মৃত্যুর কারণ নিয়ে! / মুসা আল হাফিজ

ঝড়ে উড়ে যাওয়া টিনের মতো নিখোঁজ
প্রশান্তির তালাশে আজ রাতে তুমি অরণ্যের বুকের গাছতলায় চলে গেলে।

সহসা বজ্রপাত হলো এবং হারালাম তোমাকে।
এখন আমার সামনে তুমিলাশ!

তোমার এ মরণ আমাকে মেরে ফেললে দু’টি মৃত্যু ঘটবে।
কিন্তু তোমার মরণ আমাকে জাগিয়ে তুললে তোমার মরণ জেগে উঠবে।

আচ্ছা, কে মারলো তোমাকে,হে আমার হৃদয়!

আমি বজ্রপাতকে প্রশ্ন করেছি।
সবাই বলছে,বাজ না পড়লে সে মরতো না।

বজ্রপাত বলেছে, তাকে মারার জন্যই বজ্রপতন হয়নি!
বজ্রপতনের মধ্যে সে এসে পড়েছিলো!

তাহলে মরণের কারণ অরণ্যে যাওয়া?
কিন্তু অরণ্যে যাওয়ার কারণে যদি মৃত্যু এসেছে বলি, তাহলে
সেই কারণের কী হবে,যে জন্য তুমি অরণ্যে গিয়েছিলে?

তাহলে তোমার মৃত্যুর কারণ হারানো প্রশান্তি!
কিন্তু প্রশান্তির জন্য তুমি অন্যত্র না গিয়ে অরণ্যে কেন গেলে প্রিয়?
তবে কি অগাধ সবুজ আর নির্জনতার জন্য গিয়েছিলে?
তোমার মৃত্যুর কারণ সবুজ আর ধ্যান ?

কিন্তু সবুজ তো সর্বত্রই ছিলো।
ঝোপঝাড়ে, পাখির পালকে, হরিণের বিস্তর ঘাসে!
কেন তুমি শীতল ছায়ার জন্য গাছের নিচে গেলে?
তাহলে তোমার মৃত্যুর কারণ গাছের ছায়া?

আমি যখন গাছের ছায়াকে প্রশ্ন করলাম;
প্রশান্তির সন্ধানে আসা বন্ধুর মরণের কারণ তবে তুমি?

ছায়া বলে, খোঁজে দেখো, কেন তাকে
এতো রাতে বেরুতে হলো প্রশান্তির লাগি!
তাহলে প্রশান্তির অনুপস্থিতিই তোমাকে হত্যা করেছে।

আমি এই অনুপস্থিতির সূত্রে ঘটনাচক্র বিশ্লেষণ করে
পলায়নপর প্রশান্তির উপর মৃত্যুর দায় চাপালাম।

বাতাসে মিশে থাকা প্রশান্তি প্রতিবাদ করলো।

তার দাবি, কাদের জন্য আমি নিখোঁজ হলাম,খোঁজো তাদের।
যারা আমাকে তাড়িয়েছে, তারাই মূলত দায়ী!

কে তাড়ালো প্রশান্তিকে? প্রেম না অপ্রেম?
কে তাড়ালো প্রশান্তিকে? খাদ্য না ক্ষুধা?
কে তাড়ালো প্রশান্তিকে? যুদ্ধ না নিরবতা?

রাজনীতি, খেলাধুলা, বিজ্ঞান, ইকমার্স
জাতিসংঘ, ইইউ, সিএনএন,বিবিসি
বেইজিং, মস্কো, ধর্মালয়, মোসাদ, ক্যাম্ব্রিজসহ
সর্বত্র পাঠিয়ে দিলাম জিজ্ঞাসাপত্র।
কেন নিখোঁজ হলো প্রশান্তি?

পুলিশ, চোর, পতিতা, পুরোহিত,রাষ্ট্রনায়ক
কবি,কৃষক, পাগল, বুদ্ধিজীবিসহ সবাইকে প্রশ্ন করলাম

চতুর্দিক থেকে শত শত ফাইল এসে জমা হচ্ছে।
আকাশে,বাতাসে,জলে,স্থলে মনে,দেহে বিশ্বময় ছড়ানো
অজস্র কারণ চিহ্নিত হচ্ছে।

এমেরু- ওমেরু জোড়ে ছড়িয়ে আছে তোমার মৃত্যুর কারণ।

কোনো কারণের উপরেই সবাই একমত হতে পারছে না।
প্রাচ্যের কারণের সাথে পাশ্চাত্যের বিবাদ।
দেহের কারণের সাথে মনের বিবাদ।
চোরের কারণের সাথে মালিকের বিবাদ।
জনতার কারণের সাথে শাসকের বিবাদ।

এসব বিবাদ নিয়ে জন্ম নিলো
কতো মতবাদ,কতো বিপ্লব,কতো রাজবংশ!
কতো জল্লাদ,কতো চিন্তক,কতো মহাবীর,কতো মুণী-ঋষী!

তোমার মৃত্যুর কারণ নিয়ে পৃথিবীর জলে,স্থলে,ঘরে- বাইরে
তত্ত্বে-কর্মে কী তুমুল তুফান বয়ে চলছে!

কারণে কারণে হচ্ছে যুদ্ধ ও মিত্রতা!

এদিকে সকল কারণের কারণ নিঃশব্দে সবই দেখছে!
কিন্তু আহা,তাকে তো দেখছি না!

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: