তোমাকে খুশি করতে গিয়ে / সাইফ আলি

তোমাকে খুশি করতে গিয়ে
বাধ্য হলো বোশেখের ঝড়
আকাশ উন্মুক্ত হলো, আরও বেশি উদার হলো মেঘ
তোমাকে খুশি করতে গিয়ে
বেহিসেবী যুবকের মন
শামুকের মতো করে নিজেকে গুটালো
মিতব্যয়ী হলো দুই হাত;
তোমাকে খুশি করতে গিয়ে
যা কিছুই ডান হলো বাম,
সব আঞ্জাম
শেষ করে আজ অবশেষে
সকল খুশিরা গেলো ভেসে!

১৩/০৪/২৩

আচ্ছা তুমি কেমন আছো / সাইফ আলি

তোমার হাতে জমিয়ে রাখা আমার সকল স্মৃতির ধুলো
সরিয়ে ফেলো, এখন আমি একলা একা ভালোই আছি;
তোমার চোখে আমার দেখা কুঁড়িরা কেউ ফুল হলো না,
না হোক তাতে কি যায় আসে আমরা তো সব দুধের মাছি!

আমরা এখন অর্থনীতির কলাম পড়েই সময় কাটায়,
ফালতু আবেগ সেই ছেড়েছি, দেখলে ওসব শরীর টাটায়;
‘আচ্ছা তুমি কেমন আছো?’ ইচ্ছে করেই হয়না বলা,
ভবিষ্যতের দিকেই শুধু চোখ রেখেছি; বাড়িয়ে গলা

স্বার্থকতার সংজ্ঞা খুঁজি, বুঝি বুঝি আর বুঝি না…
যাহোক ওসব ধুলোর মাঝে এক জীবনের সার খুঁজি না।

০৪/০৪/২৩

শূন্যে তুমি কাব্য রচো / সাইফ আলি

শূন্যে তুমি কাব্য রচো, শূন্যে তোমার ঘর
বন্ধু তোমার শূন্যটা না ভীষণ স্বার্থপর
তোমায় গোটা একলা নিলো
আমায় কেবল ধরিয়ে দিলো
সব হারানোর ডর!
বন্ধু তোমার শূন্যটা না ভীষণ স্বার্থপর…

০৩/০৪/২৩

ডাকছো তুমি / সাইফ আলি

এই কি আমার হাতের কামাই? আবদ্ধ ঘর!
এই কি আমার কাব্য কলার আরাধ্য স্বর?
এই আঁধারের ভিটেয় অতল ঘুমের ব্যরাম
ভুলিয়ে দিতে চাচ্ছে সকল আবদ্ধ খাম।
খুলবো কিনা ভাবছি বসে ভাবছি বসে
মিলছে না তো সকল হিসেব অঙ্ক কষে!
রক্ত মাখা একটা চোখের নিরব বয়ান
সূত্রে ফেলে যায় কি বাঁধা? নেই সমাধান!
যোগ বিয়োগের কিতাব পড়ে লাভ হলো কি
সবাই বলে তোমাই ছাড়া ভালোই আছি!
হয়তো আছি শিকল পরে সকল পায়ে,
কয়টা বুলেট বিঁধলো সেদিন তোমার গায়ে?
গুণতে গিয়ে একটা দুটো কণ্ঠ ধরে
বুকের ভেতর আগুন পাখি ঘুমিয়ে পড়ে!
সেই যে ভীষণ বিষাক্ত নীল ঘুমের বড়ি
ঘুম ভাঙে যেই আাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি!
ঘুমিয়ে পড়ি ঘুম ভেঙে যায়, ডাকছো তুমি!?
পায়ের নিচে রক্তে কেনা তোমার ভূমি!

০৩/০৪/২৩

আমি এক ছোটো কবি / সাইফ আলি

কবিতার পাখি তুমি কি আমার হৃদয়ের গতি বোঝো,
তুমি কি আমার চোখের চাহনি বোঝো,
কি বোঝাই আমি ইশারায় ইঙ্গিতে?
হয়তো বোঝো না, বুঝলে কি আর খাঁচা ভাবো? থাকো দূরে?
তুমি গান গাও, আমি হারাই তোমার সুরে।

কবিতার পাখি, আমি এক ছোটো কবি,
শব্দের সাথে বোঝাপড়া বেশ ভালো;
তুমি যদি চাও তোমার জন্য কবিতা গাঁথতে রাজি
তোমার জন্য সহস্রবার নিজেকে ভাঙতে রাজি।

১২/০১/২৩

নালায়েক / সাইফ আলি

ডুবি ডুবি করে নৌকা ভিড়লো পাড়ে
লাফিয়ে লাফিয়ে যাত্রীরা হাফ ছাড়ে-
:কোনোমতে বাঁচা বুঝেছেন চাচা
শতবার নাকে খত,
ফের যদি উঠি
নালায়েক বলে ডাকবেন আলবৎ।

:কি বলো ভাতিজা ওপাড়ে ফেরার
একটি মাত্র নাও!
নাম বদলালে বদলাও তবে এটাতেই ফিরে যাও।

কপালের রেখা বেড়ে যায় ভাতিজার,
এই নাও ছাড়া বিকল্প নেই আর!?

১৭/১১/২২

উড়ুন জনাব উড়ুন / সাইফ আলি

উড়ুন জনাব উড়ুন
ফুলিয়ে ছাতি
হচ্ছেন যে আত্মঘাতী
বুঝছেন তো? তা বেশ ভালো,
নিজের হাতেই নিজের কবর খুঁড়ুন।
উড়ুন জনাব উড়ুন…

বয়ান দেওয়া একটুখানি কমান
আয়নাতে মুখ দেখুন,
কি মনে হয়? ঠিক আছে সব?
বলছেন যা খোদার নামে
করছেন না ডাইনে বামে?
এক্কেবারে সোজা?
খুব সাবধান, ভীষণ ভারি বোঝা!

যুগ জামানা পাল্টে গেছে
জবানটাকে লাগাম দেওয়া খুব প্রয়োজন
তোষামোদের পিচ্ছিলতায় হোঁচট খাবেন যখন তখন,
ফেরার সময় পাবেন না;
অহংকারে অন্ধ হয়ে যাবেন না।

১৭/১১/২২

সংলাপ / সাইফ আলি

: কপালডা বড়ো হলি থাল ভরা ইলিশের পেটি নিয়ে বমু
তুই আর আমি পদ্মার চরে বসে পিরিতির মেলা কতা কমু;
পরি, তোরে আমি মিছে আশা দিয়ে
ভুলায়া ভালায়া রাখি
তুই ক্যান অবুঝের মতো সব কিছু বুঝে
চুপ করে থাকিসরে বল-

: অতো কথা জেনে তোর কাম কি?
আর কিছু দিমু? না লাগলি রাখা আছে জল,
হাত ধুয়ে ওঠ, তাড়াতাড়ি বিছানায় চল।

: আমারু শরীর আজ ম্যাজম্যাজে কিরকম জানি,
সারাদিন খুব হয়রানি গিয়েছে উপর দিয়ে;
মাজেমদ্যি ভাবি
তোর যতো ছোটো মোটো দাবি
কোনোদিন বড় হয়ে গেলি?

: আনে দিয়ে একথাল শিউলি আর বেলি
কবি যে আমার কিছু নেই, আমি কিছু পারবোনা দিতি।
আমি পরি কোনোদিন তোর কাছে বল
পয়সায় বেচিছি পিরিতি?

১৩/১১/২২

যদি আর ভালো নাই লাগে? / সাইফ আলি

কতোদূরে চোখ গেলে আগেভাগে দেখা যায় সব
বুঝে নেয়া যায় কথা মুখ থেকে বেরোনোর আগে
কতোকাছে গেলে তার করা যায় সত্য অনুভব
কতো ভালোবাসলে মন রাঙা হয় তার অনুরাগে?

ততোদূরে চোখ দিতে ভয় হয়, হারানোর ভয়
না বোঝার ভান করে বার বার শুনি তার কথা;
দূরত্ব রেখে রেখে কাছে যায়, তার পরিচয়
হয়ে গেলে পুরোপুরি জানা
যদি আর ভালো নাই লাগে?

২৭/০৯/২২

কবিতার জন্য / সাইফ আলি

কবিতার জন্য কিছুই করিনি আমি,
নিজের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিইনি কখনো,
দিইনি কারণ বাল্যকালে লেখা কবিতাগুলো অপরিপক্ক হওয়াই ওগুলো কাউকে দেখাই না, পাঠ করে শুনাই না
অথচ আমার প্রথম সন্তানের প্রতি কি মায়া আমার!
কোনো বাবা তার দুর্বল সন্তানকে অস্বীকার করতে পারে!
কবিতা আমি ভালোবাসি, ঠিক যতটুকু ভালোবাসলে অন্য কারো প্রতি অবিচার করা লাগে না। যেহেতু ভালোবাসা মাপামাপি করা যায় না তাই মাঝেমধ্যে একটু বেশিও হয়ে যায়। একজন কবির জন্য এতটুকু ছাড় সমাজ স্বীকৃত।
তবে কবিতা আমার জন্য অনেক কিছুই করে। আমাকে আনন্দ দেয়, পরিচিতি দেয়; মাঝে মাঝে সম্মানও দেয়। বড় কবিদের নাকি সম্মনীও দেয়।
যাই হোক, কবিতাকে সময় আর ভালোবাসা ছাড়া কিছুই দিইনি আমি।

২৭/০৯/২২

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: