সমুদ্রের গান / সায়ীদ আবুবকর

ওই নীল সমুদ্রশয্যায়
শুয়ে আছে সহস্র মানুষ। শুয়ে আছে, নাকি
ডলফিন হয়ে মৎস্যকন্যাদের সাথে নেচে নেচে গান গায়
সোনালি রুপালি জলের গহিনে, যখন ক্রীড়ায় মত্ত সব বসন্তের পাখি
ঝাঁক বেঁধে চঞ্চল চঞ্চুতে নিয়ে যায় তুলে ধবধবে সমুদ্রের ফেনা?
যেখানে উত্তাল জলের মিছিল আজ ফণা তুলে নাচে, ওখানে, লরেনা,

গিয়েছিল আকস্মিক জাহাজটি ডুবে। কি করুণ আর্তনাদে
কেঁপে উঠেছিল আকাশ বাতাস! যখন উন্মত্ত মৃত্যু তার নীল থাবা
হেনেছিল এখানে হঠাৎ, “কে যেন কোথায় কাঁদে!”
বলে হা-হুতাশ করে উঠেছিল সেইসব মানুষদের মা-বাবা,
ভাইবোন, স্ত্রী-সন্তান। ছুটে এসে তারা, যেন ভেনাসের চোখে
চেয়ে চেয়ে দেখেছিল, মানুষের সব স্বপ্নসাধ চোখের পলকে

কিভাবে হারিয়ে যায় সমুদ্রের হাঁ-এর ভেতর। সিক্তচোখ তারা
গিয়েছিল ফিরে এই সত্য বুকে গেথে: সমুদ্র পাষাণ,
সমুদ্র কুৎসিত। কিন্তু আজ তুমি-আমি এখানে দাঁড়িয়ে যারা
কান পেতে শুনি উন্মাতাল সমুদ্রের গান
আর নির্বাক নিশ্চুপ
চেয়ে চেয়ে দেখি নৃত্যরত সমুদ্রের রূপ,

কী সাহসে বলি তাকে কুৎসিত হায়! বিপুল সুন্দর সমুদ্রের বুকে
কুৎসিতের ঠাঁই নেই; সব ব্যথা, সব দুঃখ, সব দীর্ঘশ্বাস
আনন্দের স্রোতে মিশে সুন্দরের এ মুলুকে
ভস্ম হয়ে যায়। শত শত লাশ
ও তাদের মৃত্যুপূর্ব আহাজারি নিয়ে একটি জাহাজ
ওখানে যে গিয়েছিল ডুবে, নেই আজ

চিহ্ন কোনো তার। দ্যাখো, জলেরা পড়েছে ফেটে
কি-উল্লাসে জলের সাম্রাজ্যে! তিমিরা করছে খেলা
লেজের আঘাতে ঢেউ কেটে কেটে
জলের ভেতর। রূপসী আকাশ সারা বেলা
জলের আরশিতে দেখে মুখ উঠছে ফুর্তিতে হেসে,
কাকে যেন ভালবেসে।

কি বিপুল লোক মারা পড়ে প্রতিদিন বিশ্বময়! কত দেশ, কত জাতি
পড়ছে হুমড়ি খেয়ে অহরহ দুর্ভাগ্যের অন্ধকারে; রক্তের তুফান
বয়ে যায় বারবার বাগদাদে-গুজরাটে; তবু জ্বলে সভ্যতার বাতি,
তবু ফোটে আনন্দের ফুল, কি বিপুল পাখি তবু বসন্তের গান
গেয়ে ওঠে একসাথে সভ্যতার ডালে! সমুদয় মৃত্যু-শোক এক ফোঁটা
জল যেন সমুদ্রের, আর গোটা
সমুদ্রই
জীবনের রূপ-রস-ভালবাসা-গান, অসীম, অথই।

৯.৪.২০১৩ মিলনমোড়, সিরাজগঞ্জ

সচিবালয় / সায়ীদ আবুবকর

এতদিন কেবল মানুষই উঠতো এ সিঁড়ি দিয়ে
উপর তলায়। কিছু গরু
আজকে হঠাৎ উঠে গেল মানুষের সাথে
পাশাপাশি। মানুষের সাথে কি-চমৎকার খোশগল্প
করতে করতে উঠছিল তারা! দেখে বলাবলি করছিল লোকে,
এখনই বরং সুন্দর লাগছে সব; এখনই বরং আদর্শ সচিবালয় বলে
মনে হচ্ছে এ সচিবালয়টাকে।

২৬.৫.২০১৩ মিলন মোড়, সিরাজগঞ্জ

মধ্যযুগীয় খেলা / সায়ীদ আবুবকর

বাড়িগুলো ধসে পড়ার আগেই যদি লোকগুলো বের হয়ে যেত, ফোনে কেউ আগাম জানিয়ে দিতো তাদেরকে, টিভি চ্যানেলগুলো সতর্ক করে দিতো আগেভাগে কিংবা যদি ঘুমের ভেতর ভূমিকম্প দেখে ‘ভূমিকম্প! ভূমিকম্প!’ বলে তারা চীৎকার করে উঠতো, তারপর খান জাহান আলির দরগায় গিয়ে লুটিয়ে পড়তো সিজদায়!

তারা ধরেই নিয়েছিল, তাদের সুরম্য প্রাসাদগুলোতে কোনোদিন অসুখবিসুখ, অভাবঅনটন, ঝড়ঝন্ঝা, মৃত্যু ও আজরাইল প্রবেশ করতে পারবে না। তাদের বুকের ভেতরে কেবলি কিলবিল করতো অবিশ্বাস. অহংকার ও কারুনের কার্পণ্য। যখন ভূমিকম্প এসে আকস্মিক পাকড়াও করে ফেললো তাদেরকে, হয়তো মরার আগে তারা এই কথা বলে উঠেছিল: আধুনিক কালে এসেও এ-কি মধ্যযুগীয় খেলা!

১৭.১১.২০১২ মিলনমোড়, সিরাজগঞ্জ

রেত / সায়ীদ আবুবকর

করাতে কাটে না, গুঁড়িগুলো তাই
পড়ে আছে অনাদরে;
নস্যি টেনে টেনে মিস্তিরির কাটে দিন;
তক্তা নেই, ফার্নিচারও নেই তাই।
রেতের অভাবে পড়েছে অচল হয়ে
সৌখিন কাঠের শিল্প তার।

১৭.১১.২০১২ মিলনমোড়. সিরাজগঞ্জ

লজ্জা / সায়ীদ আবুবকর

কেমন লজ্জার ব্যাপার না? আমি বললাম।

কিসের লজ্জা, বৎস?

এইভাবে বারবার তওবা করে করে তওবা ভঙ্গ করা, তারপর আবারও তওবা করা! একটা কুকুরও তো দশবার ভুল করে দশবার লাথি খাওয়ার পর ফিরে যায় না আর তার মনিবের বাড়ি।

লজ্জায় আমরাও যেতাম না ফিরে, যদি থেকে যাওয়ার মতো থাকতো কোনো ঠাঁই। হায়, মানুষ কোথায় লুকায় মুখ, তাঁর চোখ তো সবখানেই আছে ফেলা। এসব লজ্জার ব্যাপার নয়, বৎস; বাঁচামরার খেলা-খেললে খেলার মতো খ্যালো; তওবাই এ খেলার আসল কলকাঠি।

২২.৯.২০১২ মিলনমোড়, সিরাজগঞ্জ

ফকির / সায়ীদ আবুবকর

ছেঁড়া আলখেল্লা পরে একটি ফকির হো হো করে হাসতে হাসতে
দৌড়াচ্ছিল রাস্তা দিয়ে। আমি হাত ঊঁচু করে তাকে থামিয়ে দিলাম: কী ব্যাপার, এত হাসি কিসের? ভিক্ষেটিক্ষে কিছু চাই নাকি?

তওবা তওবা বলে সে দৌড়াতে লাগলো চোখবুজে। পশ্চাতে ফিরেও তাকালো না একটিবার।

কিছুদিন পর শহরের মাঝখানে তার সাথে ফের দেখা। অনেক দিনের পরিচিত কোনো মানুষের মতো কাছে এসে হাসতে হাসতে বললো, দেখুন কী কাণ্ড, এক ফকিরের কাছে আরেক ফকির চায় ভিখ!

-তাই নাকি?

সে হাসতে হাসতে বললো, সম্রাজ্ঞীর শাড়ি পরে এক ফকিরনি গেছে ভিন দেশী এক ফকিরের বাড়ি। কোট-টাইপরা ফকিরের কাছে ভিখ মাগে কোট-টাইপরা আরেক ফকির। ফকিররা সব ভিক্ষার মাল মজুদ করে সেজে আছে সম্রাট। বাড়ির মালিক, গাড়ির মালিক, মাঠের মালিক, ঘাটের মালিক, টাওয়ারের মালিক, পাওয়ারের মালিক বনে ধূর্ত শঠ ফকিরের দল মানুষকে ফেলে দেছে গোলক ধাঁধায়। পাখিরা অরণ্যে ঢুকে উদর পূর্তি করে খেয়ে যায় অরণ্যের ফল; কোনো পাখি এসে বাঁধ সেধে বলে না কখনও, এ বনের আমিই মালিক। পৃথিবীর পুষ্পে পুষ্পে মৌমাছিরা খুঁজে ফেরে তাদের আহার; তোলেনা প্রাচীর কেউ মাঝখানে এসে। মাটিতে শিকড় গেড়ে মুরগির বাচ্চার মতো যেন খুটে খুটে খায় বৃক্ষেরা আলো, বাতাস ও মাটিতে ছড়িয়ে দেওয়া তাদের রিজিক; কেউ নেই, বাঁধ সাধে তাদের খানায়। বিলিয়ন বিলিয়ন মাছ খানা খায় প্রতিদিন পানির সাম্রাজ্যে; বিলিয়ন বিলিয়ন পিপীলিকা খানা খায়; না, কোথাও কোনো দেয়াল নেই; দেয়াল কেবলি এ মানুষফকিরের সাম্রাজ্যে। হা হা হা, এক ফকির কেমন করে আরেক ফকিরের কাছে পেতে আছে হাত!- বলে সে হাসতে লাগলো অট্টহাসি।

-তোমার কি কিছু চাই নাকি?

তওবা তওবা বলে সে দৌড়াতে লাগলো চোখবুজে। পশ্চাতে ফিরেও তাকালো না একটিবার ।

২৩.৮.২০১২ মিলনমোড়, সিরাজগঞ্জ

মা / সায়ীদ আবুবকর

সে প্রথম চুম্বনের পর কেঁপে উঠেছিল থরথর করে, যেন
ঝড়ে কাঁপা কোনো অশ্বত্থের কচি ডাল। অতঃপর
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো সে সুপ্রিয় তার প্রেমিক পুরুষের
দিকে, যেন কোনো অবাক হরিণী।

সে প্রথম মিলনের পর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠে
নিঃসাড় হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর মুগ্ধচোখে
তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছিল সুঠাম তার প্রেমিক পুরুষের
বুজে থাকা প্রশান্ত চোখের পাপড়িগুলো।

সে প্রথম প্রসবের পর পুনরুত্থানের মতো জেগে উঠেছিল
একটি সুন্দর স্বপ্নময় পৃথিবীতে। বিশ্বময়
একটি পবিত্র কান্না শুনে সে চমকে উঠেছিল। অতঃপর
দুধের নহর বয়ে যাওয়া তার স্তনযুগল নবজাতকের ঠোঁটে
তুলে দিয়ে সেদিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলো নির্নিমিখ,
যেন হিমালয়ের চূড়ায় পা দেওয়া পৃথিবীর প্রথম নারী সে।

নবজাতকের গোলাপের মতো বেড়ে ওঠা দেখে
বারবার চমকে চমকে উঠতো সে প্রতিদিন।
প্রতিদিন তার ছোট্ট কুটিরটির পাশ দিয়ে হাঁটতে বেরুনোর সময়
আমি দেখতাম সে কেমন অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে
হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে চলা তার
পুত্রধনটির দিকে। মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে খোদাতালা বুঝি
এমনই মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছিলেন তাঁর সৃষ্টির সৌন্দর্য!

বহুদিন পর একদিন, সকালে হাঁটতে বেরিয়ে, থমকে দাঁড়ালাম
জীর্ণশীর্ণ তার কুটিরটির পাশে এসে। দাওয়ায় বসে সে
কেমন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো ছুটে চলা রাস্তার দিকে।
আমি তার কাছে গিয়ে বললাম, কী ব্যাপার, প্রিয় সেই
পুত্রধনটি কোথায়?

সে কেমন পাথরের মতো ভারী কণ্ঠে বলে উঠলো অস্ফুট,
সে তার সুন্দরী বউ নিয়ে এখন ধর্মতলায় থাকে।
কতদিন হলো, এমুখো সে ফিরেও তাকায়নি একবারও।

২১.৮.২০১২ নাটোর

ভয় / সায়ীদ আবুবকর

ভয় কোথায় গেল হে, বলতে বলতে লোকটা দৌড়াচ্ছিল ঊর্ধ্বশ্বাসে। আমি ছুটে গিয়ে বললাম, ভাই, কী খুঁজছেন এইভাবে? সে থমকে দাঁড়িয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বললো, ভয়! ভয়কে এ ফেরাউনের শহরে আমি পাচ্ছি না কোথাও খুঁজে।

হায়, এ শহরে ভয় ছাড়া কিছুই তো পড়ে না আমার চোখে- আমি বললাম, যেদিকে তাকাই, শুধু ভয়; বন্দুকের ভয়, কিরিচের ভয়, গলা কাটার ভয়, গ্রেফতারের ভয়, বিমান হামলার ভয়, দুর্ভিক্ষের ভয়, ছিনতাইয়ের ভয়, গুম হয়ে যাওয়ার ভয়- এতসব ভয়ের ভেতর হাবুডুবু খেয়েও আপনি ভয়কে খোঁজেন রাস্তায় রাস্তায় এইভাবে?

সে বললো, হ্যা, আমি সেই ভয়কে খুঁজছি, যা হারিয়ে এ শহর হয়ে গেছে জীবন্ত নরক, যা হারিয়ে হায়েনার হাত দিয়ে ছিঁড়েখুঁড়ে খাচ্ছে মানুষ মানুষেরই হাড়মাংস, স্বপ্ন ও আহ্লাদ। আমি সেই ভয়কে খুঁজছি, যে ভয় থাকলে বুকে সাহসে শরীর অগ্নিগিরি হয়ে যেত, যে ভয় থাকলে বুকে সাহসে হৃদয় আটলান্টিক ওশান হয়ে অষ্টপ্রহর উল্লাসে ছলাৎ ছলাৎ করে উঠতো। আমি সেই ভয়কে খুঁজছি, যে ভয় থাকলে বুকে সীমারের ছুরি, ফাঁসির কাষ্ঠ, উত্তপ্ত তেলের কড়াই, দুঃখদুর্দশা, জেলজুলুম ও অত্যাচার অবিচার কিছুই হতো না মনে; যে ভয় থাকলে বুকে, ইউসুফের মতো ছুঁড়ে ফেলে দেয়া যেত জুলেখার উলঙ্গ যৌবন, যেন ঘরমোছা ছেঁড়া কোনো তেনা; যে ভয় থাকলে বুকে, আসহাবে কাহাফের কুকুরের মতো অবিশ্বাসীদের এ শহর ছেড়ে চলে যেতো বিশ্বাসীরা অনিবার্য মৃত্যুর গুহায়।

আমি হতবাক হয়ে বললাম, সে ভয় কিসের?

আমার কর্ণকুহরে মুখ রেখে সে বললো, আল্লাহর। অতঃপর দুপুরের ছায়ার মতো সে মুহূর্তে মিলিয়ে গেল সভ্যতার ঝলসানো রোদ্দুরে। আমি আমার পোকায় খাওয়া হৃদয়ের অন্ধকারে হাতড়াতে হাতড়াতে ভাবতে লাগলাম, হায়, সেই ভয় রয়েছে কোথায়?

১৭.৮.২০১২ মিলনমোড়, সিরাজগঞ্জ

নাটকের মতো / সায়ীদ আবুবকর

কেমন স্বপ্নের মতো লাগলো সব। মুসলমানির ভয়ে যে-ছেলেটি বুনোগাছের মতো গজে ওঠা পাটখেতের ভেতর পালিয়ে থাকতো একদিন, সে কেমন মৃত্যুকে তুচ্ছ করে বক্ষ উদোম করে দাঁড়িয়ে রইলো নির্ভীক, সীমারের ছুরির সামনে। কোনো সুন্দরীর চোখে চোখ পড়লে ভীতু হরিণের মতো যে কেমন আড়ষ্ট হয়ে যেত লজ্জায়, সমস্ত সুন্দরীর কলিজাগুলো কেটে বস্তায় পুরে সে ডুবিয়ে দিলো কি-নির্বিঘ্নে ঘৃণার অথৈ জলে। কালো চুলগুলো কিভাবে সাদা হয়ে গেল, লোহার মতো শক্ত সমর্থ বাহুগুলো সজনে গাছের শুকিয়ে যাওয়া ডালের মতো হয়ে গেল নিষ্প্রাণ, জোয়ারের পানির মতো ফুলে ওঠা কথার ঢেউগুলো মরা ঘাসের পাতার মতো হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অনন্ত আকাশের দিকে। সব যেন নাটকের মতো, মণিহার সিনেমা হলে বসে কৈশোরের দেখা কোনো চলচ্চিত্রের মতো। তারপর একদিন একশ বছর পর এইসব কথা পড়ে কোনো ভাবুকযুবক বলে ওঠবে বিস্ময়ে, হায়, এইসব কথা যার মনে হয়েছিল একদিন পড়ন্ত বেলায়, কোন্ সে খেলার মাঠে সে এখন ব্যস্ত কিসের খেলায়?

১১.৫.২০১২ মিলনমোড়, সিরাজগঞ্জ

এ এমন এক জীবনকাহিনী / সায়ীদ আবুবকর

বাহির দেখলে মনে হয় পাকা, ভেতরটা খেয়ে গেছে পোকায়, এমনই একটি পেয়ারার মতো আমার দুর্দশা। চমৎকার বাঁশের খুঁটির উপর যেন দাঁড়ানো একটি আটচালা ঘর, সবগুলো খুঁটির পোতাই যার খেয়ে গেছে ঘুণে, ঝড় এসে ধাক্কা দিলেই যা উল্টে পড়বে ধুলোয়। অথবা একটি চোরাবালি যেন আমি, যার বুকে পা দিলে মানুষ তো ডোবেই, আমিও আমাকে নিয়েই ডেবে যাই জমিনের তলদেশে। কিসের আনন্দ আমার, আমি তো ঝড়ের কবলে পড়া একটি পুরোনো জলযান, যা আছাড়ি পিছাড়ি খাচ্ছে আটলান্টিকের বুকে। কোন্ সুখে বলো আপ্লুত হবো আমি, যখন উপড়ে পড়া বটগাছের মতো পড়ে আছি উৎপাটিত হয়ে মহাকালের বুকের উপর। এ এমন এক জীবনকাহিনী, যা পাঠ করতে এসো না, বন্ধু, কারণ তোমাকে এ নতুন কোনো আনন্দ তো দেবেই না, বরং তোমার ভেতরের আনন্দকেও নিরানন্দ করে দেবে, তিতা মিষ্টিকে যেমন মিষ্টি করে না, বরং মিষ্টির স্বাদকেও বিস্বাদ করে দেয়।

৩০.৪.২০১২ মিলনমোড়, সিরাজগঞ্জ

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: