এই দিনগুলো বেঁচে থাক / ফজলুল হক তুহিন

আহা, কি স্নিগ্ধ পবিত্র দিন!
সূর্যালোকে প্লাবিত পৃথিবী কি অমলিন!
আমার সত্তাও হতে চায় এ রকম স্বচ্ছ নীল আকাশের বিশাল আঙিনা।
কাশফুল সাদা, বকসাদা মেঘ আমার উড়ন্ত স্বপ্ন আরো
দূর দিগন্তে রূপকথায় করে সঞ্চার।
সবুজের যৌবনে রোদের অনুরাগ কি শুভ্র জীবনস্পন্দন
জানালায় জানালো পূবের হাওয়া প্রশান্তির অভিনন্দন
শিশিরের ঘাসচাখে সূর্যের রক্তপ্রদীপ মনে করে দেয় এক নারীর চোখ।
দৃষ্টির সীমায় আমাদের এশিয়ার আকাশ কেমন মেঘদৈত্যহীন
আহা এই দিনগুলো বেঁচে থাক চিরদিন
এই দিনগুলো হোক চিরজীবী।

হায়, হাওয়ায় হাওয়ায় কড়ইয়ের পাতাগুলো কি রকম ঝরে যায়!
আমাদের সুখগুলো যে রকম ঝরে যায়
আমাদের স্বপ্নগুলো
আমাদের সাধগুলো!
আমাদের ফাঁপা আত্মাগুলো ঘরগুলো কি রকম শূন্যে শূন্যে ভরে যায়!

দ্যাখো, দ্যাখো সবুজেরা ক্রমাগত হয়ে যাচ্ছে বর্ণহীন
আকাশেরা নীলহীন!
আমাদের ফুসফুস যেভাবে অনবরত আয়ুহীন
আমাদের নদীগুলো গতিহীন
আমাদের স্বাধীনতা অর্থহীন!
এই দিনগুলো দূর হোক
এই দিনগুলো হোক ক্ষণজীবী।

১৫.১০.২০০২

বাড়িতে কী যেন আছে / ফজলুল হক তুহিন

বাড়িতে কী যেন আছে
যতক্ষণ থাকি আমি কেমন স্বস্তির আরামে নিশ্চিন্ত নির্ভার
নীলিমা সাগরে পালতোলা মেঘনাও মনে হয়।
ক্লান্তি, সংশয়, অস্বস্তি, অস্থিরতা, ভয় ও দ্বিধার বৃষ্টি
একদম ঝরে না আমার ভেতরে।
বাহির হলেই পৃথিবীর পথে বুঝতে পারি কে যেন ডাকে বাড়ি থেকে-
রক্তে আমার ভাটির সুর বাজে।
উজান হাঁটায় আমি টের পাই-
কী যেন আমায় ক্রমাগত টানতে থাকে, টানতে থাকে
মনে হয় সমস্ত শান্তির উৎস তার কাছে
বাড়িতে কী যেন আছে।

মায়ের মমত্বে আর আব্বার শাসনে বেড়ে ওঠার আশ্রয়?
আত্মীয়ের সহজ মুখের সান্নিধ্য
দিনযাপনের ছোট্ট আবহে আসক্তি
আমাদের মাটির উঠোনে জোছনায় ভিজে ভিজে হাঁটার আনন্দ
কিশোর কড়ই গাছটার ছায়ার প্রশান্তি
পূবের ও দখিনের জানালায় স্বাপ্নিক হাওয়ার সুখ
আমার লাগান ডালিমের ডালে স্বাধীন উচ্ছ্বাস চড়–য়ের
বারান্দায় বসে বসে রোদবৃষ্টির আবেগ অনুভব
না এ জলবায়ু আমার রক্তে অভ্রান্ত নিয়তির সাথে একাকার?

বুঝি না বাড়িতে কি আছে
শুধু জানি বাড়িই আমার সূর্য আর আমি নিজ কক্ষপথ চলা এক অনুগত গ্রহ,
এর ব্যতিক্রমে রক্তে আমার জাগে অব্যর্থ দ্রোহ।

২৫.১০.২০০২

নিঃসঙ্গ নির্জনে দার্শনিক / ফজলুল হক তুহিন

আমি এখন কঠিন ব্যধিগ্রস্তের মতন ভীষণ আতঙ্কগ্রস্থ, অস্তিত্বের প্রশ্নে
উদ্বিগ্ন! হতাশা, ব্যথা, হাহাকার, মনস্তাপ, উদ্বেগ আমাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরে
শূন্যতায় অগ্নিকুন্ডে ফেলে দিচ্ছে! সাংঘাতিক অসহায়
আমি জীবনের এ প্রহরে।
এক অজানা ভীতির তরঙ্গে জীবন কেঁপে কেঁপে উঠছে ক্রমেই ধীরে,
সংগপনে।

সূক্ষ্ম এ ভীতির শেকড় খুঁজতে খুঁজতে অদৃশ্য অন্ধকারময় ও রহস্যময়
এক দৈত্যের সমুখে হয়েছি হাজির! যাকে কাছে পাওয়া যায় না
যার সঙ্গে এই
মুহূর্তে হয় না আলিঙ্গন; কিন্তু বুঝতে পারছি ঠিক সে আসবে আমার কাছেই
ভিক্ষে নিতে নয়, সরাসরি আমার অস্তিত্ব কেড়ে নিতে
আসবে সে কঠিন সময়।

মৃত্যু! সত্যিই ভয়াল মৃত্যু! আসবে সে দুয়ারে ছিনতাই করতে আমাকে!
কল্পনার দু চোখে দেখছি মৃত্যুর ওপারে রহস্যময় প্রতিটি সিঁড়ির প্রান্তর
এখানে নিজেকে সঙ্গীহারা কঠিন বিপদেপড়া মুসাফির মনে হচ্ছে
লক্ষ ডাকে
কাউকে যাচ্ছে না পাওয়া কিছুতেই- ভাবতেই এইসব
ঘেমে যাচ্ছে শরীর অন্তর।

নিঃসঙ্গ নির্জন এ দুপুরে যন্ত্রণার কাঁটাতারে আটকে যেয়ে এ বুকে রুদ্ধশ্বাস
আর তাই হে মানবী, চেতনার এই অবিশ্রাম যুদ্ধ থেকে বাঁচাতে, তোমাকে
নিয়ে আসি কল্পনায়- আমার পাশে উজ্জ্বল হয়ে উপস্থিত তুমি জীবন্ত সুবাস
অতঃপর আমাদের নিজস্ব জগতে ভালোবাসা মেখে আলোকিত করি বিশ্বটাকে।

বিবেকের প্রতিনিধি / ফজলুল হক তুহিন

পিচের সড়কে হেঁটে চলি, চলে কবির শরীর।
লাইট পোস্টের আলো রাস্তার মসৃণ পিঠে পড়ে
কাঁদে আর কাঁদে। টিপটিপ বৃষ্টির পালক ঝরে
নিসর্গে, সড়কে, জোনাকীর নীল ডানায়, কবির
জমার জমিনে আর চায়ের স্টলের ফুঁটো চালে।
রিকসার টুংটাং শব্দে ও নৈশব্দে ওড়ে পাখি।
সন্ধ্যের নরম অন্ধকার দেহে করে মাখামাখি
আর নক্ষত্রের মুখ চলে যায় দৃষ্টির আড়ালে।

হেঁটে চলি তবু একা গন্ত্যের স্বাপ্নিক প্রান্তরে
কেউ নেই সাথে আর! উর্দ্ধে ওঠে ক্ষোভের হাতুড়ি-
উথাল পাথাল করে শিরা উপশিরা অভ্যন্তরে।
বিস্ফোরণ হয়- ভাঙি বিশ্বাসের আর আস্থার নুড়ি।

কাউকে ভাবব না আর বিবেকের যোগ্য প্রতিনিধি
বলব না কিছু, যদি ভাঙে যে কেউ সৃষ্টির বিধি।

০৯.০৭.১৯৯৯

নারী নদী ও নিসর্গে / ফজলুল হক তুহিন

[কবি আল মাহমুদকে]

নারী নদী ও নিসর্গে কিভাবে আপনি পান বিশ্বাসের ঘ্রাণ?
কিভাবে দেখতে পান মিথ্যাবাদী রাখালের মতো ভবিষ্যৎ!
কী করে সাহসী হন পালক ভাঙার প্রতিবাদে সুবৃহৎ!
ভাবতেই এসব হই বিস্মিত, রঞ্জিত- আশাবাদী হয় প্রাণ।

বখতিয়ারের সেই দীপ্ত ঘোড়ার ক্ষিপ্র খুরের শব্দ শুনি
যখন মায়ের মতো শোনান গল্প, দেখান স্বপ্ন; আকাঙ্ক্ষিত
স্বদেশের জন্যে আমি যখন শ্লোগান তুলি, বিপুল প্রাণিত
করেন, আশ্বস্ত হই- কৃষকের মতো বিশ্বাসের বীজ বুনি।

জীবনের যুদ্ধ, প্রেম ও আদিম কামনার স্বচ্ছ বর্ণচ্ছটা
সবুজের মতো প্রাণময় করে সেলাই করেন ক্রমাগত,
বোধের উৎস খুঁজে পাই অতীত ও রহস্যের সবকটা
দরজা খোলেন দক্ষ দু হাতে যখন। দুঃখ মৃত্যু অবিরত
ঝরে পড়ে কড়ই পাতার মতো। জীবন্ত স্বপ্নের সানুদেশে
তাই আপনার সাথে পৌঁছবো পেছনে ফেলে সব সর্বনেশে।

১২.০৭.১৯৯৯

স্মৃতির আলো দৌড়ে আসে / ফজলুল হক তুহিন

স্মৃতির আলো দৌড়ে এসে কড়া নাড়ে দুয়ারে
জেগে উঠে দু ভাগ হই অতীতে আর বর্তমানে
জীবনের এই দু ধারে।

স্মৃতি তুমি বড্ড বেশী জ্বালাও পোড়াও মন
স্মৃতি তুমি অন্তরে নীল সুখের প্রস্রবণ।
পালতোলা এক নাওয়ে চেপে পদ্মা নদীর ঢেউয়ে
সে আর আমি আবেগ হাওয়ায় মুহূর্তে হই আপন।

স্মৃতি আমার যন্দ্রণাময় নিঃসঙ্গতার মলম
স্মৃতি আমার প্রাণ প্রবাহ, প্রেরণার এই কলম।
সে আর আমি হেঁটে চলি ঢেউ ছোঁয়া সেই পাড়ে
পায়ের চিহ্ন যায় না মুছে, যায় না ক্ষয়ে চুম্বন।

১৬.০৩.২০০০

আমরা এখন / ফজলুল হক তুহিন

(আফ্রিকা মহাদেশের দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের কন্ঠস্বর)

আমরা এখন আমাদের সম্বল মাথায় করে রোদপোড়া রাজপথ ধরে
শরণার্থী শিবিরের খোঁজে একপাল শঙ্কিত মেষের মতো হাঁটছি তো হাঁটছিই।
লক্ষ বছর অভুক্ত পথচলা যেন হয়ে গেছে, তবু একটু রুটির ঘ্রাণ
কিংবা আলুনি খিচুড়ির সন্ধান পাই নি আজও। পেয়েছি শুধু
ধু ধু প্রান্তর। যেখানে লাল রক্ত আর দুর্গন্ধ বারুদ মিলিমিশে হয়ে গেছে এক
জ্বলন্ত নরক! হাঁটছি তো হাঁটছিই কঙ্কাল শরীর নিয়ে যুদ্ধপোড়া সড়ক ধরে।

অবশেষে লক্ষ মানুষের গ্রাম্য হাটের মতন এক মৃত্যু মৃত্যু গন্ধ পাওয়া
মর্মন্তুদ শিবিরের পেলাম খোঁজ। যেখানে মৃত্যু, ক্ষুধা, আর্তনাদ
ছড়ার মতো সহজ।
যেখানে এক টুকরো খাবার পাওয়া পাথরে গোলাপ ফোটানোর মতই
নারীর যৌবন এক মুঠো ছাতুর মূল্যের সমান।

আমাদের সন্তানেরা আমাদের বুকের ধনুক হাড় গুনেগুনে
এখন নামতা শেখে
আমাদের মৃতপ্রায় শরীরগুলোকে লাশ ভেবে শকুন উড়ে।
মরা খাওয়া মাছিরাও ওড়াওড়ি করে শরীর জুড়ে
ছেলের লাশের পাশে জীবন্ত লাশের স্তূপ হয়ে পড়ে রই-
যুদ্ধ, মৃত্যু, দুর্ভিক্ষ ও শোকের দুর্ভেদ্য অন্ধকূপে মরছি আমরা জ্বলেপুড়ে।

আমাদের ভালোবাসা হৃদয় এখন গণকবরে পচতে থাকা
একটি লাশের মতো
পৃথিবীর মানুষেরা তাই গ্যালারিতে খেলা দেখতে থাকা দর্শকের মতো
দারুণ উৎফুল্ল।
নিঝ্ঝুম রাত্রিতে শুনতে পাই কারা যেন জাহাজ বোঝাই ফসল ফেলছে সাগরে
আর জীবনের গহ্বরে আমরা স্বপ্নহীন পড়ে রই সভ্যতার চোখের আলোয়।

১০.০৫.১৯৯৭

আমার কোথাও আর যাবার নেই / ফজলুল হক তুহিন

#
আমার কোথাও আর যাবার নেই- আমার গ্রহ এখন সংকীর্ণ,
দু পা ব্যক্তিগত বৃত্তে, ইচ্ছেয় আবদ্ধ।
কারও জন্যে অপেক্ষা করার নেই- আমার বন্ধুরা সব মরে গেছে।
অথচ তারা চলতে পারে, বলতে পারে!
আগ্রহও নেই আর মানবিক অস্তিত্বের সংস্পর্শ চাওয়ার-
বড্ড ক্লান্ত হয়ে যাই; বিপন্ন, বিষন্ন হয়ে যাই মানুষের কাছে গেলেই।
আকাঙ্ক্ষা করি না আর কারো থেকে কিছু পাওয়ার-
এমন কাওকে তো দেখছি না যে আমাকে দিতে পারে ভালোবাসার পরাগ।
এখন শুধুই
সঙ্গী আমার নিসর্গ, সঙ্গী আমি হাওয়ার।

#
ঘুমের পাহাড় থেকে- মৃত্যুর নীলিমা থেকে চেতনার আঘাতে বৃষ্টির মতো
নেমে এলাম। এলাম নেমে যেখানে আমার সাথে রোজ রাত্রি করে বসবাস।
অতঃপর নেমে এলাম পিচের পথে- পৃথিবীর পথচলা সড়কের কালো পীঠে।
রোদের জীবন জ্বলে ওঠেনি এখনো। দু পাশে আমার সহযাত্রী-
নিসর্গের বুকে ডুব দেব বলে ফেরালাম দু চোখ, দেখেই চমকিত
হলাম। আশ্চর্য সচকিত হলো ইন্দ্রিয়ের শসস্ত্র সৈন্যরা!
সরল সৌন্দর্য এ কি! বিধ্বস্ত, বিশৃঙ্খল, এলোমেলো?
কি করে হয়ে গেলো এমন সহজ বন্যরা?

#
আমার সাথে বাতাস এখন কথা বলে- বাতাস এখন কথা বলে।
সবুজ ঘাসের চোখের নীলে জীবন জ্বলে ওঠে। সব রহস্য সব অনন্দ
সূর্যোদয়ে ও সূর্যাস্তে প্রাণ ছড়িয়ে রঙ উড়িয়ে গোলাপ হয়ে ফোটে।
আমার সত্তা নিয়ে আমি হেঁটে চলি নিসর্গ হৃদয়ে।
এখন আমি অনেক দূরে তেপান্তরে গেছি চলে
কিন্তু আমার মুখ বিরহে সবার সাথে কথা বলে।

বিস্ময়ে চোখ সবার দিকে চেয়ে থাকে।
প্রাত্যহিকের গ্লানিগুলো ঢেউ খেলে যায় মন পবনের বাঁকে বাঁকে।

#
ঝড়ের নখে বিপর্যস্ত নিসর্গ এই- বন্ধু আমার।
পথের নিচে কাঁচা পাতা শুকনো পাতা আমের মুকুল লুটিপুটি
খাচ্ছে করুণ দশায়। জলে ভিজে নাগরিক আবর্জনা
জবুথবু, আলুথালু। সামনে দেখি রাস্তা জুড়ে রক্তাক্ত এক
বিশার ডালের দেহ আছে পড়ে অচেতনে- নিথর হয়ে।
পাখির বাসা ইলেকট্রিকের তার ছড়িয়ে খড়কুটোতে মিলেমিশে সত্যি যেন
ধ্বংস হওয়া গ্রজনি শহর!

#
আশ্চর্য বিস্ময়ে চোখ আমার উজ্জ্বল হয়ে ওঠে,
চকচক করে স্বস্থি ও আনন্দে। আস্থার সমুদ্রে
বোধের নাবিক গেয়ে ওঠে এই বন্ধুত্বের গান।

১৩.০৩.২০০০

কলমের উত্তরাধিকার / ফজলুল হক তুহিন

কবি কাজী নজরুল ইসলামকে

সময়ের পদ্মা বয়ে যায় মহাকাল বঙ্গোপসাগরে
শতাব্দীর দিন আর রাত্রি অবিরত উত্তাল সমরে।

বিশ শতকী আঁধার
অনিশ্চিত, কে দেবে সাঁতার?
অতঃপর তোমার প্রাণের ঝড়ে
শতাব্দীর সুকঠিন অন্ধকার পালালো কোন্ গহ্বরে?

আমাদের কবি
এশিয়ার কবি
পৃথিবীর কবি তুমি
কেননা তোমার আবেগের বৃষ্টিতে সজীব হয় নির্যাতিত, বন্ধ্যা ভূমি।

আমাদের স্বপ্নের সন্তান
আমাদের আত্মার বাদক হে কবি পুরুষ,
শত বছরের রক্ত দীপ্ত হয়, শুদ্ধ হয় তোমার শাশ্বত গান
যখনই ওঠে বেজে।
কাপুরুষ আর নপুংশক যৌবন সমুদ্রে ফিরে আসে
তোমার অক্ষয় প্রাণ ঘষেমেজে।
আর হে প্রেমিক কবি রেখে গেলে কী ব্যথার আরণ্যক
যন্ত্রণার লতাগুল্ম আর বিচ্ছেদের ঝরাপাতা দেখে
ভিজে যায় আমাদের চোখ।

মূলত তোমার জন্ম আমাদের প্রার্থনার কাঙ্ক্ষিত স্মারক
আর তুমি তো একাই আমাদের দুঃসময়ের হন্তারক
আমাদের জঙধরা বিবেকের আলোকিত উদ্বোধক।

এখন তো একুশ শতকী অন্ধকার
কেউ কী আছে প্রস্তুত এখানে করবে হুঁশিয়ার?
তবে আমাদের নির্মাণ-সংহার হোক না তোমার কলমের উত্তরাধিকার।

০৪.০৬.২০০২

মধ্য রাতের কবিতা / ফজলুল হক তুহিন

জনারণ্য কোথায় হারিয়ে গেলো এই রাজপথে?
মৃতের মতন পড়ে আছে একা নৈশব্দের রাতে-
যন্ত্র দানবেরা ক্লান্ত হয়ে ফিরছে ঘুমের জগতে
ল্যাম্পপোস্ট শুধু এক পায়ে খাঁড়া, আলোর আঘাতে
অন্ধকারের পালোক উড়ে যাচ্ছে গাছের গভীরে।
নাইট গার্ডের বাঁশি বেজে যায় রাত্রির যৌবনে
পুরুষেরা লোকালয়ে মেতে ওঠে নারীর শরীরে।
হেঁটে চলি বেকার যুবক ফুটপাতে আনমনে।

তালাবদ্ধ দোকানের সিঁড়িতে পাগল জ্বালে বিড়ি
নক্ষত্র চাঁদ ও জোনাকীর আলো হাসে তার হাতে।
বাদুড়ের চিৎকারে, ঝিঁঝির গানে কামনার গিরি
চরের মতন ক্রমাগত জেগে ওঠে চেতনাতে।
দৃষ্টির ফোকাসে ভাসে মানবীর ছায়ার নিঃশ্বাস
পাশ ফিরে চলি, সচকিত হয় আমার বিশ্বাস।

২০.০৯.১৯৯৯

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: