আমার কাছে জীবনটাকে কেমন যেনো খটকা লাগে
দিনের শেষে রাত আসে না রাত আসে ঐ দিনের আগে
মানুষ কেনো অর্ধমৃত ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দ্যাখে
দিনের বেলা সেই কি নিজে নতুন দিনের ভাগ্য ল্যাখে
সবার আগে খটকা লাগে মন আগে না মানুষ আগে
আমার কাছে জীবনটাকে কেমন যেনো খটকা লাগে।
পৃথিবীতে প্রেমহীন কেউ আর থাকবে না / সাইফ আলি
পৃথিবীতে প্রেমহীন কেউ আর থাকবে না এমনি সে সুর
ভেসে ভেসে রাত্রিভর বাতাসের বুক চিরে তোমাদের কাছে
যেতেই তোমরা সব বিস্ময়ে হা হয়ে গেলে- আজো আছে
এমন পাগল এই পৃথিবীতে; আজো যারা সকাল দুপুর
আজগুবি কথা বলে, মিছেমিছি পিটায় এ ঢোল-
পায়রার পিঠে চড়ে শান্তি বেগম এলেন, বলে গেলেন
পৃথিবীতে আর কোনো অশান্তি নেই, যুদ্ধ নেই
নেই কোনো যুদ্ধবাজ এইসব আবোল-তাবোল।
পৃথিবীতে প্রেমহীন কেউ আর থাকবে না এমনি সে সুর
উপহাস ঠেলে ঠেলে সকাল দুপুর
তবু ছুটে যায়
দরজার কড়া নাড়ে; জানালায় বসে
দ্বিধাহীন বসে পড়ে ভাঙা চোকিটায়
পৃথিবীতে প্রেমহীন কেউ থাকবে না আর
বলে বার বার…
আজ শুধু / সাইফ আলি
বৃষ্টিক্লান্ত সন্ধ্যার পথে
রাতের অন্ধকার পায়ে পায়ে এসেছিল
আমার উঠোনে
আমি তার করিনি দাওয়াত
কুরসিও দিইনি এগিয়ে
শুধু অন্ধের দুইখানা হাত
ছুঁয়েছিলো শীতল শরীর-
মেঘের চাতাল থেকে ফিরে আসা শীতল বাতাস
দরজার পাল্লা নাড়িয়ে
হুড়পাড় ঢুকে গেলো ঘরের ভেতর
আকাশে তখনো ম্লান আলো
সে আলোয় দোল খায়
অন্ধকার বৃক্ষের ডাল
আজ শুধু মেঘছেঁড়া পূর্ণিমা চাঁদের আকাল।
একা পথ একা পথিক / সাইফ আলি
একি পথ তুমি একা পড়ে কেনো ভরা রোদ্দুরে
কোথায় তোমার অগণিত সব ভক্ত পথিক
তুমি দেখি আজ আমার মতোই একাকি প্রেমিক
আমার মতোই চিনতে পারোনি চেনা বন্ধুরে।
আমার মতোই কেটে গেলো সারা সকাল সন্ধ্যা
নির্জনে একা নির্বাক চেয়ে অসীম প্রান্তে
তবু কেনো আজ এলো না পথিক একথা জানতে
তোমার এ বুকে পড়েছিলো কিনা রজনিগন্ধা।
এতো ভালোবাসা কোথায় পেয়েছো খসখসে গায়
সেও শুধু বলে আমার শরীর কৃষ্ণ পাথর
সে পেয়েছে দেহ-রক্ত-মাংশ-কামুক আতর
পৌঁছেনি কভু হৃদয় গভীরে ভরা জোসনায়।
তোমাতে আমাতে এতো মিল যদি আজ এ বেলায়
তুমি হও আমার একাকিত্বের পরম সঙ্গী
আমি আর তুমি অসম্ভবের বাঁধন ভঙ্গি
এক হয়ে যাই পথ-পথিকের এই মোহনায়।
এখন আমি অতীত হবো… / সাইফ আলি
এবার শীতে-
কুয়াশার চাঁদর গায়ে জড়িয়ে যখন
বসন্তের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম
ঠিক তখনই তোমার রুক্ষস্বর আমাকে জানিয়ে দিলো –
গ্রীষ্ম সমাগত। অথচ-
গ্রীষ্ম কোথায়…!!
এ দেখি বর্ষার প্লাবনে বুকের চাতাল ভিজে একাকার-
এরপর-
প্রকৃতির সকল নিয়ম ভঙ্গ করে
অনাকাক্সিক্ষত সময়ের আবির্ভাবে
হতচকিত আমি
নদীতীরে বসে
অপেক্ষায়…
ভেবেছিলাম-
এবার বুঝি সত্যি সত্যিই সাদা মেঘের ভাঁজে
এবং কাশের বনে দেখতে পাবো
শরতের অলিখিত আগমন।
অথচ, কই?
এই মুহূর্তে শুনতে পেলাম-
অনাগত ভবিষ্যৎ আমাকে ত্যাগ করেছে।
এখন আমি অতীত হবো…
সময়ের উল্টো স্রোতে সাঁতরে যাবো বহুদূর…
যতদূর গেলে ‘অপেক্ষা’ শব্দটির আর কোনো অর্থ থাকে না।
আহারে বোকা চোখ / সাইফ আলি
ধোঁয়াটে মেঘগুলো চোখের পর্দায়
কখনো সাদাকাশ কখনো বালুচর,
কখনো জানালায় আলতো এলোমেলো
চুলের কারুকাজ কাঁপছে থরথর।
আমি কি অদ্ভুত ভেবেছি গাঙচিল
ছুঁয়েছে বালিয়াড়ি ভিজেছে মরুমন,
অথচ ঘাসফুল, সে ছিলো ফুলহীন
কুয়াশা ঝরেছিলো সকালে কিছুক্ষণ।
আহারে বোকা চোখ কি তোর দৃষ্টি
মেঘ না উড়তেই ভেবেছি বৃষ্টি।
দূর থেকে দেখলাম / সাইফ আলি
দূর থেকে দেখলাম
আকাশটা মেঘময়
বৃষ্টি বালুচরে জমায় কর্দমা…
আলতো কাশফুল বাতাসে কাঁপছিলো
মায়াবী রোদ্দুরে হালকা তাপ ছিলো
অথচ কাছে যেয়ে হাতটা ছোঁয়াতেই
বুঝেছি নদী নয় তা ছিলো নর্দমা
বৃষ্টি ডাস্টবিনে জমায় কর্দমা।
দূর থেকে দেখলাম
আকাশটা পাখিময়
সোনালী রোদ্দুরে পালক উড়ছিলো…
চোখের পল্লবে মোড়ানো কুঁড়ি তাই
ফুটলো ফুল হয়ে অবাক ইশারায়
অথচ কাছে যেয়ে দেখেছি পাখিহীন
আকাশ জুড়ে শুধু পালক পুড়ছিলো
বেগুনি রোদ্দুরে বিমান উড়ছিলো।
ধরা যাক, কেউ আর নেই / সাইফ আলি
ধরা যাক, কেউ আর নেই
পেছনে ডাকার মতো ইতিহাস লেখা নেই কোনো
আষাঢ়ের মেঘে, ছেয়ে গেছে রূপালী রোদ্দুর…
সেদিনের কথা, বিকেলের ধানী ক্ষেত মাড়িয়ে দিয়েছে কেউ এসে
মই দিয়ে কি দারুণ আবার নতুন বীজ ছড়িয়ে দিয়েছে সারা মাঠে
নতুন বৌয়েরা সব বুড়িয়ে গিয়েছে যেনো কাখের কলসিগুলো রেখে
কাঁপা কাঁপা পায়ে, লুটায়ে সফেদ শাড়ি, আনমনে পান নিয়ে মুখে
জাবর কাটছে তারা সারাদিনমান…
কাজ নেই কাম নেই, নেই কোনো জরুরি তলব
মাঠের কঠিন স্বামী আজ আর ঘাম মুছে বসবে না খেতে;
আচল শুকিয়ে গেছে, তালপাখা বিলুপ্তির পথে,
বুড়োবট হারিয়েছে মান,
ছায়া দেবে পাতা কই, শিকড় অলস থাকে ঝুলে-
সবুজ বালক কই, দোল খাবে কারা, মারামারি-হাতাহাতি করে
কারা আজ বন্ধু হবে- জীবনের মতো,
মেঘ-রোদ-বৃষ্টির মতই, দাপিয়ে বেড়াবে কারা শৈশবের পথে,
স্মৃতির নাটাই নিয়ে, লাট খাওয়া প্রাণের তাড়নায়…
মাজন মলিন হয়ে গেছে, নির্ঘাত কেটে যাবে ঘুড়িটা
অন্য কোনো ধারালো মাজনে…
হঠাৎ কবে যে / সাইফ আলি
এখানে কোথাও এসেছিলে তুমি মনে কি পড়ে
হেলায় ফেলায় ভেলায় ভাসিয়ে সবুজ গাঁয়
মাঠের ফসলে, পিঠার হাঁড়িতে, গাছের ছায়
এসেছিলে তুমি সবার বাড়িতে কাটাতে দিন।
হঠাৎ কবে যে উধাও হয়েছো পাইনি ঠিক
এখন শুধুই ফাঁকা মনে হয় চতুর্দিক-
এখানে কোথাও এসেছিলে তুমি মনে কি পড়ে
এই নদীটার বুক ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছোটা বাতাস
তোমাকে এনেছে; তুমি এনেছিলে শুভ্র কাশ
সবুজ ঘাসের বুকে বুনেছিলে ফুল রঙিন।
হঠাৎ কবে যে উধাও হলে তা পাইনি ঠিক
এখন শুধুই চর জেগে আছে চতুর্দিক।
সংলাপ / সাইফ আলি
দুঃখ এসে একদিন সম্মুখে বসল আমার
সমস্ত শরীর জুড়ে ফেলে নিঃশ্বাস
বলল- মানুষ,
আজ থেকে তোমার আমার নিত্য বসবাস।
সে আমার বোধের প্রথম ভোর-
এরপর থেকে বিরতিহীন দুঃখের ছায়া
আশীর্বাদ হয়ে থাকে মাথার উপর।
সুখ-পাখি, এসেছিলো সেও
জানালায় বসে তার মিষ্টি মিহি সুরে
বলেছিলো- শোনো,
আমাকে দেখতে পাবে ভোরের মিষ্টি রোদে,
আলোর দুপুরে,
বিকালে, গোধূলিবেলা, সন্ধ্যার বন্দর জুড়ে;
আমাকে দেখতে পাবে রাতের বাজারে
তোমার আশেপাশে-
যদি পারো কাছ থেকে- দূর থেকে দেখো
বাধতে যেও না যেনো সোনার নূপুরে।
আমি কি অধম হায় ভুলে গিয়ে সব
করলাম তাই;
সোনার নুপুর এনে পরালাম পায়।
সোনার অসুখে পাখি সেই থেকে ভোগে
দুঃখ হয় চিরসাথী সুখের বিয়োগে।