ক.
কী এক খোয়াবে পোয়াতী মেঘের মতো কেঁদে ফ্যালে বেহুলা
সোয়ামি যে ঘরে মেখে দেবে তাকে প্রেমের প্রথম পরাগ
সেখানেই তার প্রাণিত স্বপন হয়ে যাবে নীল বিলাপ-
সে কথা কী হয় বিশ্বাস? তবু সাহসী বেহুলা।
অতঃপর এলো সেই কাল রাত! নাগিনীর বিষে আসমানে
জমে বিষমেঘ। জমিনে ঘাসেরা সবুজ হারায়। হাওয়ায়
হাওয়ায় রটে অলুক্ষণে কী এক পক্ষীর কাঁপা সুর।
নিখুঁত বাসরে আহা, বেহুলার হৃদয়পুর কী সুমধুর!
লক্ষিন্দর মনে সে তো এক প্রেমের স্বচ্ছ করতোয়া
ইচ্ছের কূলে বেহুলা হোক না আবগাহনের মহিমা ।
এই পবিত্র রাতের জোয়ারে হৃদয়ে ফুটুক পূর্ণিমা
জোছ্না অথই ধুয়ে ধুয়ে নিয়ে যাক পৃথিবীর কালিমা।
কালিমা কী যায় এই গ্রহ থেকে কোনদিন কোন সময়?
বেহুলার তাই আয়োজন রাত হয় না, হলো না সকাল।
নাগিনীর নীল দংশনে পুড়ে খাক হলো এই হৃদয়!
ভেসে যায় কেঁদে যায় চিরদিন বেহুলা ভাগ্য ত্রিকাল।
খ.
কেউ কী ভেবেছে সখিনার মন মরুভূমি হবে এই শুভক্ষণে?
এতদিন দেখা স্বপ্নবাসর আজকে কী হবে তৃষ্ণার জল?
সখিনা তবুও দিয়েছে বিদায় কাসেম ফিরবে এমন আশা-ভরসায়
চোখ কী শাসন মানে এই দিনে? চিরবিদায়ের সঙ্গীত মনে।
ঘোড়া পিঠে বীর সওয়ার হলো, সখিনার চোখে জলভরা মেঘ
মরুভূমি ভিজে সে মেঘ আবেগে- কান্নার ধ্বনি হারায় ফোরাতে।
কাসেমের হাতে তলোয়ার জ্বলে- এজিদ সৈন্য মরে সে আঘাতে
অতঃপর বীর ফিরে আসে শত তীর বুকে নিয়ে সখিনা হৃদয়ে।
যে হাত মেহেদি পারেনি রাঙাতে, সে হাত রক্তে হলো রাঙা আজ
সূর্যের শেষ রঙে মিলেমিশে একাকার বধু সখিনার সাজ।
হৃদয় গহীনে সাইমুম সব ওলোট পালোট করে দেয় নিমেষেই
আলোকিত এই স্বপ্নদিনের মৃত্যু , তা-ও কী নিয়তি ঘোষণা?
পারে না সখিনা পারে না সইতে, বিষাদের ভার বুকে সে বইতে
শুধু বয়ে যায় সখিনার চোখে ফোরাতের চির বহমান ধারা।
মানুষ রক্তে সে দুঃখে জাগে অসুরের প্রতি লড়ায়ের সাড়া
তবু থামতে না চায় কোনদিন সেই ক্রন্দসী- বিরহ মাতম।
গ.
ও বেহুলা!
ও সখিনা!
চোখ মেলে চাও বাংলার ফসলী প্রান্তরে-
সেই তোমাদের অদৃষ্টের শোক এখনও রোজ বহে নারীর অন্তরে অন্তরে।
৩০.০৮.২০০২
Like this:
Like লোড হচ্ছে...