আমি নিজের মধ্যে আমার ইচ্ছেমতো ঋতু পরিবর্তনের আবহাওয়া তৈরি করে নেওয়ার অবস্থায় পৌছেছি
না অন্ধত্ব না বার্ধক্য
কেবল অস্তিত্বের কার্যকারণ আমাকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে আকাশের দিকে
মেঘের ওপর ঠেস দিয়ে আমি পৃথিবীকে দেখি
দেখি আমার জন্মের দ্বীপদেশকে
খুব মৃদু শব্দে উচ্চারণ করি, বাংলাদেশ
এতো মৃদু যে আমার অন্তরের শব্দ আমার কানে পৌছোয় না।
একদা আমি এ দেশের প্রতিটি পাখির ডাক থেকে অর্থ বের করতে পারতাম
পালক থেকে রঙের রংধনু
আমি এ দেশের প্রতিটি নদীকে আমার বুকের ভেতর টেনে এনেছি
এখন সব ভুলে যেতে চাই
কারণ ভালোবাসার কথা বললেই একটা প্রতিদানের প্রশ্ন টেরচা হয়ে আমার বুকের মধ্যে লেগে থাকে।
আমি তো কোনো প্রতিদান চাই না
আমি কোনো প্রেমিকও নই যে আমার একটা প্রতিচ্ছায়া থাকবে
বড়জোর একজন কবির পরিণাম চিন্তা করে
আমি মেঘ থেকে মাটি পর্যন্ত পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকি
আমাকে দেখে হিংস্র পশুরা দ্রুত এগিয়ে এসে গাত্রগন্ধে
বিতৃষ্ণা ব্যক্ত করে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়
পিঁপড়ে থেকে বাঘ পর্যন্ত আমাকে ছোঁয় না
শুধু মানুষই এখনো আমার প্রতি তাদের কো্রধ ব্যক্ত করে
তারা কবিতার প্রতি তাদের অনাস্থা জানাতে গিয়ে ঈর্ষার করাতে আমাকে কাটতে চায়
কিন্তু দেহ শত খণ্ডে বিভক্ত করেও যখন কোনো রক্তের স্বাদ পায় না
তখন হাল ছেড়ে চিৎকার করে বলে, ‘শালা, সত্যি কবি।’
এ কথায় আমি আর শুয়ে থাকতে পারি না।
আমি আমার জন্মভূমির ধানক্ষেতগুলোর মতো নড়েচড়ে বসি। শস্যের গন্ধেে
আমার চতুর্দিকটা ম’ ম’ করতে থাকে।
আমি তো আগেই বলেছি, এমন অবস্থায় এখন আমার
বিশ্রাম যে, এই গ্রীষ্মের দাবদাহে কল্পনা আমাকে
পৌষের শীতে থরথর করে কাঁপায়
ইচ্ছে করলে আমি শীতকে গ্রীষ্ম এবং গ্রীষ্মকে শীতে পরিণত করতে পারি
যে যাই বলুক, এর নামই তো কবিত্ব শক্তি
তবে শত কল্পনার মধ্যেও আমি নারীকে পুরুষে পরিণত করতে পারি না
যদিও নারীরা সব সময় নিজেদের পুরুষই ভাবে
অথচ পৌরুষে তাদের আকাঙ্ক্ষায় কোনো তৃপ্তি নেই।
আমি প্রেমকে ভয় পাই। কারণ
আসঙ্গলিপ্সা কবিকে অর্ধেক নারীত্বে নিমজ্জিত করে
এখন আমার নারীর কাছে একমাত্র কাম্য দয়া আর শুশ্রুষা
শিশুরা যেমন ক্ষুধার্ত হলে মাতৃস্তনের জন্য কেঁদে ওঠে, আমিও
মায়া ও মমতার জন্য আমার দেশমাতৃকার নগ্ন ব-দ্বীপে
একাকী রোদন করি। আমার সাথে প্রকৃতি, পাখ-পাখালি
কীট-পতঙ্গ এবং শূন্য মাঠ মা মা করে কেঁদে ওঠে।
তুমি কি শুনতে পাও, বাংলাদেশ?