বিলকিস বললো, ‘হে পারিষদবর্গ, আমাকে একটি সম্মানিত পত্র দেয়া হয়েছে। সেই পত্র সুলায়মানের পক্ষ থেকে এবং তা এই – অসীম দাতা, দয়ালু আল্লার নামে শুরু; আমার মোকাবেলায় শক্তি প্রদর্শন কোরো না এবং বশ্যতা স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হও।’ বিলকিস বললো, ‘হে পরিষদবর্গ, আমাকে আমার কাজে পরামর্শ দাও। তোমাদের উপস্থিতি ব্যতিরেকে আমি কোনো কাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না।’ তারা বললো, ‘আমরা শক্তিশালী এবং কঠোর যোদ্ধা। এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনরাই। অতএব আপনি ভেবে দেখুন, আমাদেরকে কী আদেশ করবেন।’ সে বললো, ‘রাজা-বাদশারা যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গকে অপদস্থ করে। তারাও এরূপই করবে। আমি তাঁর কাছে উপঢৌকন পাঠাচ্ছি; দেখি, প্রেরিত লোকেরা কী জবাব আনে।’- কোরআন ২৭ ॥ ২৯-৩৫
যখন মানুষ যুদ্ধ ও মৃত্যুকে ক্যান্সারের মতো ভয় পায়
বিড়ায় দেখলে ভয় পায় যেমন ইঁদুর;
যখন মানুষ যুদ্ধ ও মৃত্যুকে
মরে বাতাসে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ানো ইঁদুরের মতো ঘৃণা করে
যেমন জলকে ঘৃণা করে মাতাল কুকুর জলাতঙ্ক হলে;
যখন বন্দুক দেখলেই ভরা নদীর মতো গমগম করা উজ্জ্বল শহর
মুহূর্তে শ্মশান হয়ে ফাঁকা প্রান্তরের মতো খাঁ খাঁ করে ওঠে-
তখন সে জনপদকে কী নামে অভিহিত করা যায়?
যুদ্ধকে এড়িয়ে চলা তো শেবার রানী বিলকিসের স্বভাব, কেননা
রমণী মানেই হলো আত্মসমর্পণ করে
আগ্রাসি পুরুষত্বের নিচে শুয়ে শুয়ে চুলায় চড়ানো হাঁড়ির চালের মতো
সিদ্ধ হতে থাকা; আর পুরুষ তো চিরকালই সলেমান বাদশার মতো,
যাঁর অঙ্গুলি-নির্দেশে বিলকিসসহ বিলকিসের দেশও তাঁর পদতলে চলে যায়।
কিন্তু এ কেমন জনপদ, যেখানে যুদ্ধের নাম শুনলেই কলঙ্কিত পুরুষেরা
ডায়েরিয়ার রুগীর মতোই ছুটে গিয়ে শৌচাগারে ঢোকে?
এ কেমন হতভাগ্য দেশ, যেখানে নারী ও পুরুষেরা সমবেত কণ্ঠে
আকাশে বাতাসে যুদ্ধের কুৎসা রটায়?
পুরাকালে সম্মানিত রমণীরা বীর আর যোদ্ধাদেরই প্রেমদার হতো;
আর তারা সুপুরুষ প্রেমপতিদের জন্যে সাজিয়ে রাখতো ঢাল আর তরবারি,
যুদ্ধের দুন্দুভি বাজলেই যাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে
অতলন্ত যুদ্ধের সৌন্দর্যে; যখন সগর্বে গৃহে প্রত্যাবর্তন করতো তাঁরা,
তাঁদের পায়ের তলে আনন্দাশ্র“ আর হৃদয় বিছিয়ে দিয়ে স্বাগত জানাতো নৈঃশব্দে;
আর যদি তাঁরা শহীদই হয়ে যেতো, সারা জীবন তাঁদের জন্যে অহংকার করতে থাকতো,
পৃথিবীর জন্যে জ্যোৎস্নাকে উৎসর্গ করে যেমন অহংকার করে পূর্ণিমার চাঁদ।
রমণী যখন শরীরসর্বস্ব হয়, জরায়ুর চিন্তা ছাড়া
মহৎ কোনো চিন্তাই ঢুকতে পারে না তার ব্রেনে; কেবল তখনই সে
মিছিলের সুমিষ্ট শ্লোগান শুনলেই সাঁড়াশির মতো আঁকড়ে ধরে তার শয্যার সঙ্গীকে।
কিন্তু, হে রাসভ পুরষেরা, পুরুষের কী ক্যান্সার হলে
পুরুষরা এরকম কেঁচোর চেয়েও মেরুদণ্ডহীন হয়ে যায়? পুরুষের কোন্
যক্ষা হলে পুরুষরা এমন গাধার মতো প্রাণপণ বাঁচাও বাঁচাও বলে
আর্তনাদ করে ওঠে, আকাশে বাতাসে মত্ত করা যুদ্ধগান শুনলেই?
যখন মানুষ যুদ্ধ ও মৃত্যুকে
মরে বাতাসে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ানো ইঁদুরের মতো ঘৃণা করে
যেমন জলকে ঘৃণা করে মাতাল কুকুর জলাতঙ্ক হলেÑ
তখন সে জনপদকে বলা যায় অপদার্থদের দেশ, যেখানে কখনও
সূর্যোদয় হওয়া ঠিক না, বৃষ্টিবাদল হওয়া ঠিক না, জমিনে শস্য হওয়া ঠিক না।
হাজারিবাগ
১২.৫.১৯৯৮
Like this:
Like লোড হচ্ছে...