজগী দিয়ে চোস্ত সেই বন্ধুদের হাতে
বিমূঢ় প্রসিদ্ধি এটে জনান্তিকে? -জনতাকে কী কোরে জানবে তুমি?
তারা জানে তোমার বাঘের গল্প বড় মিথ্যে, যেহেতু
ঠকেছে তারা বারবার তোমারই চিৎকারে!
মাথায় কিংবা কোন ‘প্রোফাইল’ চিন্তায় তুমি বিশ্বাস করনা জানি,
সর্বক্ষণ গায়ের পোষাকে আঁটো ঠগ মানুষের ছুরি
আর সযতেœ লুকিয়ে রাখো বুকের পকেটে শত
মুগ্ধকর প্রলাপের তুড়ি!

বুঝি, তুমি সেচ্ছার বাহোবা খোঁজো, তাই ভয়ানক
মিথ্যাকেও নিবির্ঘ্নে ষেরাও ফের জ্যান্তব খবরে!
মসৃন পোষাক ওরা খুলে নিয়ে বাতুলতা
যখন নগ্ন কোরে রেখে দিবে চৌরাস্তায়
আর জনতার তিরস্কারে তখন সে খসে যাবে মুখোশ তোমার!
হাজার বাদুড় এসে খুলে নেবে কিমাকার তোমার দু’চোখ।

প্রতিদিন তাইতো তোমাকে বলি, বাতুলতা
তোমাকে চাইনা আর! তোমার মুখোশে জানি
প্রকৃত বাঘের হল্লা তোমাকে কাঁদাবে!

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: