বাবা / সাইফ আলি

ভাঙনের মুখে এক সুবিশাল মহিরুহ
শেকড়ে কামড়ে রাখে আমার জগত
কিছুতেই ধসতে দেবে না,
আমি তার নাজুক পৃথিবী
দুলে উঠি সামান্য ঝড়ে,
সেই ঝড় রুখে দিতে ডাল ভাঙে ভাঙুক তবুও
আমার জগত থাক সহি সালামতে!!

সে আমার গ্রিষ্মের ছায়া, শীতের চাদর;
বাদলের বড় কালো ছাতা!
আমি তার আঙুলের জোরে
টলকানো পায়ে ফের হাঁটি,
দৃষ্টিতে খুঁজে পাই জীবনের সহজ সমাধা।

আমি তাকে ভয় করি, তবু তার কাছে
অনায়াসে মেলে ধরি পরাজিত শুন্য নিজেকে,
আমি তার পরাজয় ভেবে
কখনো সে দূরে ঠেলে দেবে;
কি করে তা হয়!?
আমি তার নাজুক পৃথিবী
পুনরায় হাত ধরে দাঁড়াতে শেখায়-
ভুলে যাই,
আবার শেখায়;
আমাকে যে দাঁড়াতেই হবে।
সে আমার খুঁটি হয়ে থাকে
হেরে গেলে লড়তে শেখায়
বার বার
কিছুতেই হারতে দেবে না!

মর্তবা খুঁজি / সাইফ আলি

অতীতকে ভুলে যেতে বর্তমানের মিঠে খাঁস চুমু দরকার ছিলো-
পূনঃরায় মুখোমুখী দাঁড়িয়েছে ভাই আর ভাই,
দূর দেশে বসে আছে কঠিন দাবাড়ু এক ধ্যানে,
সন্দেহ জাগে-
আবেগ উথলে ওঠা ভায়েদের এইসব কুলাবে কি জ্ঞানে!

আমি এক অধম এখানে
কপচিয়ে লেবু-জ্ঞান একা,
তিতা করে ফেললাম বুঝি!!?
কি করবো বলো-
আমি শুধু রাজপথে পুতুলের মতো শত
শহীদের মর্তবা খুঁজি!!

শেয়াল / সাইফ আলি

অবশেষে সকলেই চিনে ফেলে আপোষের পথ
চিনতে পারেনা শুধু কতিপয় গাড়ল বিশেষ,
এইসব গাড়লেরা জীবনের মূল্য বোঝেনা
শুধু বোঝে- দুর্বল নুয়ে পড়া মনোভাব নিয়ে
বাঁচার চাইতে ভালো শহীদী সোপান!!

ক্ষমতার মসনদে বসতে চাওনি তুমি
অথচ চেয়েছো যেনো সব হয় তোমার কথায়!
ময়লা থালায় বেড়ে ভাত খাওয়া বেয়াকুফি তাই
ডাস্টবিনে বসে গেলে অবশেষে মহোদয়! বাহ!!
অথচ থালাটা যদি ধুয়ে নিতে তাকওয়ার জলে!

হয়তো আমার ভুল, ঠিকমতো করিনি খেয়াল-
রাতের আঁধারে যারা বের হয় নিভৃতে
জীবিকার তালাশ লাগায়;
তারা বড় ধূর্ত শেয়াল।

তুমি তার কবিতার মতো / সাইফ আলি

তুমি তার কবিতার মতো
কি নিখুঁত সুন্দরে গড়া!
কি নিখুঁত কালো দুটো চোখে
প্রকৃতিই টেনেছে কাজল!!

চিলের ডানার মতো উড়ন্ত চুলে
বাতাসেরা বিলি কাটে বসে,
পলিজমা শরীরের ভাঁজে
ঝরে পড়ে রোদ্রের ফোটা!

তুমি তার কবিতার মতো
ইন্দ্রিয়ে করেছো প্রবেশ
অনুমতি ছাড়া, তবু হায়!
রোখার সাধ্য আছে কার!?

আমার তখন চারকোল ভালোবাসা / সাইফ আলি

তুমি চেয়েছিলে পেছনের কবিতারা
সামনে আসুক আবার নতুন কোরে,
শ্রাবণের যতো ঝরে পড়া সন্ধ্যারা
আবার আসুক আমাদের হাত ধরে!

কিন্তু এখনো রাতের বাজারে চাঁদ
কেমন মলিন জোছনা ছড়ায় দেখো,
পান্ডুর এই কবিতার খাতাটাতে
শূন্য পাতারা ধুলোয় রয়েছে ভরে!

তুমি চেয়েছিলে একটা রঙিন ছবি
আমার তখন চারকোল ভালোবাসা,
শাদা ক্যানভাসে গোটা গোটা কালো দাগ
রঙিন যা ছিলো পুষে রাখা অন্তরে

কিভাবে দেখাই, উপায় ছিলোনা জানা;
দেখাতে পারিনি তাই-
তুমি চেয়েছিলে পেছনের কবিতারা!
শ্রাবণের যতো ঝরে পড়া সন্ধ্যারা!!

যদি বৃষ্টি নামতো / সাইফ আলি

আমি শোকাহত হবো এটা কোনো বড় বিষয় নয়
তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে একটু আগেই শোকার্ত মেঘমালা থেকে
অবিরাম ঝরে চলেছে সুখাশ্রু বৃষ্টির ফোটা।
তোমরা তো জানোই
কবির হৃদয় আর্দ্র না হলে তার থেকে বৃষ্টি ঝরে না
সৃষ্টি হয়না কবিতার তাল-লয়-ছন্দ কিংবা অন্তমিলের মাধুর্য!

একটু পরেই হয়তো বৃষ্টি থেমে যাবে
সংকীর্ণ এ শহরের দেয়াল আঁকড়ে ধরে
ঝুলে থাকা বটের শরীরে ধুলো হয়ে জমে যাবে সাজানো ব্যথারা
আর কংক্রিট পোড়া গন্ধে আবারো মৌ মৌ করবে শহুরে জীবন!

আহা! আমি শোকাহত হলেই যদি বৃষ্টি নামতো…

দেখতে দেখতে / সাইফ আলি

দেখতে দেখতে দেখতে দেখতে
দু’চোখ গিয়েছে জ্বলে
তবু দেখার হলোনা শেষ!
আমি দেখবো না কিছু আর-
অদৃশ্যে গিয়ে বাধবো এবার কল্পিত সংসার।

আবেগটা ঠিক ওড়ছে না / সাইফ আলি

রাতটা কেমন থমকে আছে
গাছের পাতা নড়ছে না,
হাওয়ার গাড়ি তুলছে ধোঁয়া
আবেগটা ঠিক ওড়ছে না।

আকাশটাকে আগলে রাখে
এমনতর জোছনা কই,
কালো কালো মেঘের বুকে
জমবো ভীষণ! বৃষ্টি নই।

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: