হুদহুদ পাখির কৈফিয়ত / আল মাহমুদ

ও রাজা সোলেমান,
কেন আমার একটু এদিক ওদিক উড়ে বেড়ানোতে আপনি এমন তিতিবিরক্ত?
আল্লাহ আপনাকে মানুষের, জিন ও হাওয়ানদের রাজা বানিয়েছেন।
ও বাতাসকে হুকুম করার মালিক,
সহস্র প্রাণের উপর দয়া দেখানোর জন্যই তো নবী-রসুলগণ আসেন
পৃথিবীকে নরম করতে।
আপনি পিঁপড়ে থেকে শুরু করে আমার মত হুদহুদ পাখিরও ভাষা বোঝেন।
বোঝেন প্রতিটি অশ্রুসিক্ত নয়নের অনুনয়। আর পাখির স্বভাবই
যেহেতেু অনুসন্ধিৎসা এবং কবির মতো ডানা মেলে ভেসে বেড়ানো
তার বেয়াদপীর প্রতি কে আর অতো খেয়াল রাখে?
উড়াল ও আড়ালে থাকাই পাখিদের জন্য কল্যাণকর।
ও নবী সোলায়মান আলায়হিসসালাম,
আমার ক্ষণ-অনুপস্থিতি ক্ষমার্হ, কারণ আমি আপনার বিস্ময়বোধকে
উদ্রিক্ত করার মশাল নিয়ে এসেছি, এনেছি এক অদ্ভুত দেশের মানচিত্র।

ও পিঁপড়েদের কথা অনুধাবনকারী,
আমি কি আমার পালকের চেয়েও অধিক আনন্দ সংবাদ
এনে রাজকীয় পুলকের উৎসমুখ খুলে দিইনি?
আপনার আজ্ঞায় বাতাস আমাকে ভাসিয়ে নেয় দূরে দূরান্তরে
জিনেরা অজানা দেশের পাকা মেওয়া এনে রাখে আমার ক্ষুধাতূ চঞ্চুর সামনে।
আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আপনার সোহবতে থেকে আমি
দুনিয়ার সাদাকালো হলুদ সকল আদম জাতির ভাষা এখন বুঝতে পারি।
আহা মানুষের ভাষা যদি আমার জন্য দুর্বোধ্য হতো কতই না ভাল ছিল।

হে নবীমহামতি,
আমার বাচালতা মার্জনা করুন। মানুষ যা কিছু বলে এর অর্ধেকই
মিথ্যে প্রতিশ্রুতি যা কক্ষনোও রক্ষিত হয় না।
আর মানুষের মেয়েরা তারা যত সুন্দরীই হোক তারা
মিথ্যার ব্যাপারে একেবারে শেবার সর্বোচ্চ মন্দিরতুল্য। সোনাদানায় সাজানো।
আমার ক্ষণ-অনুপস্থিতি আনার তীক্ষ্ন দৃষ্টির রাজকীয় মর্যাদাকে উদ্বিগ্ন না করুক।
কারণ আমি নিয়ে এসেছি পুর্বদিগন্ত থেকে এক নারীশাসিত উর্বর ভূমির খবর। যে দেশ
আল্লাহর ব্যাপারে নিরাসক্ত কিন্তু উপাসনা ধরেছে উদিত সূর্য ও পৌত্তলিকতার।
ও সহস্র রথের মালিক মহারথী রাজা সোলেমান,
আমি নিয়ে এসেছি সেই পতাকা ও পুজোর রাজ্য
শেবার সেই দিগভ্রান্ত রাজ্ঞীর খবর। যিনি কোটি মানুষের আনুগত্যের
বিনিময়ে চাপিয়ে দিয়েছেন এক স্বৈর সিংহাসন, দুর্ভার, পাষাণ।

আপনি তো জানেন রাজা
রাজ্ঞীর শাসন মানেই তো দেশ শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া। নদী শূন্য
খরা, কুয়াশা ও মুকুল ঝরে যাওয়া।
পুরুষের অনুপস্থিতি হলো স্বাধীনতা ও সীমান্ত সংকোচিত হয়ে আসার আলামত।

আক্ষেপ সেই দেশের জন্য
যেখানে সহস্র পুরুষের বাহু পেশীবহুল কিন্তু তীরন্দাজ হয়ে আছে নারী।
রাজপুরুষ, জ্ঞানী অধ্যাপক, কবি-বিদূষক এবং সেনাপতিগণ নির্বাক
মাথা নত করে থাকে রাজপুরুষেরা এক অহংকারী,নির্বোধ রাণীর স্বেচ্ছানর্তন ও
হিংস্র খেয়ালের কাছে।
কে না জানে রাণীদের ঠোঁটে ও অন্তর্বাসে কোনো টেরচা সেলাই থাকে না।
মাতৃরূপ ত্যাগ করলে নারীর চেহারায় আর নেকড়েনীর মুখের পার্থক্য ঘুচে যায়।
পৃথিবীর মৃত্তিকায় শান্তির প্রতিশ্রুতি দানকারী
ও পয়গম্বর রাজা সোলেমান,
কয়েক লহমার জন্য আমার অনুপস্থিতি ক্ষমা করুন। আর পূর্বদেশের
সেই নারীরাজ্যের মহারাজ্ঞীর প্রতি এক হেদায়েতের বার্তা লিখে
আমার গলায় ঝুলিয়ে দিন।
আমি তা পৌঁছে দিতে
আমার পাখা মেলে আছি।

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: