দাঁড়াও, পথিকবর, জন্ম যদি বঙ্গে / সায়ীদ আবুবকর

দাঁড়াও, পথিকবর, জন্ম যদি বঙ্গে;
দু’দণ্ড দাঁড়াও স্থির এ সমাধিস্থলে-
যেভাবে দাঁড়ায় বৃক্ষ মৃত্তিকার সঙ্গে;
মানুষ কি বাঁচে, হায়, শূন্যে কিংবা জলে!

যে-আকাশে থাক পাখি, ফিরে আসে নীড়ে;
কিন্তু সেই পাখি শ্রেষ্ঠ, যে-পাখি ছড়ায়
স্বদেশের গান মহা মানুষের ভিড়ে-
সারা দেশ নুয়ে পড়ে তার পদ্মপায়!

পিতা নূর মহম্মদ আর মা আমেনা,
সায়ীদ আবুবকর বঙ্গজের নাম
বক্ষ যার কপোতাক্ষ, যে-নদী থামে না,
ছোটে আর গান জোড়ে: ‘তোমাকে সালাম

জন্মভূমি রক্ষাহেতু যে যাও সমরে!’
এই গান, হে পথিক, নিয়ে যাও ঘরে।

এপিটাফ / সায়ীদ আবুবকর

দাঁড়াও, পথিকবর, জন্ম যদি বঙ্গে;
দুদণ্ড দাঁড়াও স্থির এ সমাধিস্থলে-
যেভাবে দাঁড়ায় বৃক্ষ মৃত্তিকার সঙ্গে;
মানুষ কি বাঁচে, হায়, শূন্যে কিংবা জলে!

যে-আকাশে থাক পাখি, ফিরে আসে নীড়ে;
কিন্তু সেই পাখি শ্রেষ্ঠ, যে-পাখি ছড়ায়
স্বদেশের গান মহা মানুষের ভিড়ে-
সারা দেশ নুয়ে পড়ে তার পদ্মপায়!

পিতা নূর মহম্মদ আর মা আমেনা,
সায়ীদ আবুবকর বঙ্গজের নাম
বক্ষ যার কপোতাক্ষ, যে-নদী থামে না,
ছোটে আর গান জোড়ে: ‘তোমাকে সালাম

জন্মভূমি রক্ষাহেতু যে যাও সমরে!’
এই গান, হে পথিক, নিয়ে যাও ঘরে।

৮.১১.২০১১ সিরাজগঞ্জ

বলো তারপর কোথায় আমরা যাবো / সায়ীদ আবুবকর

এত মৃত্যু, এত লাশ
এত ধ্বংসযজ্ঞ, এত সর্বনাশ
আর ছোপ ছোপ এত রক্তের উপর দিয়ে হেঁটে
হয়তো বা স্বপ্নের সে গেটে
পৌঁছে যাবো ঠিকঠিকই, যে রহস্যময় গেট খুললেই
সাফল্যের সাজঘর-
তারপর?

বলো তারপর কোথায় আমরা যাবো? ধু-ধু নীল
আকাশে কেবলি ওড়ে আজ বাজপাখি, শকুন ও চিল।
জীবনের রাজপথে ক্ষুধার্ত শেয়াল ডাকে।
সেই ডাক
টেনে আনে ঝাঁকে ঝাঁকে
কি-বীভৎস বন্য সব সাদা কাক!
মানুষের কান
শুনতে পায় না আর কোনো কোকিলের গান।
মানুষের চোখ
দেখতে পায় না আর সবুজা অরণ্য কোনো, শুধু দ্যাখে
বৃক্ষহীন, পুষ্পহীন এক জ্বলন্ত নরক।
এইসব জাহান্নাম পার হয়ে হয়তো সে সফলতা,
যার কথা
বলে চলে আমাদের ওষ্ঠ ও অন্তর-
তারপর?
বলো তারপর কোথায় আমরা যাবো?

যে-অর্জনে মানুষের খুন লেগে থাকে;
যে-অর্জন সভ্যতাকে
করে যায় ছিন্নভিন্ন, বিকলাঙ্গ, হীন;
যে-অর্জনে বাড়ে শুধু মানুষেরই দুর্ভোগ-দুর্দিন;
যে-সাফল্যে পথে পথে পড়ে থাকে অগণন মানুষের লাশ-
তাই নিয়ে হয়তো বা বিজয়উল্লাস
করা যায় পথে পথে, হয়তো বা সেইসব লাশের উপর
সদম্ভে দাঁড়িয়ে গাওয়া যায় বিজয়সঙ্গীতও- কিন্ত তারপর?

তারপরও আমরা কি রয়ে যাবো
মানুষের জাতি? তারপরও আমরা কি বয়ে যাবো
মানুষের মন, সুকঠিন আমাদের বুকের ভিতর,
নাকি আমরাও শেষমেশ হয়ে যাবো
দুই পেয়ে এক নিকৃষ্ট ইতর?

২৫.৭.২০১৪- ২৭.৭.২০১৪ বড় মসজিদ ও মিলন মোড়, সিরাজগঞ্জ

হেমন্তের ঘর / সায়ীদ আবুবকর

সেজেছে বাংলাদেশ চাটগাঁয় মাটির পাহাড়ে,
ধানসিঁড়ি-পুনর্ভবা-কপোতাক্ষ পাড়ে;

নতুন শিশিরে ভিজে-নেয়ে সারা
সিলেটের ঘাস আর নওগাঁর গাছের পাতারা;

বসিয়েছে শুভ্রমেলা সিরাজগঞ্জের কাশ
যমুনার দুই পাড়ে; পায়রার চোখ যেন সাতক্ষীরার আকাশ;

মানিকগঞ্জের মাঠগুলো, কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ি
পরেছে সরিষাশাড়ি;

সেজেছে বাংলাদেশ জামালপুর-ঠাকুরগাঁয়ে,
যে হাঁটে কবির বুকে ঊর্বশীর পায়ে।

প্রিয়তমা, ফিরে যাই চলো ফের পুনড্র নগরে,-
মসলিন শাড়ি পরে

খেলো তুমি প্রেমখেলা, আমি লখিন্দর
করোতোয়া পাড়ে ফের তুলে দেব হেমন্তের ঘর;

জানলায় দাঁড়িয়ে তুমি আদিগন্ত মেলে দিও চোখ,
দেখবে অমর্ত্যলোক

মর্ত্যে একটাই-
সে আমার বাংলাদেশ, কাহ্নপার কণ্ঠে আমি যার গান গাই।

১৩.১১.২০১২ মিলনমোড়, সিরাজগঞ্জ

তখন হে দেশবাসী / সায়ীদ আবুবকর

হৃদয়ে ভারত যার, বাংলাদেশ মুখে
আর যারা পাকিস্তান পুষে রাখে বুকে
এদেশ তাদের নয়, তারা পরগাছা;
এদেশের রক্ত চুষে তাদের এ বাঁচা
নরকে বাঁচার মতো, তবু অহঙ্কারে
চামচিকার পায়ে তারা জোড়া লাথি মারে
এদেশবাসীর বুকে, আর কুটজালে
আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধে দেশ।

যখন জঞ্জালে
ভরে গেছে পথঘাট, থেমে গেছে গতি,
তখন হে দেশবাসী, শোনো এ মিনতি
আমার, যেভাবে সূর্য গৃহে ও গুহাতে
সরায় আঁধার, এসো আমরা দুহাতে
সেভাবে সরাই আজ আবর্জনা যত,
সমুদ্রে আছড়ে পড়া ঝটিকার মতো।

৮.১০.২০১৪ মিলনমোড়, সিরাজগঞ্জ

আমাদের একমাত্র কথা / সায়ীদ আবুবকর

এইসব ফুল, নদী, নারী-
হয়তো বা ভুলে যেতে পারি;
ভুলে যেতে পারি বেচাকেনা,
গঞ্জের চায়ের স্টল, চেনা
রাস্তাঘাট, ব্রিজ, খালবিল;
পারি আকাশের গাঢ় নীল
যেতে ভুলে, আর ভরা চাঁদ,
সর্ষে বাটা ইলিশের স্বাদ;
আরো যদি চাও, দাদা, পারি
ভুলে যেতে তরিতরকারি-
সবজির খেত, ঘর, গোলা,
খেজুরের রস, গুড়, ছোলা;
এত পথ পার হয়ে এসে
ভুলে যেতে পারি অবশেষে
সূর্যাস্ত, দুপুর, সূর্যোদয়;
শুধু জেনো অনড় অক্ষয়
আমাদের একমাত্র কথা:
স্বদেশ এবং স্বাধীনতা।

২২.১০.২০১৩ মিলনমোড়, সিরাজগঞ্জ

ভাষার অমর্ত্যলোক / সায়ীদ আবুবকর

ভাষা তো হৃদয়ে জন্ম নেওয়া উচ্ছ্বাস- নিশব্দ, নিশ্চুপ;
আর ভাষার চিত্রিত রূপ
দুচোখের সব ছবি। মানুষ তো চলমান ভাষা, পাহাড় নিশ্চল-
আর মহাসমুদ্রের ফেনায়িত জল
অফুরন্ত শব্দময়
যেন এক বঙ্কিম হৃদয়।

অরণ্যের সব ফুল, ভাষা এক- রূপসী, সুগন্ধী;
সুরের খাঁচায় বন্দী
ডানা ঝাপটানো ভাষা অরণ্যের যত পাখি; আর নিশীথের নক্ষত্ররা
যেন নিশব্দ লিরিক, সুরের আলোয় ভরা।

কিন্তু, প্রিয়তমা, ভাষার অমর্ত্যলোক
শুধু তোমার দুচোখ।

৭.৮.২০১৩ নাটোর

বৃষ্টি / সায়ীদ আবুবকর

বন, নদী, গ্রাম, মাঠ ভিজছে বৃষ্টিতে,
ভিজছে মাঠের গরু, শালিকের ঘর;
রোমাঞ্চিত কায়া আজ সুখসুখ শীতে,
দুধজলে ভিজে যায় বাউলঅন্তর।

বাউলঅন্তর যায় ভিজে পুরোপুরি
যেভাবে কাকেরা ভেজে দলবেঁধে ছাদে;
কোন্ কালে কে অন্তর করেছিল চুরি,
সেই শোকে গৃহকোণে কেউ যেন কাঁদে!

গৃহকোণে চোখে কারো বয়ে যায় নদী,
আকাশ যে কার শোকে কেঁদে জার জার!
যত দূর চোখ যায়, অথই জলধি
যত দূর মন যায়, প্রণয়পাথার।

বৃষ্টি! বৃষ্টি! বৃষ্টি! আহা, ঝরে ঝরঝর-
ভিজে গেছে দুধজলে বাউলঅন্তর।

২৮.৭.২০১৩ মিলনমোড়, সিরাজগঞ্জ

বেহুলাবধূ / সায়ীদ আবুবকর

এখানে যখন সন্ধ্যা ঘনায়
তোমার ওখানে দিনের শুরু;
রাত্রি এগোয় সাপের ফণায়,
কাঁপে আতঙ্কে হৃদয়, ভুরু!

ওখানে যখন রাত নেমে আসে,
দোয়েলেরা দেয় এখানে শিস;
তরাসে তোমার গা ঘেমে আসে,
যেনবা বাতাসে সাপের বিষ

লোরেনা আমার বেহুলাবধূ,
আর নয় দুই কিনারে বাস;
এক ফুলে হবে আমাদের মধু,
এক মাঠে হবে প্রেমের চাষ

চার চোখে যেন দেখি এক ভোর
দু-হৃদয়ে এক রাত্রি ছুঁয়ে;
ভালবেসে হবো কালের কবর
পাশাপাশি এক জমিনে শুয়ে

২.১০.২০১২ মিলনমোড়. সিরাজগঞ্জ

তাকে দেখলে চিনি / সায়ীদ আবুবকর

তাকে দেখলে চিনি, মনে নেই বাড়িঘর।
মুখ মনে আছে, চোখ মনে আছে, ভুলে গেছি শুধু তার
গোলাপি অন্তর।

২৮.৪.২০১২ ইংরেজি বিভাগ, সিরাজগঞ্জ কলেজ

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: