
প্রচ্ছদ: আমি আকাশ দেখতে যাবো…(২০১২) / আফসার নিজাম

যখন হতাশা চোখের পর্দা হয়ে
পথ করে দেয় ঝাপসা অন্ধকার
তখন আশার কাশফুল ফুটে থাকে
পুরোনো বাড়ির জানালার কার্নিশে।
যখন স্বপ্ন বোমার বিস্ফোরণে
ক্ষত বিক্ষত দুপুরের রাজপথ
তখন সেপথ চিৎকার করে বলে-
স্বপ্ন অমর; ধ্বংস করবে কিসে?
যখন বেহালা কিংবা বাঁশীর সুরে
বাজে নিশীথের ঘুম পাড়ানোর গান
তখন ভোরের পাখির কণ্ঠে শুনি
চেতনার সুর প্রকৃতির মজলিশে।
যখন জীবন বন্দী খাঁচার পাখি
তখন মুক্তি ছোট্ট শিশুর বেশে
খুলে দেয় তার কবাট খেলার ছলে;
খুঁজে পাই পথ, খুঁজে পাই ফের দিশে।
মনে মনে বলি- জীবন থাকে না ফুলে,
সে থাকে তপ্ত পিচঢালা পথে মিশে।
কবিতার লিংক- যখন হতাশা চোখের পর্দা
কবি মতিউর রহমান মল্লিক স্মরণে
তোমার সঙ্গে আমার হয়নি দেখা
তোমার সঙ্গে কথাও হয়নি কোনো
তবু তুমি আজ হৃদয়ের ক্যানভাসে
অমর চিত্র, অক্ষয় জলছবি।
তুমি অসুস্থ হাসপাতালের বেডে
তখনো তো আমি যাইনি তোমার পাশে
একা রাত জেগে স্মরণ করেছি শুধু
তোমার কবিতা, হে আমার প্রিয় কবি।
শিল্পীর মুখে তোমার কবিতা, গান
প্রতিটা শব্দ হৃদয়ে দিয়েছে নাড়া
তুমি চলে যাবে থেকে যাবে অম্লান
পৃথিবীর বুকে তোমার সৃষ্টি সবই।
সবাই বলুক আজ আর তুমি নেই
আমি বলি- তুমি বুকের মধ্যখানে,
যদিও তোমার সঙ্গে হয়নি দেখা
তবু চির চেনা, হে আমার প্রিয় কবি।
সময় মত ট্রেনটা ঠিকই আসে
আগের মতই শীস্ বাঁজিয়ে থামে,
দূর-সুদূরের যাত্রী নিয়ে আসে
নতুন করে কেউ ওঠে কেউ নামে।
শব্দ করে যখন বাজায় শীশ্
কেউবা হাসে কেউবা ভয়ে কাঁদে,
কেউবা বলে আজকে আমায় নিস;
যাদের ভাঙা বুক ভরা বিষাদে।
ট্রেন শোনে না কারোর কোন কথা
চায় না যেতে তবুও নিয়ে যায়,
যাত্রীগুলোর নিঝুম নিরবতা
মুড়িয়ে রাখে বিষাদ বেদনায়।
অন্ধকারে জানালা খুলে কেউ
হয়তো থাকে পথের দিকে চেয়ে,
দু’চোখে তার অশ্রু তোলে ঢেউ
ঝরতে থাকে গন্ড বেয়ে বেয়ে।
এমনি করেই ফুরায় তাদের আশ
যে চলে যায় সে আসে না ফিরে,
এ ট্রেন তো নয় মানব মনের দাস
আসবে যাবে সকল বাধন ছিড়ে।
আবার যখন নতুন আগন্তুক
এ ট্রেন চেপে যাত্রী হয়ে আসে,
মানুষ গুলোর উতলা হয় বুক
দুঃখ ভুলে সবাই তখন হাসে।
এ ট্রেন আসে এ ট্রেন চলে যায়
কালের স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে গা,
যে জন আসে সে জন ফিরে যায়
যে যায় সে জন ফেরত আসে না।
ফলের ভারে নুঁইয়ে পড়া ডালের মত
আমিও যেন পড়ছি নুঁয়ে মাটির দিকে,
আঁধার কালো রাতের পরে ভোরের মত
কুচকে পড়া চামড়া ক্রমে হচ্ছে ফিকে।
বাহুর সে বল ক্রমেই যেন যাচ্ছে ক্ষয়ে
চশমা ছাড়া দেখি না স্পষ্ট করে,
সময় শুধু নদীর মত যাচ্ছে বয়ে
বাঁধার পাহাড় ভাঙে না আর মনের জোরে।
বেশ কিছু পথ পার হয়ে আজ পথের পাশে
ক্লান্ত বড়, জিরিয়ে নিতে ইচ্ছা জাগে,
এপথ ধরেই আবার নতুন পথিক আসে
যেমন কুঁড়ি পাপড়ি মেলে ফুলের বাগে।
পথ পুরনো পথিক নতুন, শেষ ঠিকানা
পথের ধারেই। হয়তো কোন আঁধার রাতে
আমার মতই ঘুমিয়ে পড়ার শয্যাখানা
বিছিয়ে নিয়ে দেখবে স্বপন; দূর অতীতে-
হারিয়ে যাওয়া পথের বাঁকে মধুর স্মৃতি।
আমার মতই বাহুর পেশি শুকিয়ে যাবে
মনের কোণে জমবে শুধু মরণ ভীতি
হৃদয় শুধু অতীতে ফের ফিরতে চাবে।
এখন আমি ঈর্ষা করি তারুন্যকে
দিনের শেষে যখন রাতের আঁধার আসে,
সবাই ঘুমায়, ঘুম আসে না আমার চোখে
শুভ্র কাফন জড়িয়ে থাকে ধবল কেশে।
বন্ধু ভাবি অস্ত যাওয়া সূর্যটাকে
উদয় বেলার গান আসেনা কন্ঠে আমার,
হয়তো কোন অবাঞ্চিত কাজের ফাঁকে
স্বপ্ন দেখি তারুন্যকে ফেরত পাবার।
আমি যদি ঐ ভোরের পাখির মতো
জানালার ফ্রেমে, পুরাতন কার্নিশে
কণ্ঠের সব অবরোধ তুলে নিয়ে
চিৎকার করে বলতাম- ‘ওঠো ওঠো,
চেয়ে দেখো মৃদু বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে
আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল
বুনো ফুলেদের পবিত্র নির্যাস।
চেয়ে দেখো দূরে আকাশ রাঙানো রোদ
তোমার জানালা-দরজায় কড়া নাড়ে
তোমার উঠোনে লুটোপুটি খেলা করে।
কান পেতে শোনো ঢেউয়েদের গর্জন
ভেঙে আর গড়ে নদীটার দুই কূল
মোহনার পানে ছুটেছে ক্লান্তিহীন।
চেয়ে দেখো ঝোপে জোনাকিরা জ্বলছে না
পশ্চিম তীরে ডুবেছে রাতের চাঁদ,
ছায়াপথ জুড়ে তারাদের বৈঠক
শেষ হয়ে গেছে, ঘুচেছে আঁধার রাত।
তোমার দুয়ারে এখন সোনালী ভোর
তোমার উঠোনে রোদ্রের গড়াগড়ি
তোমার বাগানে ফুলেরা উঠেছে জেগে
ভ্রোমরেরা এসে গাইছে মধুর গান
অথচ তোমার দু’চোখে ঘুমের রেশ।
একবার দেখো ঘরের বাইরে এসে
সবাই তোমাকে বরণ করবে হেসে।’
আকাশরে তোর নীলের সীমায় নিত্য উড়াল যার
তোকেই ভালোবেসে,
যেই পাখিটা মেলল ডানা; তার
খবর রাখিস তুই?
আকাশরে তোর বিশাল বুকের
একটুখানি দে
থাকবে আমার মন
তার চাঁদের সাথে তারার সাথে চলবে আলাপন।
হাসনাহেনা-জুঁই-
শিউলি-বকুল ফুলের মত করে
মন কুঠুরির স্বপ্নগুলো পড়বে শুধু ঝরে।
আকাশরে তুই একটু জা’গা দে
স্বপ্নচারী এই পাখিকে আপন করে নে।
আকাশরে তোর নীলের সীমায় নিত্য উড়াল যার
খবর রাখিস তার?
এখন আমি স্বপ্ন দেখি হাসবো বলে নতুন করে
অন্ধকারে জোনাক হয়ে জ্বলবো বলে মনের ঘরে
স্বপ্ন দেখি বাঁধবো বাসা সুখের ঘরে চড়ুই পাখি
সকাল হলে গাছের ডালে পাতার ফাঁকে উঠব ডাকি।
এখন আমি স্বপ্ন দেখি দূর আকাশে মেলবো ডানা
নীল আকাশে উড়াল দেবো, আমাকে কেউ করলে মানা
মানবো না তা নিজের যতো ইচ্ছে ঘুড়ি দূর-সুদূরে
ভাসিয়ে দেবো লাল-পরীরা যেখানটাতে বেড়ায় ঘুরে।
স্বপ্ন দেখি সাগর তীরে ঢেউয়ের সাথে খেলবো খেলা
নোনতা জলে আমার দু’পা ভিজিয়ে দিয়ে সন্ধ্যাবেলা
ফের হারাবো সাগর বুকে যেখানটাতে মুক্তা আছে
যেখানটাতে রাতের বেলা ঝিলমিলিয়ে জোসনা নাচে।
এখন আমি স্বপ্ন দেখি রাতের তারা বলছে হেসে
আমার মতো জ্বলতে থাকো অন্ধকারে আলোর বেশে
বলছে হাওয়া গন্ধ ঢালো ফুলের মতো আমার বুকে
বলছে মাটি আমার বুকে ঘুমিয়ে থাকো পরম সুখে।
“ তোমার জন্য ছাদের উপরে ছাদ গড়া হল কত
তোমার জন্য বুক ভরা আজ কত গোলাপের ঘ্রাণ,
তোমার জন্য দেশী চামড়ায় বিদেশের প্রসাধনী
তোমার জন্য অবলিলাক্রমে ঝরে গেল কত প্রাণ।
তোমার জন্য পকেটে পকেটে অর্থের ছড়াছড়ি
তোমার জন্য ব্রিফকেস ভরা অবৈধ কাঁচামাল,
তোমার জন্য মাদকে মাদকে ছয়লাব সারাদেশ
তোমার জন্য এখানে সেখানে ছুটে চলা চিরকাল।
তোমার জন্য গাছপালা কেটে উজাড় শহর গ্রামে
তোমার জন্য সিনেমার গান, নাটকের সংলাপ,
তোমার জন্য পিচঢালা পথ, চার চাকাওয়ালা গাড়ি
তোমার জন্য পার্কের বেঞ্চ, উষ্ণ কফির কাপ।
তোমার জন্য বত্রিশ তলা বাড়ির মালিক সেও
ছাদ থেকে পড়ে পিচ ঢালা পথে জীবন বিলিয়ে দিল,
তোমার জন্য অবুঝ তরুনি গলায় ঢালল বিষ
তুমি নেই বলে প্রেমিক পুরুষ মৃত্যুকে বেছে নিল।
তোমার জন্য একশ বছর বয়সী বৃদ্ধ আজো
পথ চেয়ে আছে জীবনের সব সঞ্চয় সাথে করে,
তবুও কি সুখ আসবে না তুমি আসবে না কোনদিন
নাকি ডুবে যাবে আশার কিসতি আঁধারের গহ্বরে। ”
“ আমি তো কোমল জায়নামাজের জমিনে বেঁধেছি বাসা
আমি তো মায়ের আচল ছায়ায় রেখেছি আমার হাত
আমাকে দেখবে মধ্য রাতের নীরব অশ্রুপাতে
তবে কেন মিছে আমার জন্য এতটা রক্তপাত। ”
আমি নাকি বড় অন্ধকারকে চিনি
আমি নাকি শুধু হতাশার কথা বলি
এই ছিলো তার অভিযোগ;
এই ছিলো তার বিদায় বেলার কথা।
আমি নাকি বেশি কান্নাকে ভালোবাসি
আমি নাকি ব্যথা বুকের ভিতরে নিয়ে
ঘুরি; এই তার অভিযোগ।
আমি নাকি রাত-নিজঝুম নিরবতা।
কি করে বোঝাবো আলোর পেছনে ছুটে
দেখেছি শুধুই সূর্য অস্ত যাওয়া
গোধূলীর লাল; তারপর
আবার সন্ধ্যা রাতের নির্জনতা।