লাখ টাকা জলে যায় / সাইফ আলি

লাখ টাকা জলে যায়, জল কম্বলে যায়
কনকনে শীতে ভেজা কম্বল হাতড়াই;
সুখ সুখ সুখ চাই, সুখপাখি উড়ে যায়,
আজ আছি কাল নাই এইতো জীবন
এই জীবনের জন্যই এতো আয়োজন!

হোক দুনিয়া দু’দিন তবু আসবে সুদিন
এই বিশ্বাস বুকে নিয়ে আরো কিছু দিন
চাই গাইতে এ গান, এই দীপ্ত শ্লোগান
মুখে বুক টানটান করে সামনে দাঁড়াই,
আসে আসুক বুলেট তাকে স্বাগত জানাই
চাই শহীদি মরণ।

ইনসাফ ইনসাফ ইনসাফ চাই
ভাই পাই বা না পাই
এই চাওয়াটাই দায়,
হক কথা বলাটা হক পথে চলাটা
ছক করা জীবনের লক করা গলাটা
একটু বাড়িয়ে যদি স্বপ্নের দলাটা
মুখে পুরে ঢক করে নাই গিললাম
বলবো কি করে- আমি মিছিলে ছিলাম।
এই মিছিলের শেষ নেই
দেশ বা বিদেশ নেই
পৃথিবীর সবখানে আদি থেকে অন্ত
জুলুমের ইতি টেনে আনতে বসন্ত
এ মিছিল চলছে
তুমিও শ্লোগান দাও চুপ করে থেকো না
সত্যের পক্ষে কথা বলা শেখোনা
তা না হলে তুমিও জালিমের পক্ষে
ডাকছো নাক ডাকো বসে এসি কক্ষে
লাগলে আগুন যদি বয়ে যায় খুন
কৌশলে বেঁচে যাবে প্ল্যান সুনিপুণ!
কতোদিন বাঁচবে? আর কতক্ষণ?
আজ আছি কাল নাই এইতো জীবন।

রুটি রুজি খুঁজতেই
বুঝতে না বুঝতেই জীবনটা পার!
বলি, মুখ কেনো ভার এই মিথ্যে মায়ার
পিছে পিছে সারাদিন ঘুরে বাড়ালে যে ঋণ
সেই ঋণ শোধরাও তুমি শুনতে কি পাও,
সাক্ষীর ভূমিকায় প্রিয় হাতটাও!
এই অর্থের ভার যেনো তোমাকে আবার
সাধ্যের চেয়ে বেশি বইতে না হয়,
সম্পদ সঞ্চয় করে জীবনটা ক্ষয়
যদি মৃত্যুর পরে দোজখের খড়ি হয়
তবে করো তুমি ভয়।
এই জয় পরাজয়, এই নাম পরিচয়
সবই সময়ের প্রয়োজন ছাড়া কিছু নয়।

এই নদীর দুকূল জুড়ে ভুল শুধু ভুল
যদি বৃক্ষের ভারে ছিড়ে যায় তার মূল
তবে মিথ্যে এ বাড় তার কেনো দরকার,
এই ব্যাংক বীমা আদালত কেনো দরকার
এই রাষ্ট্র এ সরকার কেনো দরকার?
যদি সেবাটাই মূল তবে হোক ভন্ডুল
সব জালিমের চাল
ফের আসুক সকাল,
সৎ লোক ফিরে পাক সঠিক আসন।

০৯/০৯/২২

মন চাই রঙ করি জঙ ধরা মনটা / সাইফ আলি

মন চাই রঙ করি জঙ ধরা মনটা
পাছে লোকে কিছু বলে এই আবরণটা
তুলে ফেলি, খুলে ফেলি সবকটা জানালা
পারি না পারি না ভাই, পারি আমি কোনটা?

লুট হই স্যুট হই তবু দিন যাচ্ছে
কাটা কবুতর যেনো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে
নেউলের থাবা বাবা বাঁচার উপায় কি
জানি না, জানি শুধু ফেসবুক, লাইকি!
কোট প্যান্ট টাই কি
কোনো দুলাভাই কি
সমাধান দিচ্ছে?
নাকি কেড়ে নিচ্ছে সখের সবুজটা
একান্ত বুঝটা
জীবন চলার পথে একলা অবুঝটা
বলতেও পারছেনা তার প্রয়োজনটা।

ছোট্ট শহরটা চারিদিকে বাড়ছে
বাড়ছে দেদারসে
যানযট, উদ্ভট লোকেদের সংখ্যা
বাড়ছে আশংকা- হচ্ছি শ্রীলংকা?
ধুর মিঞা বাজে কথা, কান দেয়া যাবে না;
চুপচাপ দেখ্ বেটা, জান দেয়া যাবে না।
আমি মরি চিন্তায়; সুখ পাখি ছিনতাই
হয়ে গেছে, সারাদিন মুখটা মলিন তাই।
সুখ পাখি মর্ত্যে
আসে ফিরে অর্থে
এই বিশ্বাস নিয়ে পড়লাম ঝাপিয়ে
সারাদিন দাপিয়ে
গোটা দেশ কাঁপিয়ে
তিন অংকে তুষ্ট নই তবু দুষ্ট চক্রকে গালি দিয়ে
কোনোমতে বেঁচে ফিরি নানা জোড়াতালি দিয়ে।
এইতো জীবনটা কেটে কুটে যাচ্ছে
কাটা কবুতর যেনো শুধু তড়পাচ্ছে
তবু মন গাচ্ছে বিজয়ের গান
শুনতে তো ভালো লাগে রঙিন শ্লোগান
তাই খুলতেও পারছি না এই আভরণটা।

কষ্টের মাঝে তাই হাসি দাঁত কেলিয়ে
দেয় দিক রাজা লোক লষ্কর লেলিয়ে
এইবার রঙ করে জঙ ধরা মনটা
বলবই মুখ ফুটে আমি চাই কোনটা।

০৭/০৯/২২

আজ জোছনার ঢল নেমেছে / সাইফ আলি

আজ জোছনার ঢল নেমেছে
বাতাসে ফুলের সুরভী
আহা মনটা কোথায় হারালো
শুনতে যে কার পুরবী!!

এই এলোমেলো গল্পের রাত
ধুয়ে মুছে দিচ্ছে আঘাত
তুমি পর্দা সরিয়ে দেখো
থেমে গেছে সব সংঘাত।
কেনো আড়ালে রয়েছো কবি…

কেনো উপমার দুর্বলতায়
ভুগবে তোমার কবিতা
যদি মনের জানালা খুলে দাও
বলবে আকাশও কথা
হাজারো বিমূর্ত ছবি।

এই জনমানবের নগরে
শিল্পের জলসাঘরে
মুখপোড়া অসুখী মানুষ!
তুমি একবার পেছনে ফিরে
যদি খুঁজতে তোমাকে কবি…

০৬/০৯/২২

যে পাখি সন্ধ্যাবেলা ঘর ছেড়েছে / সাইফ আলি

যে পাখি সন্ধ্যাবেলা ঘর ছেড়েছে
সে পাখি কোথায় গেছে?
তাকে আর ফিরে পাওয়ার
আশা করিসনে রে মন
গিয়েছে ফুরিয়ে পাখির প্রয়োজন।।

পাখিটা সকালবেলা ফুলবাগানে
গেয়েছে ডালে ডালে, তার সে গানে
ভরেছে হৃদয় কি তোর
বুকের ভিতর সে যন্ত্রণা?
ওসবে দিসনেরে কান, কুমন্ত্রণা;
তাকে তুই ভুলে যাওয়ার কর আয়োজন।

পাখিটা ভরদুপুরে মেললো ডানা
কতদূর তার সীমানা, কার তা জানা?
যেনো সে আকাশ ছোঁবে,
ফুল ফুটোবে মেঘের দেশে!
শুনে তার স্বপ্ন সবাই উড়োয় হেসে।
তাকে তুই অমন ভালোবাসিসনে শোন…

বিকেলে মলিন পাখি ফিরলো ঘরে
পুড়িয়ে পালক পাখা ভীষণ জ্বরে
তবু তুই পাখির প্রেমে মজলি রে মন!

০৫/০৯/২২

বদলে তো যাচ্ছে দিন / সাইফ আলি

বদলে তো যাচ্ছে দিন
বদলে তো যাচ্ছে রাত
প্রেম ছিলো অন্তহীন
খুব ছোটো আজ হঠাৎ
ক্ষণিকের মায়া তার নাম।

কি সুখে হাসছো চাঁদ
কলঙ্কের অপবাদ
কপালে মেখে অমন;
মেঘের ঐ ওড়না
জড়িয়ে আঁধারে কেনো
একাকী করোনা ভ্রমণ!
বহুদিন হয়েছে দেখিনি তোমাকে তাই
তোমাকে দেখতে এলাম।

বুঝিনি হাওয়াকে, তার আসা যাওয়াকে
বদ্ধ এ বুকের ভেতর;
খুঁজিনি যা খোঁজার, কেবল মাথা গোঁজার
ঠাঁই খুঁজে ভেঙেছি আসর!
পেয়েছি তুমিহীন একাকী প্রতিদিন
চিঠি ছাড়া নীল খাম…

০৫/০৯/২২

চাঁদ ঘিরে বাঁচা এ মেঘের মুলুকে / সাইফ আলি

চাঁদ ঘিরে বাঁচা এ মেঘের মুলুকে
তুমি কে?
বিগলিত জোছনার সংজ্ঞা খোঁজো
তুমি কি এ আঁধারের মর্ম বোঝো?

সাঁতরাও ডুব সাঁতারু
গভীর থেকে আরো গভীর নীলে
সাঁতরাও তারাদের এই মিছিলে
ডুব দাও ডুব সাঁতারু
গভীর থেকে আরো গভীর প্রেমে
বেঁধো না কেবল শুধু চোখের ফ্রেমে।
খুলে দাও মুঠো খুলে দাও
হৃদয় দিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরো।

ঘুম ঘুম সারা রাত্রি
তবু নির্ঘুম চোখে ধাত্রী
তুমি কার ব্যথা উপশম করবে বলো
বহু জন্মের চিৎকার আসছে ভেসে
কোন আবেশে তুমি মগ্ন প্রিয়?

৩১/০৮/২২

খোলা জানালায় তুমি কি মায়ায় / সাইফ আলি

খোলা জানালায় তুমি কি মায়ায় বসে থাকো
চোখের ইশারায় উড়ো মেঘেদের কেনো ডাকো
আমি কালো মেঘ বর্ষা আবেগ ভরে বুকে
যদি দাঁড়িয়ে দু’হাত বাড়িয়ে যাই সম্মুখে।।

তোমার ভেজা চোখ, এলোমেলো চুল বলে কথা;
তোমার অভিমান, শত অভিযোগ, নিরবতা
ভাবায় আমায়।

তোমার চোখের ঐ অসীম শূন্যতার বলো কারণ
কোন দরজার ভাঙলে আগল হয় নিবারণ;
যদি ঝড় হই, আগল ভেঙে তোমাকে চাই?

২৯/০৮/২২

প্রিয়তমা / সাইফ আলি

কতো মূল্যে তুমি খুললে তোমার মনের দরজাটা
আমি গরীব কৃষক চাষবাস করে জোটাই খরচাটা
আমার সামর্থ্য নেই তদবির করি, লেখাপড়াটাও অল্প
তাই মুখে পুরে আজও জাবর কাটছি তোমার শেখানো গল্প
প্রিয়তমা, বহুদিন হোলো খবর তো নিলে না
আসলে তুমি তো কোনোদিনই এই গরীবের ছিলে না।

শিল্পপতির কদর বুঝলে আমলার বুকে শান্তি খুঁজলে
তন্ত্রে মন্ত্রে কে তোমার চেয়ে ভালো?
প্রিয়তমা, তুমি আঁচলে তোমার বুদ্ধিজীবীও পালো!
আগে এমন তো ছিলে না,
নাকি আমিই দেখেছি ভুল,
তুমি ফেস্টুন হাতে স্লোগান তুলতে ভুখার মিছিলে না?

তুমি চায়ের চুমুকে সতেজতা পাও, তৃষ্ণা মিটাও রক্তে
যেভাবেই হোক অধিকার চাও পরিচালকের তখতে;
হাজার পুরুষ তোমার জন্য লড়াই করেই ধন্য
আমি কাপুরুষ অজপাড়াগাঁর কৃষক, খুব নগন্য!
প্রিয়তমা,
আসলে তুমি তো কোনোদিনই এই গরীবের ছিলে না।

প্রিয়তমা, তুমি পুঁজিপতিদের বিবি হতে চাও, এতে কোনো আফসোস নেই
কেনো বার বার বলো, গরীব তাতে কি! স্বপ্ন দেখতে দোষ নেই!!?
তুমি স্বপ্ন দেখিয়ে ঘুমাতে পাঠাও শস্যের গোলা লুটতে;
ইশ, কোনোদিন যদি সত্যিকারের ফুল হয়ে তুমি ফুটতে!
প্রিয়তমা…

২৭/০৮/২২

তাইরে নাইরে নাইরে / সাইফ আলি

তাইরে নাইরে নাইরে তাইরে নাইরে নাই
তাইরে নাইরে নাইরে নাইরে নাইরে নাই।

ডালপুরিতে ডাল নাই
মাথার উপর চাল নাই
আদা পেঁয়াজ আলু নাই
নাইরে মামা খালু নাই
এ চাকা ঘুরবে কেমনে
ও ভাইরে,
এ চাকা ঘুরাই কেমনে?

ঝাল মরিচে ঝাল নাই
কুমির আছে খাল নাই
রাইতে চোখে ঘুম নাই
প্রিয়তমার চুম নাই
যা আছে হাট্টিমাটিম টিম
ও ভাইরে,
দু’চোখে আজগুবি সব ড্রিম।

পকেট আছে টাকা নাই
এমন গড়ির চাকা নাই
বেকার লোকের বেল নাই
চোর ডাকাতের জেল নাই।
ট্রেন চলে ঝক ঝকাঝক ঝক
ও ভাইরে
কপালডা ফক ফকা ফক ফক।

ঘুড্ডি আছে নাটাই নাই
মগজটা খুব টাটায় ভাই
মগজ যারা দেয় ধোলাই
তারাই বসে হাটখোলাই।
সুদিনের স্লোগান কারা দেয়
ও ভাইরে,
মাদকের যোগান কারা দেয়?

হাঁড়ির পাছায় কালি নাই
বাগান আছে মালি নাই
নেতার কথায় তালি নাই
ব্যলোট তবু খালি নাই!
জীবনে ক্যামনে আনি জোশ
ও ভাইরে,
যা বলি সবাই ধরে দোষ।

২৪/০৮/২২

খুব সকালে / সাইফ আলি

খুব সকালে…
ঘর হতে বেরিয়ে আমি বাগানে গিয়ে
যেই দাঁড়ালাম শুনতে পেলাম
বন্ধুরে তোর শিস,
সেই শিসে কি বিষ!
বুকের বা’পাশ ধড়ফড় করে
চাবায় অহর্নিশ।।

দুপুর বেলা রোদের খেলা
মন জারুলের বন,
বিকেল বেলা মিষ্টি সোনা
রোদ মাখা উঠোন।।
সে মন বিষে নীল হয়েছে
তোর শিসে কি বিষ!
বুকের বা’পাশ ধড়ফড় করে
চাবায় অহর্নিশ।

গোধূলিতে রঙ তুলিতে
রঙ ভরেছে কে,
বন্ধুরে তুই সন্ধ্যা হয়ে
সবটা মুছে দে।।
তা না করে ঝাউবনে ক্যান
জোনাক জ্বালাচ্ছিস!
বুকের বা’পাশ ধড়ফড় করে
চাবায় অহর্নিশ।

ঘুম আসে না, রাত যে গভীর,
পাশ ফিরি বার বার,
জানলা গলে জোছনা জানায়
চাঁদের সমাচার।।
বিরক্তিতে খেঁকিয়ে উঠি-
খবর এনেছিস?
বন্ধুর খবর দিতে যেনো
না হয় উনিশ বিশ।

২৪/০৮/২২

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑

%d bloggers like this: