যে কথা তোমার সাথে / সাইফ আলি

যে কথা তোমার সাথে
মুখ ফুটে কিভাবে তা কই,
অবাধ্য গোলাম আমি
এর চেয়ে বেশি কিছু নই।

লুকোনোর যতো কিছু
তুমিই তা লুকিয়েছো তাই
পাপের পাহাড় কাঁধে
বেঁচে আছি। লোকলজ্জায়

এখনো মরিনি। প্রভূ,
তুমি যদি না শিখিয়ে দিতে
হয়তোবা পশুদের মতো
পৃথিবীর অলিতে গলিতে

নিজেকে জাহির করে
ভাবতাম এইতো জীবন,
অন্ধকার, বেওয়ারিশ
পচাগলা লাশের মতোন,

হঠাৎ ফুরিয়ে যাওয়া পথ;
অর্থহীন সময় ক্ষেপণ।
প্রভু, যে কথা তোমার সাথে
সে কথাটা থাকুক গোপন।

২৩.০৪.২২

চাঁদ দেখা / সাইফ আলি

জানালায় গ্লাস লাগিয়েছি
এখন ঘরে বসেই চাঁদ দেখা যায়
আগে যখন কাঠের জানালা ছিলো
আমরা চাঁদ দেখতে ছাদে যেতাম।

একদিন দেখলাম চাঁদটা আগের মতো নেই
কেমন যেনো ঘোলা,
চাঁদেও কি ময়লা ধরে?
ভাবলাম, প্রতিদিন চাঁদ দেখে দেখে হয়তো আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি।
এরপর থেকে রাতে পর্দা টাঙানো শুরু হলো।

কিছুদিন পর এক ভরা পূর্ণিমা রাতে
চাঁদকে ভীষণভাবে অনুভব করছিলাম,
ঘরের সব আলো নিভিয়ে দিয়ে
পর্দা সরিয়ে চাঁদের দিকে তাকালাম;
মনটা খারাপ হয়ে গেলো-
এমন মলিন চাঁদ কখনো দেখিনি।

পাশ থেকে সে আমাকে বললো-
‘জানালার গ্লাসটা পরিষ্কার করে নাও।’

১৬.০৪.২২

ছায়া ধরে বেঁচে আছি / সাইফ আলি

ছায়া ধরে বেঁচে আছি
একদিন ছেড়ে যাবে সেও;
ভয় পাবো কিসে বলো
প্রেম যদি থাকে মরণেও?

কেবল দুনিয়া যার
তার শত রোগে শোকে ভয়,
শাহাদাৎ পেয়ালায়
ঠোঁট রেখে খুঁজি পরিচয়।
০৮.১২.২০

পৃথিবীটা নেড়েচেড়ে / সাইফ আলি

পৃথিবীটা নেড়েচেড়ে রেখে দেবো ফের
কিসে এতো ভালোবাসা মায়া আমাদের?
দু’দিনের মুসাফির, ঘর বাঁধি; পাথরের ঘর
হাতে হাতে গড়ে তুলি কি দারুণ পাপের শহর
তারপর একদিন ছেড়ে গেলে ছায়া আমাদের
পৃথিবীটা নেড়েচেড়ে ঠিকঠাক রেখে দেবো ফের।

আমাদের সন্তান, সম্পদ, ভালোবাসা সব
ভাগাভাগি হয়ে যায়; কে চালায় কসায়ের ছুরি?
আমলের খাতা খুঁজি, হায় হায় চুরি গেছে চুরি!
এখন তো খালি হাতে কেউ নেই কিছু নেই, রব…
জানতাম পৃথিবীটা নেড়েচেড়ে রেখে দেবো তবু
কেনো যে মেতেছি ভুলে, ক্ষমা করো ক্ষমা করো প্রভু।
০৩.১২.২০

নেমে দাঁড়াতেই বৃষ্টি নামলো / সাইফ আলি

সাগর ফেরালো নদীকে
আর আকাশ বললো- তারা,
নিভে যাও তুমি; চাঁদও!
পৃথিবী বললো কাঁদো!!

দু’চোখ বললো- আহা!
দু’ঠোঁট বললো- বেশ;
দু’হাত ভাঙলো অর্জন
আর দু’পায়ে নিরুদ্দেশ।

জীবন বললো- নিরামিষ,
মৃত্যু বললো- থেমে যাও;
মন কি বললো বোঝার আগেই
কে যেনো বললো- নেমে যাও!

নেমে দাঁড়াতেই বৃষ্টি নামলো
অঝোর বৃষ্টি সারারাত,
প্রেমিক ফিরলো প্রেমিকার কাছে;
প্রেমিকার নাম জান্নাত!
৩০.০৫.২০

ভয় / সাইফ আলি

তারপর একদিন জানালার পর্দা দুলে উঠতেই চমকে উঠলে-
কে ওখানে?
কোনো উত্তর নেই।
ওখানে কে?
উহু, কোনো উত্তর নেই।
একটা অবান্তর ভয় তোমাকে পেয়ে বসলো; অথচ, তুমি ওসব ভুতপ্রেতে মোটেই বিশ্বাস রাখো না!
আচ্ছা, মানুষ এমন কেনো বলতে পারো?
কই কখনো তো শুনিনি একটা ছাগল যার কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই সেও কারো ছায়া দেখে আৎকে উঠেছে; আথচ মানুষ?
কি? একজন মানুষ হিসেবে নিজেরে খুব দুর্বল মনে হচ্ছে না?
আসলে এটাই মানুষের শক্তির উৎস-
পর্দা দুলে ওঠা কোনো ভয়ের ব্যাপার নয় তবে কোনো কারণ ছাড়া দুলে ওঠাটা অবশ্যই ভয়ের কারণ হতে পারে; আর এইযে কারণ অনুষন্ধান করার ক্ষমতা, এটাই শক্তি। এই শক্তির বলেই মানুষ বলিয়ান।
ভয় না পাওয়াটা কোনো সাহসিকতার ব্যাপার নয়, হতে পারে এটা সীমাবদ্ধতা। পৃথিবীর সব আলো নিভে গেলেও অন্ধের কোনো ভয় নেই। ভয় মানুষের সত্য উদঘাটনের প্রেরণাই শুধু নয় অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর অন্যতম শর্ত।
স্রষ্টার ভয় মানুষকে সকল ভয়কে অতিক্রম করার সাহস যোগায়।

09.07.19

কবি ও কবিতা / সাইফ আলি

আমার সঙ্গে কিছু শব্দের মেলামেশা ছিলো
যখন তখন তারা ঢুকে যেতো মনের গভীরে
এ বিষয়ে অভিযোগ সবথেকে বেশি ছিলো যার
সে আমার প্রিয়তমা চেয়েছিলো পুরো অধিকার।

অথচ কবির মন ফেড়ে কবে কোন ডাক্তার
পেয়েছে কেবল নারী, গাড়ি, বাড়ি আর সংসার?
শব্দের আনাগোনা কবির শ্বাসের মতো,
প্রিয়তমা সেও এক রূপ কবিতার।

04.10.19

তোমাকেই সম্মুখে চাই / সাইফ আলি

রাত্রি গভীর হয়, জ্বলে ওঠে দৃষ্টি তোমার
হৃদয়ে নূরের জ্যোতি, সেজদায় অবনত মাথা
তোমাকে পূর্ণ করে; তুমি হও জান্নাতি পাখি!
আহা কি আলোয় ভরা কলবের অধিকারী তুমি!
দ্বীনের মিছিলে আমি তোমাকেই সম্মুখে চাই
তুমি কি মিছিল নিয়ে নামবে না শহরে আমার?

28.04.19

যদিও নতুন কবর / সাইফ আলি

এ মাটি খুড়তে গেলে
এখন আর হাড় পাবে না,
হয়তো মিলতে পারে
কাচা এক হৃদয় আমার।

এ মাটি কেবল মাটি
ভাবলে ভুল হবে খুব,
এখানে লক্ষ তারার
সমাধি, খুড়েই দেখো।

এখানে হাড় পাবে না
যদিও নতুন কবর,
তবুও মিলতে পারে
কাচা এক দিলের খবর।

19.11.18

আমার এই কলবে কেবল / সাইফ আলি

যে খাঁচায় বদ্ধ আমার অক্ষিগোলক
ঘুমের ভারে নুইয়ে আসে 
যে মাটির শীতল দেহের কঠোর ত্রাসে 
মনপাখিটা হয় উতলা
সে খাঁচা-মাটির ঘরে তোমার আলো পৌছিয়ে দাও;
আমার এই কলবে তুমি তোমার নূরের প্রদীপ জ্বালাও।

যে বাতাস কাঁপন ধরায়, শরীর ফুঁড়ে আত্মাটা ছোঁয়
সে বাতাস উড়াক তোমার বিজয় নিশান;
আমার এই নরম দু’হাত শক্ত করো কবুল করো
প্রতিকূল স্রোতের মুখে গায় যেনো সে তোমারই গান।

আলো আর অন্ধকারের সকল ভাষা তোমার জানা
আগুনের শিখাও তোমার হুকুম পেলে বিনম্র হয়;
তবে কোন জালিমশাহের আস্ফালন এই হৃদয় ছোঁবে
আমার এই কলবে কেবল জারি রেখো তোমারই ভয়।

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: